Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১

দুর্গাপুজোর মাহাত্ম ও কিছু প্রাচীন পুজো

Mahatma-of-Durgapuja

 দুর্গাপুজোর মাহাত্ম ও কিছু প্রাচীন পুজো 

পীযূষ হালদার

আগমনী আর বিজয়াতেই দুর্গাপুজোর মাহাত্ম। এই দুয়ের মধ্যবর্তী সময়ে যতটা শাস্ত্র অনুসারে আচার–বিচার, ভক্তি–শ্রদ্ধা ভালবাসার আয়োজন, ঠিক ততটাই স্বামীগৃহ থেকে কন্যার বাপের বাড়িতে আসা–যাওয়াটাই এই উৎসব । আগমনীতে বাবা–মায়ের কাছে যাওয়ার আনন্দ, বিজয়ায় সেই আনন্দের বিসর্জন। আগমনীতে মেনকার অনুরোধে গিরিরাজ কৈলাসে যান মেয়েকে আনতে। তাই আগমনী সুরে বাজে মায়ের সেই ব্যাকুলতা, উৎকণ্ঠা। একেবারে ঘরোয়া সেই আয়োজনে বাঙালি গৃহস্থের স্বকীয় আন্তরিকতার ঘনঘটা এই পুজোয়। 



শাস্ত্র মতে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড নিয়ন্ত্রণকারী শক্তি কোনও পুরুষ নয়, নারী। পরমব্রহ্ম দেবী এক এবং অদ্বিতীয়। দুর্গা, কালী, চন্ডী সেই দেবীর বিভিন্ন রূপ। বাংলায় বৈদিক ধর্মের আগমনের আগে থেকে মঙ্গল চন্ডী,  ওলাই চন্ডী ইত্যাদি চন্ডী পুজোর চল ছিল। খ্রিস্টীয় ত্রয়োদশ শতাব্দী থেকে চণ্ডীমণ্ডপ গুলি রচিত হতে থাকে। চণ্ডীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির ফলে হিন্দু ধর্মের মূল ধারায় স্থান দেওয়া হয়। একসময় চন্ডীই হয়ে গেলেন দেবী দুর্গার সমার্থক । দেবী দুর্গার মর্তে আগমনের কারণ নির্দেশ করেছে এক এক পুরাণে এক এক রকম। পুরাণের বিধান যাই থাক, দেবী দুর্গা বাংলায় আসেন বাঙালির ঘরের কন্যা হিসেবে। 


মহালয়ার পরে শুরু হয় দেবীপক্ষের। সেই সময় থেকেই উৎসবের আয়োজন শুরু হয়। কোনও কোনও মন্ডপে বা চণ্ডীমণ্ডপের দেবী দালানের বেদিতে প্রতিমা প্রতিস্থাপনের পর মহালয়ার পরদিন থেকেই শুরু হয় চণ্ডীপাঠ। পঞ্চমীতে হয় বোধন, ষষ্ঠীতে ষষ্ঠী পুজো, সপ্তমী পুজোর পর অষ্টমীতে সন্ধিপুজোর সময় আখ ও কুমড়ো বলি দেওয়া হয় কোনও কোনও জায়গায়। এইভাবে পুজোর প্রতিটি স্তর পেরিয়ে বিজয়া দশমী আসে। তারপরে প্রতিমা নিরঞ্জনের পালা।


জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্তরে সর্বক্ষেত্রে বাঙালির এই দুর্গোৎসব জাতি–ধর্ম– বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেককে মাতিয়ে তোলে। আর দেবী দুর্গা তো বাংলার ঘরের মেয়ে। তাঁর আগমনে বাংলার মানুষ মেতে উঠবে এ আর এমন কি কথা। এবারও ভয়াল আবহে বাংলা তথা বনগাঁর মানুষ দেবী দুর্গার আবাহনের জন্য তৈরি হয়েছে। সবকিছুই হবে সরকারি নির্দেশিকা মেনে। আগস্টের শেষের দিকে এ বছরও বিদেশে পাড়ি দিয়েছে তেত্রিশটি দুর্গা প্রতিমা।  


বনগাঁ মহকুমা ও তার আশপাশের অনেক প্রাচীন দুর্গাপুজোর অস্তিত্বের কথা জানা যায়। সুরেশ্বর নামে এক ব্যক্তি ১৫৩৯ খ্রিস্টাব্দে মোগল সম্রাট হুমায়ুনের কাছ থেকে রাজা খেতাব পান এবং রায় উপাধিতে ভূষিত হন। তাঁর বংশের সন্তোষ রায় হরিরামপুরে নিজের বাড়িতে মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন প্রায় ৪০০ বছর আগে। এই সময় থেকে এই মন্দিরে শরৎ ঋতুতে দুর্গাপুজোর প্রচলন হয় । ইছাপুরের হোড় চৌধুরী বাড়ির দুর্গাপুজো বেশ প্রাচীন। 


গোবরডাঙার জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো প্রায় ৩০০ বছরের প্রাচীন। গত বছর দুর্গামন্ডপে ঘট পুজোর মধ্যে দিয়েই এই পুজো সম্পন্ন করা হয়েছিল। এবছরও প্রতিমা ছাড়াই কেবলমাত্র ঘট পুজো হচ্ছে। ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়ি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকেই দুর্গা পুজো হয়। গুরুচাঁদ ঠাকুর স্বপ্নাদিষ্ট হয়ে এই পুজো প্রবর্তন করেন। এছাড়া, বনগাঁ মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কিছু প্রাচীন পুজো আছে যা দুর্গাপুজো নামে অভিহিত না হলেও দুর্গাপুজোরই সমার্থক। যেমন গাঁড়াপোতার মহিষমর্দিনী পুজো।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন