Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ৪ আগস্ট, ২০২১

কিশোর কুমারের জন্মদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি

Tribute-to-Kishore-Kumar-birthday

স্বপন ঘোষ : "ওহ্ শাম কুছ আজিব থি.." এটা সেই চির বিখ্যাত হিন্দি ফিলমি গানের লাইন। গঙ্গার ওপরে নৌকায় রাজেশ খান্না আর ওয়াহিদা রহমান। রাজেশ গাইছেন চির প্রেমিকের ঢঙে : "ওহ্ শাম কুছ আজিব থি ..." অমর এই গানটি সৃষ্টির পিছনে আরও অনেক দিকপাল ছিলেন : গুলজারের লেখনীর জাদু, হেমন্ত কুমারের প্রাণছোঁয়া সুর আর বিমল রায়ের অসাধারণ পিকচারাইজেশন ! কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে গেছেন কিশোর কুমার তাঁর অবিশ্বাস্য মেলোডি দিয়ে। আপনাদের মনে হতে পারে , আমি আজ এই গানটি নিয়ে এতো কথা বলছি কেন! আসলে এতো কথার কারণ গানটি নয়, গানের শিল্পী চিরকিশোর কিশোর কুমার। 

(বাদুড়িয়ার অপহৃত ২ কিশোরী উদ্ধার ছত্রিশগড় থেকে)

আজ আমাদের সকলের প্রিয় কিশোর কুমারের ৯৩তম জন্মদিন উপলক্ষ্য করেই স্মৃতিমেদুর হয়ে পড়েছিলাম। দেখে নেওয়া যাক, আভাস কুমার গাঙ্গুলি কি করে কিশোর কুমার হয়ে উঠলেন। 

১৯২৯ এর আজকের দিনে আভাস জন্মেছিলেন ব্রিটিশ ভারতের সেন্ট্রাল প্রভিন্সের খান্ডোয়াতে। বাঙালি ব্রাহ্মণ আইনজীবী পিতা কুঞ্জলাল গাঙ্গুলি খান্ডোয়ায় এসেছিলেন সেখানকার বিখ্যাত গোখলে পরিবারের আইনজীবী হয়ে। স্ত্রী গৌরীদেবী, তিন ছেলে- অশোক, অনুপ আর আভাস এবং এক মেয়ে সতীকে নিয়ে তাঁর ভরা সংসার। কিশোর মানে আভাসের ছোটবেলাতেই দাদা অশোক হিন্দি সিনেমার প্রতিষ্ঠিত নায়ক। ইন্দোরের  ক্রিস্টোফার কলেজ থেকে বি এ পাশ করে আভাস বম্বেতে দাদার কাছে এলেন ‌কেরিয়ার তৈরি করতে। আর নাম পাল্টে হলেন কিশোর কুমার। দাদা অশোক কুমারের ইচ্ছেতেই কিশোর কুমারের ফিল্মে  নামা। তার প্রথম ছবি 'শিকারী' (১৯৪৬), যে ছবির নায়ক অশোক কুমার। 

ভ্যাকসিন নিয়ে এবার গোলমাল পাল্লায়, বিক্ষোভ ঠাকুরনগরেও

ফিল্মে অভিনয়কে কিশোর কোনও দিনই সিরিয়াসলি নেননি। তার পছন্দের জায়গা গান। আর গানের জগতে তাঁর অতি পছন্দের গায়ক কে এল সায়গল - যাকে কিশোর তখন প্রায় অন্ধের মত অনুকরণ করছেন। ১৯৪৮  সালে 'জিদ্দি' সিনেমায় কিশোর প্রথম প্লেব্যাক করার সুযোগ পেলেন : " মরনে কি দুয়া কিউ মাঙ্গু"। এরপর একে একে সুযোগ আসতে লাগল। তবে কিশোর কুমারকে গায়ক হিসাবে যিনি যথার্থ ব্যাকআপ দিলেন, তিনি 'ওয়ান অ্যান্ড ওনলি' এস ডি বর্মণ। শক্তি সামন্তের দ্বিভাষিক 'আরাধনা' ছবির কথা মনে আছে তো ! 'মেরে সপনো কি রাণী', 'রূপ তেরা মস্তানা'......এরপর কিশোরকে থামানো যায় নি। বর্মণসাবই কিশোরকে বুঝিয়েছিলেন, "সায়গলসাবকে নকল করার দরকার নেই, তুমি তোমার নিজের স্টাইল বানাও, একদিন তোমাকেই সবাই নকল করবে।" বর্মণসাবের কথা অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেছে  : সারা পৃথিবীতে এতো সংখ্যক "কন্ঠীশিল্পী" বোধহয় আর কারও নেই!

এরপর তো শুধু গান আর গান! খৈয়াম, নৌসাদ, আর. ডি. বর্মণ, লক্ষ্মীকান্ত-প্যারেলাল, কল্যানজি-আনন্দজি, বাপ্পি লাহিড়ী, রাজেশ রোশন আরও কত সংগীতকারের গান যে তিনি গাইলেন! মেল সিঙ্গেল গান, লতা বা আশার সঙ্গে ডুয়েট - সবেতেই তিনি বাজিমাত করলেন। 

হিন্দির পাশাপাশি বাংলা, মারাঠী, তামিল, তেলেগু, গুজরাতি ইত্যাদি অনেক ভাষাতেই তিনি গান গেয়েছেন এবং তাঁর ওই ঈশ্বর-প্রদত্ত উদাত্ত গলার জন্য, অবিশ্বাস্য মেলোডির জন্য সব গানেই তিনি সফল হয়েছেন। 

সত্যজিত রায় কিশোর কুমারের গান খুব পছন্দ করতেন। সেই জন্যই তাঁর চারুলতা বা ঘরেবাইরে'তে তিনি কিশোর কুমারকে দিয়েই রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইয়েছিলেন। মান্না দে'র মত শিল্পী তাঁর আত্মজীবনী "জীবনের জলসাঘরে"তে লিখেছেন, "আমরা হলাম শ্রমিকশ্রেণীর শিল্পী, খেঁটেখুটে গানবাজনা করি, আর কিশোর হলেন ঈশ্বরের বরপুত্র, ঈশ্বরের সংগীত যেন তাঁর মধ্য দিয়েই মূর্ত হয়ে ওঠে।" সুভদ্র মান্না দে হয়তো নিজের সম্পর্কে বিনয় করেছিলেন, কিন্তু কিশোর কুমার সম্পর্কে তাঁর মূল্যায়নে সম্ভবত কোনও ভুল নেই ।

এতোবড়ো শিল্পী কিশোর কুমার, এতো তাঁর নামডাক, এতো অর্থ, এতো যশ, এতো প্রতিপত্তি! তবু জীবনের হিসাব তিনি ঠিক করে মেলাতে পারেননি। জীবনের চলার পথে বারবার হোঁচট খেয়েছেন। বরাবরই বেহিসাবি, বোহেমিয়ান কিশোর জীবনের অর্থ খুঁজতে গিয়ে হয়রান হয়েছেন বারবার। হয়তো ভুলও করেছেন! তবু আমরা ব্যক্তি কিশোরকে মনে রাখব না, মনে রাখব অনন্যসাধারণ গায়ক, এন্টারটেইনিং অভিনেতা কিশোর কুমারকে - যাঁর ভেতরের দুঃখ নিয়ে তিনি নিজেই তো গেয়ে গেছেন : "ইয়ে জিন্দেগি হুয়ি কাহা ভুল / কিসকি হামে মিলি ইয়ে সাজা!"

1 টি মন্তব্য: