Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২১

‌ভ্রমণ : দিনকয়েকের সফরে সিসামারির জঙ্গলে

 ‌

A-few-days-visit-to-the-forest-of-Sisamari

দিনকয়েকের সফরে সিসামারির জঙ্গলে

অজয় মজুমদার

সিসামারি জঙ্গলের নামটা শুনেই অবাক হয়ে গেলাম৷ আসলে এইরকম নাম আগে কখনও শুনিনি৷ গরুমারা জঙ্গলের পশ্চিম দিক ঘেঁসে সিসা নদী বয়ে চলে তার আকা বাঁকা রূপ নিয়ে৷ এই সিসা নদীর একদিকে জঙ্গল, অপরদিকে মাটির বাঁধ৷ আমরা ছিলাম এই বাঁধের দিকের জঙ্গলে৷ যেমন তার অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি ছিল জলদাপাড়া রাইনো কটেজের টুসির আতিথিয়তা৷ প্রথমটা শুনে বেশ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, যখন জানলাম এই জমির মালিককে হাতি মেরে ফেলেছিল৷ তারপর এই কটেজের হাতবদল হয় এবং কেনেন একজন শিক্ষক৷ একদম গ্রামের মধ্যে এই সব রাস্তায় সারাদিনে অন্য কোনও মানুষের পদচারণা হয়না বললেই চলে৷ কটেজের বারান্দায় বসে থাকলে দেখা যায়, জঙ্গলের প্রাণীরা নদীতে জল খেতে আসে৷ সে এক অপরূপ দৃশ্য৷ তবে বাঁধের উপর দিয়ে হাঁটা আদৌ নিরাপদ নয়৷ সেখানে যখন–তখন হিংস্র প্রাণী এসে যেতে পারে৷


আমরা যেদিন পৌঁছলাম, সেদিন কিন্তু জলদাপাড়া অরণ্যে যাওয়ার অনুমতি পাইনি৷ পরের দিন বিকেল ৩ টেয় আমাদের অনুমতি মিললো৷ আমরা নিজেদের গাড়িতে চড়ে গেলাম জলদাপাড়ার পশ্চিম গেট পর্যন্ত৷ সেখানে গিয়ে বিদেশে যাওয়ার মতো সমস্ত চেকিং হওয়ার পরে ভেতরে প্রবেশ৷ তারপর সাফারি শুরু হল বিকেল সাড়ে তিনটেয়৷ জঙ্গলের মধ্যে আমরা প্রবেশ করলাম৷ মাঝে মাঝে শুধু ময়ূরের আনাগোনা৷ ময়ূর এখানে অরণ্যকে দখল করে রেখেছে৷ বেশ কিছুদূর গিয়ে দেখলাম একটি হৃষ্টপুষ্ট গন্ডার। আরও কিছুদূর এগিয়ে ছোট ছোট বাইসন। আবার কিছুটা এগিয়ে বেশ মস্তান মতো একটা বাইসান আমাদের গাড়ির দিকে তাকালো। ভয়ংকর তার দৃষ্টি৷ 


এভাবেই চলতে চলতে আমরা হলং বাংলোয় পৌঁছলাম৷ সেখানে একটি ছোট্ট ঝোরা আছে৷ ঝোরা মানে পাহাড়ি নদী৷ সেখানে ঘাট করা আছে৷ আমরা বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম, ছবি তুললাম। ঘাটের পাশে দেখি, তার দিয়ে ঘেরা এবং বিদ্যুৎ সংযোগ করা, যাতে বন্যপ্রাণী বাংলোয় প্রবেশ করতে না পারে৷ এই বাংলোটি ঐতিহাসিক। অনেক বিখ্যাত মানুষ এখানে থেকেছেন৷ আমাদের পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু প্রতি বছর দুর্গা পুজোর ছুটিতে এসে এই বাংলোয় থাকতেন৷ আর বোরোলি মাছের ঝোল খেতেন৷ বোরোলি মাছ এই অঞ্চলের বিখ্যাত মাছ৷ ভালবাসেন না এমন বাঙালি খুব কমই আছেন৷ জলদাপাড়ার জঙ্গলে উল্লেখযোগ্য উদ্ভিদগুলির মধ্যে সেরা টুন, লালি, বেহেরা, সিল্ককটন ট্রি বা শিমূলের দেখা পাওয়া যায়৷ বেশ অনেকটাই উঁচু৷ তাছাড়া এখানে রয়েছে শিরীষ খয়ের গাছ৷


জলদাপাড়া হলো পশ্চিমবঙ্গের আলিপুরদুয়ার জেলার পূর্ব হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি জাতীয় অরণ্য। এটি তোর্সা নদীর তীরে অবস্থিত৷ অরন্যের আয়তন ১৪১ বর্গকিলোমিটার। এই জন্যই মূলত নদীকেন্দ্রিক অরণ্য, সঙ্গে সুবিস্তৃত তৃণভূমি এবং উদ্ভিদ প্রকৃতির বৈচিত্র্যময় সমাবেশ। এগুলির মধ্যে অবলুপ্তপ্রায় এক শৃঙ্গ গন্ডার উল্লেখযোগ্য৷ পাখির মধ্যে ক্রেস্টেড ঈগল, পালাশ ফিলিং ঈগল, শিরকার দেখা মেলে৷ এছাড়াও বনমোরগ, ময়ূর, তোতা, বেঙ্গল ফ্লোরিক্যান, লেসার পেইড, হর্ণবিল ইত্যাদি রয়েছে। সরীসৃপের মধ্যে এই অরণ্যে উল্লেখযোগ্য হল, অজগর বা পাইথন, গিরগিটি, ক্রেট, কোবরা, গুইসাপ বা ভেরেনাস৷ মিষ্টি জলে বসবাসকারী কচ্ছপের আটটি প্রজাতি আছে এখানে। জলদাপাড়া জাতিয় অরণ্যে এলিফ্যান্ট সাফারির ব্যবস্থাও আছে৷ বন ও তৃণভূমিতে গন্ডার, হাতির পাল ও অন্যান্য জীবজন্তুর বন্যজীবন প্রত্যক্ষ করা যায়৷‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন