Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২১

‌ভ্রমণ : জলদাপাড়ার জঙ্গল সাফারিতে অতিরিক্ত পাওনা আদিবাসীদের নাচ, গান

In-the-folk-dance-hall

 ‌জলদাপাড়ার জঙ্গল সাফারি    

অজয় মজুমদার

জলদাপাড়া জঙ্গলে ‌বোরো উপজাতির বাস। জঙ্গল ঘুড়তে ঘুড়তে এসে সবাই এসে পৌছালো খোচাঁদ পাড়ায়। এখানেই রঙ্গলি রো-রো ফোক ডান্স হবে৷ গাড়ি থেকে নেমে আমরা একটা ঝোড়ের পাশ দিয়ে ছোট্ট একটা স্কুল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করলাম৷ দেখি সেখানে স্টেজ করা আছে৷ দেখে মনে হল, প্রতিদিনই এখানে অনুষ্ঠান হয়৷ সেখানে বসার জন্য সুন্দরভাবে বেঞ্চ পাতা৷ মনে হচ্ছে আমাদের জন্য ওরা অপেক্ষা করছেন৷ সাড়ে তিনটের দিকে যে সাফারিটি শুরু হয়, সেই সাফারির সদস্যরাই দর্শক৷ সবাইকে এই ফোক ডান্স দেখতে আসতে হয় বাধ্যতা মূলকভাবে৷ কারণ ব্যবস্থাটা এইরকমই৷ আমরা সাজানো-গোছানো বেঞ্চ এ বসে পড়লাম। আর অপেক্ষা করতে লাগলাম, কখন তাদের সঙ্গীত ও নৃত্য শুরু হবে৷  

আসরের চারিদিকে চা এবং পকোড়া বিক্রি হচ্ছে৷ আমাদের কেউ কেউ অর্ডার দিল৷ যাইহোক কিছুক্ষণ বাদে শুরু হল লেকচার৷ এই অংশগ্রহণকারী সমস্ত শিল্পীরাই হল বোরো আদিবাসী গোষ্ঠীর মানুষ৷ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের যিনি নির্দেশক, তিনি প্রথম এই নৃত্য সম্পর্কে আমাদের জানালেন। তারপর বোরো সঙ্গীত এবং নৃত্য শুরু হল। সংস্কৃতিক বিষয়টি হলং এ ইকো ডেভলপমেন্ট কমিটি (‌ইডিসি)‌ পরিচালনা করে৷ কিছু শব্দ বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিল৷ পরে সঙ্গীত পরিচালক বুঝিয়ে দিলেন পাঁচটি সংগীত, সঙ্গে নৃত্য পরিবেশিত হবে৷ বোরো ভাষায় মৃগ মানে শাক৷ গানের অর্থ হলো, চলো সবাই শাক তুলতে যাই৷ যাদের জীবনে শাক অণ্ণ একমাত্র আহার৷ সেটা সংগ্রহ করার মধ্যে যে উচ্ছ্বাস, তাই সংগীতের মধ্য দিয়ে প্রকাশ। পরের গানটি হল ডোপনা মানে কাপড় বা পরনের পোষাক৷ গানটি হল, আই লাভ ইউ ডোপনা। তারপরের গান, নতুন বছর কিভাবে এসে গেছে, তা বুঝতেই পারিনি, প্রকৃতি এমন ভাবেই আচ্ছন্ন করে রেখেছে। যে সবকিছুই যেন স্বাভাবিক৷ তাই বছরটা সহজভাবেই আমাদের জীবনে এসে গেল স্বতঃস্ফুর্তভাবে। 

অনুষ্ঠান শেষ হতে অন্ধকার হয়ে এলো৷ ঝোরার জলের কুলু-কুলু শব্দ। একটু শীত-শীত অনুভব করলাম৷ এই বোরো  সম্প্রদা‌য়ের সবারই জঙ্গল কেন্দ্রিক রজিরুটি৷ দেখলাম যারা বাঁশি বাজাচ্ছেন, তাঁরা যথেষ্টই ভালো শিল্পী।  তাঁরা আমাদের মূল পেশাদার সমাজেও সংগত করার পক্ষে যথেষ্ট৷ ওঁরা বলেছিল, ওঁদের নৃত্যের সঙ্গে অংশগ্রহণ করতে, কিন্তু পরে সেই পরিবেশটা পাওয়া যায়নি। যে পরিবেশটা পাওয়া গিয়েছিল গরুমারা অঞ্চলের আমাদের আরণ্যক রিসোর্টে৷ তবে সংগীতে সুরের বৈচিত্র্যতা খুব বেশি ছিল না৷ শুনে মনে হবে একই রকমের সুর৷ নৃত্যের বৈচিত্র তাও খুব বেশি খুঁজে পাওয়া যাবে না৷ তবে যাদের জীবন কাটে শাক,  লতা, পাতা, জঙ্গলের কাঠ এবং সামান্য কিছু উপঢৌকনের উপর, তাঁদের সংস্কৃতি নিয়ে বেশি কথা না বলাই ভালো৷ 


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অসমে বোরো গোষ্ঠী নিষিদ্ধ ঘোষিত। ন্যাশনাল ডেমোক্রাটিক ফ্রন্ট অফ বোরোল্যান্ডের (এনডিএফবি) সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের একটি চুক্তি স্বাক্ষারিত হয়েছে। এই চুক্তি অসমের বোরো অঞ্চলের উন্নতিতে সাহায্য করবে। এই চুক্তির ফলে অসমের বহু দশকের রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের সমাপ্তি ঘটল৷ জলদাপাড়া জঙ্গলে এইরকম একটি প্রাইমারি স্কুল আছে, যেখানে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা রয়েছে। সেটি দেখেই আমরা অবাক হয়েছিলাম৷ এই গ্রামের মানুষদের মধ্যে খুব বেশি উগ্রতা নেই৷ সুন্দরভাবে দিন গুজরান। একে অপরের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে চলেন৷ জঙ্গলে ক্যাজুয়াল লেবারের কাজ করেন। এই হল বোরো জীবনের আখ্যান৷ একসময় এই নিষিদ্ধ গোষ্ঠী হয়তো জঙ্গলের পথ ধরেই জলদাপাড়া জঙ্গলে এসে পড়েছিল। 


অনুষ্ঠানের পর আমরা আমাদের গাড়ির দিকে এলাম। সন্ধ্যে হয়েছে। অন্ধকারের মধ্যেই একরকম গাড়ি চলতে শুরু করেছে। অন্ধকার জঙ্গলের পরিবেশ পরখ করেছি। পূর্ণিমার চাঁদ জঙ্গলকে দিয়েছে অন্য এক রূপ। বিভূতি ভূষন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লবটুলিয়ার জঙ্গলের পূর্ণিমার রাতের যে বর্ননা দিয়েছিলেন, তা আজ হুবহু মিলে গেলো। কিছু দূর গিয়ে বেশকিছু গাড়ির দল সোজা রাস্তায় চলে গেল৷ আর আমাদের গাড়ি ডানদিকে ঘুরলো। চালককে জিজ্ঞাসা করলাম, ওরা ও দিকে কোথায় যাচ্ছে? চালক বললেন, ওরা যাবে মাদারিহাট৷ আর ডান দিক দিয়ে আমরা যাব সিসামারিতে৷ এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান দেখার জন্য গাড়ি পিছু ৫০ টাকা টিকিট৷ তাতে তাঁদের যে খুব বেশি রোজগার হয় তা কিন্তু নয়৷ আমাদের সঙ্গে খুব বেশি হলে ১৫ টি গাড়ি এসেছিল৷ সাফারি দিনে দুবার হয়৷ একবার সকালে, আর একবার বিকেলে৷ এই হচ্ছে রোজগার। তবে মানুষগুলি সরল, সাদাসিদে৷ অসমের সংস্কৃতি অনেকটাই এদের মধ্যে রয়েছে৷ বাংলাটাও বলে অসমের ভাষার মতো করে৷ পশ্চিমবঙ্গ হলেও এখানে অসমের সংস্কৃতি পরিষ্কার।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন