Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

গোপালনগরে ট্রান্সফর্মারের আইসোলেটর নামিয়ে তালা লাগিয়ে দিয়ে পঞ্চায়েত সদস্যার 'দিদিগিরি‌'

 ‌

Panchayat-member-Didigiri

সমকালীন প্রতিবেদন : ‌তৃণমূলের গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যার 'দিদিগিরি‌'। যান্ত্রিক ত্রুটিতে নিজের বাড়ির বিদ্যুতের লাইন না থাকায় গায়ের জোরে ট্রান্সফর্মারের আইসোলেটর নামিয়ে দিয়ে তাতে তালা লাগিয়ে দিলেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যা। যার কারণে গোটা এলাকা অন্ধকারে ডুবে গেল। ভোগান্তির শিকার গ্রামের প্রায় ৫৫ টি পরিবার। গ্রামবাসীদের সম্মিলিত প্রতিবাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে পুলিশের গাড়ি ঘিরে বিক্ষোভ দেখান গ্রামবাসীরা। পাশাপাশি, এই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যার অনুগামীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায় বলে অভিযোগ। উত্তর ২৪ পরগনার গোপালনগর থানা এলাকার এই ঘটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।‌

জানা গেছে, গোপালনগর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের অন্তর্গত নতুনগ্রাম পশ্চিমপাড়া এলাকায় বিদ্যুতের পরপর দুটি ট্রান্সফর্মার রয়েছে। এর মধ্যে একটি ট্রান্সফর্মার খারাপ থাকায় অন্য ট্রান্সফর্মার দিয়ে এলাকায় বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চালু রাখে বিদ্যুৎ দপ্তর। এরইমধ্যে ওই গ্রামের বাসিন্দা, স্থানীয় গোপালনগর ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২৪ নম্বর বুথের তৃণমূল সদস্যা কাজল মণ্ডলের বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ না থাকায় তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। আর সেই রাগের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে তিনি মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ সচল থাকা ট্রান্সফর্মারের আইসোলেটর নামিয়ে দিয়ে নিজেই তাতে তালা লাগিয়ে দেন। একটি নয়, পরপর দুটি তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়। 

এ প্রসঙ্গে গ্রামবাসীদের উদ্দেশ্যে তার বক্তব্য, তার বাড়িতে যখন বিদ্যুৎ সংযোগ নেই, তখন গ্রামের কারোর বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ থাকবে না। যতক্ষণ না তার বাড়িতে বিদ্যুৎ সংযোগ আসছে, ততক্ষণ এইভাবে তালা বন্ধ থাকবে বলে এক প্রকার হুমকি দিয়ে যান ওই পঞ্চায়েত সদস্যা, এমনই অভিযোগ গ্রামবাসীদের। এই ঘটনার জেরে এদিন বিকেলের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অন্ধকারে ডুবে যায় গোটা গ্রাম। সমস্যায় পড়েন গ্রামের প্রায় ৫৫ টি পরিবার। 

ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে এবং সমস্যা সমাধানের আশায় গ্রামবাসীরা মিলিতভাবে এরপর গোপালনগর থানায় গিয়ে লিখিতভাবে আবেদন জানান। বেশ কিছু সময় পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও তারা এ ব্যাপারে কোনও পদক্ষেপ করে নি বলে গ্রামবাসীদের অভিযোগ। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা পুলিশের গাড়ির সামনে অবস্থান বিক্ষোভ শুরু করেন। 

এদিকে, এই খবর সংগ্রহ করতে গিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সাংবাদিকেরা অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্যা কাজল মণ্ডলের প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করলে তার অনুগামীরা সাংবাদিকদের উপর হামলা চালায়। তাঁদের ক্যামেরা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হয় এবং শারীরিকভাবে হেনস্থা করা হয়। এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে বনগাঁ মহকুমা প্রেস ক্লাব। 

এ ব্যাপারে বিজেপির বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি মনস্পতি দেবের অভিযোগ, 'তৃণমূল এভাবেই চারিদিকে দাদাগিরি, দিদিগিরি করছে। রাজ্য জুড়েই একটা অরাজকতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আর তাদের এই অনৈতিক কাজের দোসর হয়েছে পুলিশ। এটা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।'‌ সাংবাদিকদের উপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেন তিনি।

অন্যদিকে, তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান শঙ্কর দত্ত বলেন, 'বিষয়টি এখনও আমার কাছে পরিস্কার নয়। তবে পঞ্চায়েত সদস্যার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য হলে, সেটা অন্যায়। প্রয়োজনে দলের পক্ষ থেকে আমরা উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করব। কেউ আইনের উর্দ্ধে নয়।'‌ তিনি সাংবাদিকদের উপর হামলার তীব্র নিন্দা করেন।

এদিনের ঘটনা সম্পর্কে রাজ্য বিদ্যুৎ দপ্তরের বনগাঁ ডিভিশনের ম্যানেজার জানান, 'ব্যক্তিগত স্বার্থে কেউ যদি নিজের দায়িত্বে ট্রান্সফর্মারের আইসোলেটর নামিমে তালা লাগিয়ে রাখেন, তারজন্য বিদ্যুৎ দপ্তরের আইন অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা আছে।'‌ তবে পঞ্চায়েত সদস্যার এই অন্যায় কাজে তার কোনও শাস্তি হয় কি না, সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছেন এলাকার মানুষ। শেষ খবর অনুযায়ী, বিদ্যুতের যে ট্রান্সফর্মারে পঞ্চায়েত সদস্যা তালা লাগিয়ে দিয়েছিলেন, এদিন গভীর রাতে গ্রামবাসীরা নিজেরাই সেই তালা ভেঙে বিদ্যুতের লাইন চালু করে দেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন