Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২৮ জুলাই, ২০২১

সুন্দরবন : ত্রাণ ও পরিত্রাণ

 সুন্দরবন : ত্রাণ ও পরিত্রাণ

বাসুদেব পাল


ইয়াসে বিধ্বস্ত সুন্দরবন। এটা নতুন কিছু নয়। প্রায় প্রতি বছর সুন্দরবনের কোন না কোন এলাকা বিধ্বস্ত হয়। কোন বছর বেশি, কোন বছর কম। এবছর অনেকটা বেশি এলাকা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই এবছর প্রচার অনেক বেশি। এটা স্বাভাবিক। সরকারি প্রচেষ্টার বাইরে অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা একক কিংবা দলগত বিভিন্ন উদ্যোগে ব্যাপকহারে ত্রাণের কাজ হয়েছে। এটা ভালো। অনেক ক্ষেত্রে কোন কোন জায়গায় বাসিন্দারা প্রয়োজনের অতিরিক্ত ত্রাণ অনেক পেয়েছেন। আবার অনেক দুর্গম এলাকায় তেমনভাবে ত্রাণ পৌঁছায়নি। সামগ্রিক বিচারে ত্রাণের কাজ যথেষ্ট প্রশংসনীয়। যদিও অনেক ক্ষেত্রে ত্রাণের নামে পিকনিক এর ব্যবস্থা হয়েছে, সে বিষয় নিয়ে পরে একদিন আলোচনা করা যায়। 

আজ একটু খতিয়ে দেখা যায় ত্রাণ কি আদৌ পরিত্রাণের কোন উপায়। না ত্রাণ কখনো পরিত্রাণের উপায় হতে পারে না। প্রয়োজন উপযুক্ত পরিকল্পনা। যে এলাকা প্রতিবছর বিধ্বস্ত হয়, সেই এলাকার এই বিধ্বস্ততার মূল কারণ এবং প্রতিকারের উপায় বের করা দরকার। বাঁধগুলি যথেষ্ট চওড়া, উঁচু এবং গাছে পরিপূর্ণ থাকা দরকার। পাশাপাশি, প্রতিটি বাসিন্দার বাড়ি পাকা হওয়া উচিত। যাতে জল উঠলেও জল নেমে যাওয়ার পর বাড়িটি অন্তত থেকে যায়। বিপর্যয় বেশি হলে কাঁচা বাড়ি সব ধুয়েমুছে চলে যায়। ত্রাণ তো অনেকে পেলেন। কিছুদিন চলবে। কিন্তু যাদের বাড়িঘর সব ধুয়ে মুছে গেছে, জমিতে ফসল হবে না, পুকুর ভেসে গেছে, বাড়ির গবাদি পশু মারা গেছে অথবা জলের দরে বিক্রি করে দিতে হয়েছে, হাঁস-মুরগি কিছু নেই, ত্রাণ বন্ধ হয়ে গেলে কিভাবে চলবে তাঁদের ? তাঁদেরকে স্বনির্ভর করে তোলা প্রয়োজন। যেমন  ত্রাণের পাশাপাশি হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ইত্যাদির বাচ্চা তাঁদেরকে দেওয়া যেতে পারে, নোনা জলে চাষের উপযুক্ত ফসলের বীজ দেওয়া যেতে পারে, পুকুর সংস্কার করে মাছ চাষের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে, চাষ ছাড়া বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে। যদি এই সমস্ত ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে শুধুমাত্র ত্রাণের উপর নির্ভর করে বেঁচে থাকা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। 

Sundarbans: Relief and salvation

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় দেখেছি, ওখানকার অনেক মানুষ বলেন, 'প্রাকৃতিক বিপর্যয় হলে আমরা ভাল থাকি। কারণ ত্রাণ পাওয়া যায়। বছরের বাকি সময়টা তো আমাদের অনেক কষ্ট করে চলতেই হয়।'‌ এই কষ্ট দূর করার জন্য স্থায়ী সমাধান করতে হবে। তার জন্য সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনা রূপায়ণ এবং তার প্রয়োগ একান্ত প্রয়োজন। তবে আরও সুদূরপ্রসারী চিন্তা করলে সুন্দরবনের যে সমস্ত এলাকা বেশি বিধ্বস্ত হয়, সেই সমস্ত এলাকা মানুষের বসবাস মুক্ত করে, সম্পূর্ণ ম্যানগ্রোভ অরণ্য তৈরি না করলে শুধু সুন্দরবন নয়, সমগ্র বাংলা বিধ্বস্ত হবে। তাই প্রয়োজন ওই সমস্ত এলাকার মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে বসবাসের উপযুক্ত ব্যবস্থা করে, ওই সমস্ত এলাকাকে ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ভরিয়ে তোলা। না হলে প্রতিবছর সরকারি-বেসরকারি অনেক অর্থ জলে চলে যাবে। সুদুরপ্রসারি কোনও লাভ হবে না। তবে এই বলিষ্ঠ পদক্ষেপ সরকার ছাড়া অন্য কারও পক্ষে নেওয়া সম্ভব নয়।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন