Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২৭ জুলাই, ২০২২

শিক্ষায় ফাঁকিই একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিতে পারে

 ‌

Cheating-in-education

শিক্ষায় ফাঁকিই একটা জাতিকে ধ্বংস করে দিতেপারে

অজয় মজুমদার

ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ আফ্রিকার প্রবেশদ্বারে লেখা রয়েছে, কোনও জাতিকে ধ্বংস করার জন্য পারমাণবিক হামলা কিম্বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের দরকার নেই। বরং একটা জাতির শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রতারণার সুযোগ দিলেই হবে৷ কারণ, এভাবে তৈরি হওয়া ডাক্তারদের হাতে রোগীর মৃত্যু হবে৷ ইঞ্জিনিয়ার দ্বারা নির্মিত বাড়ি, সেতু, ফ্লাইওভার ধ্বংস হবে এবং অর্থনীতিবিদের দ্বারা দেশের আর্থিক খাত দেউলিয়া হবে৷ বিচারকদের হাতে বিচার ব্যবস্থার কবর খচিত হবে৷ সুতরাং, শিক্ষা ব্যবস্থা ভেঙে পড়া মানে হল একটি জাতির অবলুপ্তি। 

পশ্চিমবঙ্গের সেই ধ্বংসলীলা শুরু হয়েছে। যেখানে ঘুষের বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দিয়ে দেওয়া হয় এবং যোগ্যদের রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হয়। বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের হাতে মার খেতে হয় চাকরিপ্রার্থীদের। এই দেশে এবং রাজ্যে শিক্ষা যে ধ্বংসের পথে সে তো আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বহুদিন আগেই শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যকে বেসরকারীকরণের কাজে হাত দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। 

রাতারাতি বহু বিএড কলেজ, ল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, মেডিকেল কলেজ গজিয়ে ওঠার পাশাপাশি যেখানে সেখানে প্যারামেডিকেল কোর্স নার্সিং কলেজ, ফিজিওথেরাপী ও নানাপ্রকার প্যারা মেডিকেল শিক্ষার ব্যবস্থা চালু হয়েছে৷ সেখানকার ইনফ্রাস্ট্রাকচার আদৌ আছে কিনা, তা দেখার লোক থাকলেও পয়সার বিনিম‌য়ে সব ঠিকঠাক হয়ে যায়। সুতরাং শিক্ষায় বড়সড় ফাঁকি থেকে যাচ্ছে। 

আর সেই কারণেই বহু প্রযুক্তিবিদ পোস্ট অফিসের পিয়নের কাজ কর জীবন কাটাচ্ছেন, আবার বেকারত্বের জ্বালায় নিজেকে ধ্বংস করছেন। গত তিন বছরে করোনার সময়কালে অনলাইনে পরীক্ষা হল। বাড়ি বসে পরীক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা৷ সেখানে কৌশল করে টোকাটুকিও নয়, তারও ওপরে৷ প্রোজেক্ট ও ওরালের নম্বর দেন নন-টিচিং স্টাফেরা৷ এগুলিকে অসৎ উপায় বলা যাবে না। কারণ, এই নিয়ম শিক্ষা বিভাগেরই। খাতা কখনও পরীক্ষক দেখলেন, কখনও দেখলেন অফিসের নন টিচিংরা। ফাস্ট ক্লাসের ছড়াছড়ি। 

বেসরকারি কলেজগুলির মালিকেরা বেশিরভাগই লেখাপড়া না জানা মানুষজন৷ তাদের আসল সময়টাই চলে গেছে নানারকম ব্যবসার পেছনে, অন্যরকম জীবন সংগ্রাম করে। তারাই আজ বেসরকারি কলেজগুলির মালিক বা ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান। তাদের হাতেই অধ্যাপকদের ভবিষ্যৎ। তাদের নির্দেশমতো অধ্যাপকদের চলতে হয়। অমান্য হলে ছাঁটাই এর যাতাকলে তাঁদের পিষে ফেলা হবে। 

লেখাপড়ায় ভালো হয়ে কি লাভ? শিক্ষা, স্বাস্থ্য যাদের হাতে চলে গেছে, তাদের তো শিক্ষার প্রয়োজন হয়নি। একটা ব্রাইট ক্যারিয়ার কোনও প্রয়োজন হয় না। শুধু রাজনীতি করলেই ব্যাপারটা মিটে যায়। তবে নীতিহীন হতে হবে। রাজনৈতিক প্রভাব দেখিয়ে, মানুষকে ভয় দেখিয়ে টাকার পাহাড় করে ফেলেছে। লজ্জার লেসমাত্রও কারোর নেই৷

একসময় গোপালকৃষ্ণ গোখেল বলেছিলেন, বেঙ্গল থিংস টুডে, ইন্ডিয়া থিংস টুমোরো অর্থাৎ বাংলা আজ যা ভাবে, ভারত কাল তাই ভাবে। আজকে সেই অহংকার কোথায় গেল ? একসময় আমাদের রাজ্যের মানুষ বিহার, উড়িষ্যার শিক্ষা ব্যবস্থাকে পাত্তাই দিতেন না৷ 

আজ কিন্তু ওরা নিজেদের গুছিয়ে নিয়েছে। তারা আর কুলির কাজ করতে আসেন না৷ রাজ্যেই কাজ আছে। যারা আসেন, সবই অফিসার। ওড়িয়া মানে রান্নার ব্রাহ্মণ। একথা ছিল কুড়ি বছর আগে। আজ কিন্তু সব হিসাব পাল্টে গেছে৷ আমি ডাক্তার দেখেছি পুরী জেলা হাসপাতালে, কত কর্মনিষ্ট, কত সহানুভূতিশীল৷ আমাদের রাজ্যে যেটা আশা করা যায়ই না। 

অবশ্য সবকিছু জেনারালাইজ করা উচিত নয়৷ একই ভারতবর্ষে দুটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় নাম করলেই বোঝা যায় যে গুণগতমান কত ভালো৷ তারা আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিসম্পন্ন৷ একটি হলো সিমবায়োসিস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, অপরটি হল অ্যামিটি ইউনিভার্সিটি৷ তারাও তো বেসরকারি। কিন্তু তারা নিজেদের গুণগতমানের সঙ্গে কোনও কম্প্রোমাইস করে না৷ 

পরীক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের হোম সেন্টার রামকৃষ্ণ মিশন বিদ্যামন্দিরগুলিতে ছিল। সেখানে যেমন পরীক্ষা হয়, তেমনি হয়েছে। কোনও বাড়তি সুযোগ কিন্তু তারা পায়নি। সুতরাং তাদের নিজেদের শিক্ষার গুণগতমান এর সঙ্গে কোনও কম্প্রোমাইজ ছিল না৷ এরাই প্রকৃত ছাত্র তৈরীর কারিগর।  

তাহলে সরকারি ব্যবস্থার অধীনে যদি কোনওকিছুই না থাকে, তাহলে সরকার বেসরকারীকরণ করা হোক না। সেখানে শিক্ষা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে আসুক প্রসাশক, অর্থনীতিবিদ, প্রযুক্তিবিদ। সরকার যদি অপারগ হয়, তাহলে শ্বেতপত্র দাখিল করে ছেড়ে দেওয়াই তো ভালো৷ সেই ইচ্ছেটা হয় না কেন? তাই আবারও বলছি, নিজের জাতিকে ধ্বংস হতে দেবেন না। কারণ, সময় কিন্তু কখনও ক্ষমা করবে না৷ ইতিহাস মনে রাখবে৷ কৃত্রিম ইতিহাস তৈরি করার যতই চেষ্টা হোক না কেন, সময় কিন্তু ঠিক বিবেচনা করে ইতিহাসকে বদলে দেবে।‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন