সমকালীন প্রতিবেদন : রাজ্যে বর্তমানে চলতে থাকা ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়াকে আরও স্বচ্ছ, নির্ভুল ও ত্রুটিমুক্ত করার লক্ষ্যে নতুন করে ৫ জন সিনিয়র আইএএস অফিসারকে ‘স্পেশ্যাল রোল অবজার্ভার’ হিসেবে নিয়োগ করেছে নির্বাচন কমিশন। এর আগে অবসরপ্রাপ্ত আইএএস অফিসার সুব্রত গুপ্ত-কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল।
নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অফিসারদের মধ্যে রয়েছেন – মেদিনীপুর বিভাগে নিরাজ কুমার বানসোড় (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক), প্রেসিডেন্সি বিভাগে কুমার রবি কান্ত সিং (প্রতিরক্ষা মন্ত্রক), মালদহ বিভাগে আলোক তিওয়ারি (অর্থ মন্ত্রক), জলপাইগুড়ি বিভাগে পঙ্কজ যাদব (গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক) এবং বর্ধমান বিভাগে কৃষ্ণ কুমার নিরালা (তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক)। কেন্দ্রের এই উচ্চ পদস্থ আধিকারিকেরা যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার।
প্রত্যেকে দায়িত্ব পাবেন তাঁদের নিদিষ্ট ডিভিশনের ভোটার তালিকা সংশোধন, এনুমারেশন, দাবি–আপত্তি ও চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে। নির্দেশনায় বলা হয়েছে— “যে কোনো যোগ্য নাগরিক যেন বাদ না পড়ে আর কোনো অযোগ্য ব্যক্তির নাম তালিকায় অন্তর্ভুক্ত না হয়।”
পশ্চিমবঙ্গসহ ২০২৫ সালে দেশের ১২টি রাজ্যে শুরু হয়েছে এসআইআর পর্ব, যেখানে পুরনো ভোটার তালিকা সংশোধন করে নতুন তথ্য যাচাই ও যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গত ২০০২ সালের পর এত ব্যাপক সংশোধন চলছে। ফলে তথ্যের সঠিকতা বজায় রাখছেন কিনা, সেই বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের দায়বদ্ধতা বাড়ানো হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ আগে ভারতের নির্বাচন কমিশনার এবং রাজ্য মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক–এর বৈঠকে স্পষ্ট বলা হয়, ভোটার তালিকা সংশোধন যেন সমন্বিত, বিনা পক্ষপাত ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ ছাড়া হয়, তার জন্য কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক নিয়োগ অপরিহার্য বলে মনে করা হয়েছে। নিযুক্ত রোল অবজার্ভাররা জেলা নির্বাচন অফিসার, নির্বাচন নিবন্ধন অফিসার এবং বুথ-স্তরের কর্মকর্তা-দের কাজ সরাসরি দেখে জানবেন। অভিযোগ, দাবি–আপত্তি, নোটিস, যাচাই-বাছাই, নাম সংযোজন বা বাতিলসহ প্রতিটি ধাপ পর্যবেক্ষণের আওতায় থাকবে।
তবে এই পর্যবেক্ষকরা নিজে থেকে কোনো ধরনের পুরস্কার বা প্রশংসাপত্র দিতে পারবেন না। কাউকে প্রশংসা করার মতো মনে হলে কমিশনে প্রস্তাব পাঠাতে হবে। নির্বাচনী প্রস্তুতির স্বচ্ছতা ও প্রত্যেক অঞ্চলে একই মানদণ্ড বজায় রাখার জন্য এটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। ভুল বা দ্বৈত নাম অন্তর্ভুক্তি, মৃত বা অবৈধ ভোটারের তালিকাভুক্তি থেকে সুরক্ষা পাবার উদ্দেশ্যেই এই নজরদারি ব্যবস্থা গঠন করা হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, এই রোল অবজার্ভাররা রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারি এবং জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবেন। তাঁদের সফর, পর্যবেক্ষণ এবং প্রাপ্ত তথ্য কমিশনে নিয়মিত রিপোর্ট করতে হবে। নির্বাচন কমিশন জানায়, এই বিশেষ পর্যবেক্ষক নিয়োগের মধ্য দিয়ে প্রতিটি ডিভিশনে ভোটার তালিকার সংশোধন একরূপ হবে, যাতে রাজনৈতিক, প্রাতিষ্ঠানিক বা প্রশাসনিক কোনো পক্ষপাত কাজ করতে না পারে।
পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা সংশোধন প্রক্রিয়া এই মুহূর্তে অত্যন্ত সংবেদনশীল। নতুন রোল অবজার্ভারদের দায়িত্বপ্রাপ্তি, ভোটাধিকার রক্ষার জন্য নেওয়া নতুন এক পদক্ষেপ। ভোটারদের আবেদন, ভাবনা ও দাবিকে সঠিকভাবে প্রতিফলিত করতে পারবে কি, সেটা ভবিষ্যৎ বলবে।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন