Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ১২ আগস্ট, ২০২১

সাংবাদিক যখন কয়েদি

When-a-journalist-is-a-prisoner

সাংবাদিক যখন কয়েদি 

স্বপন ঘোষ  

১৯৭৫ সালের ২৫ জুন। ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী রাষ্ট্রপতি ফকরউদ্দীন আলি আহমেদের সম্মতি নিয়ে জাতীয় জরুরী অবস্থা ঘোষণা করলেন। ঠিক সেদিনই কলকাতার একজন সাংবাদিক এই ঘটনার প্রতিবাদে নিজের মাথা মুড়িয়ে ফেলেন এবং  'bereavement' বা 'পরিজন বিয়োগাত্মক শোক' এই শিরোনামে নিজের ১৩ বছরের পুত্রকে একটি প্রতীকী চিঠি লেখেন। চিঠিটি 'কলকাতা' নামে একটি মাসিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ওই চিঠিটির জন্য বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশংকর রায় ওই সাংবাদিককে জেলে পাঠান। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আকস্মিক জরুরী অবস্থা ঘোষণা দেশের মানুষের স্বাধীনতা ও মত প্রকাশের অধিকারের পরিপন্থী- মূলত এটিই ছিল ওই সাংবাদিকের প্রতিবাদের হেতু। জরুরী অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ অবশ্য থেমে থাকেনি। জেলে বসেই 'রূপদর্শী'‌ ছদ্মনামে লিখেছিলেন শাসকের বুকে কম্পন ধরানো একের পর এক প্রতিবাদী রচনা। সেদিনের সেই সাংবাদিক ছিলেন স্বনামধন্য শ্রী গৌরকিশোর ঘোষ। 

১৯২৩ এর ২০ জুন জন্মেছিলেন যশোরের হাট গোপালপুর গ্রামে। সেখান থেকে ভাগ্যের টানে এলেন নবদ্বীপ। ইন্টারমিডিয়েট পাশ করলেন ১৯৪৫ এ । কিন্তু চরম দারিদ্রের কারণে লেখাপড়া আর এগোলো না। ওই বয়সেই শুরু হয়ে গেল কাজ খোঁজা। কি কাজ তিনি করেননি! প্রাইভেট টিউটর থেকে শুরু করে ইলেকট্রিক মিস্ত্রি, ফিটার মিস্ত্রি, বিক্রেতা, ওয়েটার, ট্রেড ইউনিয়ন সংগঠক, স্কুলশিক্ষক, নৃত্যগোষ্ঠীর ম্যানেজার, প্রুফরিডার এবং আরও কত কি!

হঠাৎ পাওয়া সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সাংবাদিকতা শুরু করেন 'দৈনিক সত্যযুগ' পত্রিকায়। এরপর দীর্ঘদিন 'আনন্দবাজার' ও 'দেশ' পত্রিকায় সাংবাদিকতা করেছেন। রূপদর্শী ছদ্মনামে ১৯৬৯ থেকে '৭১ এর পশ্চিমবঙ্গের বহুআলোচিত নকশাল আন্দোলনে শাসকের বর্বরোচিত আচরণের প্রতিবাদে একের পর এক বিদ্রুপাত্মক রচনার মাধ্যমে গোটা দেশে আলোড়ন তুলেছিলেন। সাংবাদিকতার শক্তিকে ব্যবহার করে শাসকের নাভিশ্বাস তুলেছিলেন। অত্যাচারিতও হয়েছিলেন চরম! কিন্তু কখনওই ভয় পাননি। তিনি এবং তাঁর সহকর্মী সাংবাদিক বরুণ সেনগুপ্ত রাজনৈতিক সাংবাদিকতার যে মান নির্ধারণ করলেন, এদেশের সাংবাদিক তথা আপামর মানুষের কাছে একই সঙ্গে তা শ্রদ্ধার এবং গর্বের। 

১৯৮১ সালে 'আজকাল' পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। পাশাপাশি চলতে থাকে বিভিন্নমুখী সাহিত্যরচনা। ১৯৭০ এ 'প্রেম নেই' উপন্যাসের জন্য পেলেন আনন্দ পুরস্কার। এই সিরিজেরই অপর দুটি বিখ্যাত উপন্যাস 'প্রতিবেশী' ও 'জল পড়ে পাতা নড়ে' লিখলেন পরপর। তাঁরই সৃষ্ট প্রতিবাদী চরিত্র 'সাগিনা মাহাতো' কে নিয়ে স্বনামধন্য পরিচালক তপন সিংহ দ্বিভাষিক সিনেমা নির্মাণ করেছেন। সাংবাদিকতা, সাহিত্য ও সৃষ্টিশীল লেখালেখির জন্য ১৯৮১ তে পেলেন রামন ম্যাগশেশে পুরস্কার।  

ব্যক্তিগত জীবনে বিপ্লবী এম.এন. রায়ের 'Radical Humanism' এর আদর্শে বিশ্বাসী মানুষটি মানুষের অধিকার, মর্যাদা আর স্বাধীনতা রক্ষার লড়াই সামনে থেকে লড়েছেন। আবার অহিংসা ও সত্যবাদিতা রক্ষায় গান্ধীজীকেই আদর্শ মেনেছিলেন। সাংবাদিক জীবনের প্রত্যেকটি পর্বে যেন সকলকে স্মরণ করিয়েছেন : সাংবাদিকতা একটা ধর্ম এবং তাকে রক্ষা করাই সাংবাদিকের কাজ।


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন