Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২১

বনগাঁর দুর্গাপুজোর সেকাল–একাল ৩

 ‌

Once-upon-a-time-in-Durga-Puja-of-Bangaon-3

বনগাঁর দুর্গাপুজোর সেকাল–একাল ৩

পীযূষ হালদার


বনগাঁ শহরের কাছেই ছয়ঘড়িয়ায় প্রত্নতাত্ত্বিক রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়ির দুর্গাপুজোও বেশ প্রাচীন। এই বংশের সদস্য গৌরহরি বন্দ্যোপাধায় এই পুজোর প্রচলন করেন। সর্ম্পকে গৌরহরির নাতি রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় কর্মসূত্রে বাইরে থাকলেও পুজোর সময় বাড়ির পুজোয় থাকতেন। অষ্টমীর দিন দরিদ্রদের মধ্যে নিজে হাতে নতুন বস্ত্র তুলে দিতেন। 


একসময় পুজোর কটা দিন ছয়ঘড়িয়া সহ আশপাশ গ্রামের মানুষের দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা থাকতো এই বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়িতে। পরিস্থিতির কারণে এখন অনেক কিছুর বদল ঘটলেও পুরনো রীতি মেনে এখনও নিষ্ঠাভরে পুজোর আয়োজন হয় এই পরিবারে। আর দশমীর দিন সন্ধেয় স্থানীয় নাওভাঙা নদীতে প্রতিমা নিরঞ্জনের পর্বটিও অভিনব। 


আটের দশক থেকে ক্লাবের পুজো মণ্ডপগুলিতে পরিবর্তন আসতে থাকে। কোথাও কোথাও মন্ডপের পেছনের দৃশ্যপটে আঁকা হতে থাকে প্রাকৃতিক দৃশ্য। কোথাও মণ্ডপ তৈরি হয় সাধারণ কাপড়ের কাজের বদলে কাপড়ে কুচি ফেলে নকশা তৈরি করে। সেটাই তখন যথেষ্ট আকর্ষনীয় ছিল।


একুশ শতকের প্রথম দিক থেকেই শুরু হল ক্লাবগুলির মধ্যে থিমের পুজোর প্রতিযোগিতা। এসব পুজোতে কোথাও উঠে এসেছে বাংলার গ্রাম, আবার কোথাও বিশাল বিশাল পর্বত। কোথাও ভগ্নপ্রায় পুরাতন মন্দির। তাছাড়াও নতুন নতুন উদ্ভাবনা। এখন কোথাও বিশালাকৃতির মন্দিরের আদলে মন্ডপ। সেখানে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত গর্ভগৃহে গিয়ে প্রতিমা দর্শন করতে হয়। প্রতিটি পুজোর ব্যালেন্সশীটে রিসিভ পেমেন্টের বহর বেড়েই চলেছে। 


বনগাঁ শহরে পুজোর সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে পেতে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যা সহজেই কলকাতা শহরের কাছাকাছি চ্যালেঞ্জ জানাতে পারে। পার্থক্যটা এই যে, কলকাতা শহরের পুজোগুলি ছড়িয়ে ছিঁটিয়ে থাকে। বনগাঁ শহরের প্রতিমা দর্শন করতে গেলে রাজপথের জনসমুদ্রে মিশে পায়ে পায়ে এগিয়ে যেতে হবে। প্রতি কিলোমিটারে অন্তত দু'-তিনটি বড় বড় পুজোমন্ডপ দেখতে পাওয়া যাবে।  কেবলমাত্র বনগাঁ মহকুমা নয়, মহকুমার বাইরে এমনকি অন্য জেলা থেকেও বহু দর্শনার্থী এই কটাদিন বনগাঁয় বিভিন্ন পুজোমণ্ডপগুলি ঘুরে ঘুরে প্রতিমা দর্শন করেন। গোটা শহরটি আলোর মেলায় সেজে ওঠে। চন্দননগরের শিল্পীদের তৈরি আলোয় ফুটে ওঠে কত কলাকৌশল। 


বিশ্বসংসার এখন দিশেহারা। নিউ নরমালে মানুষকে অনেক কিছুই মেনে নিতে হচ্ছে। মানতেই হবে। কারণ, আমাদের বাঁচতে হবে। ২০২০ সালে এই শহরে বড় পুজো তেমন হয়নি বললেই চলে। এবারও বড় পুজো মাত্র কয়েকটা হলেও, বেশিরভাগ পুজোই কম বাজেটের, ছোট আকারের।







কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন