সমকালীন প্রতিবেদন : দেশের শ্রম আইনে স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বড় সংস্কার আনতে চলেছে কেন্দ্র। মোট ২৯টি পৃথক শ্রম আইনকে সরলীকরণ করে মাত্র চারটি শ্রম কোডে রূপান্তর করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। নতুন বিধানগুলির বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে ২১ নভেম্বর। কেন্দ্রের দাবি, এই পরিবর্তনে শ্রমিকদের সামাজিক সুরক্ষা যেমন বাড়বে, তেমনই শিল্পজগতে কমবে আইনি জটিলতা। তবে শ্রমিক সংগঠন ও বিরোধী দলের একাংশ বলছে– এই বিধি আসলে সংস্থাগুলিকে বেলাগাম ছাঁটাইয়ের সুযোগ দিচ্ছে।
নতুন চারটি শ্রম কোড হল– ন্যূনতম মজুরি ও বেতন সংক্রান্ত মজুরি কোড, শিল্প সম্পর্ক কোড, সামাজিক সুরক্ষা কোড এবং শিল্প নিরাপত্তা ও উন্নয়ন কোড। গত শতাব্দীর ১৯৩০–৫০-এর দশকে পাশ হওয়া অসংখ্য আইনের জট কাটাতেই এগুলিকে একত্রিত করা হয়েছে। শিল্পমহলের দাবি, এর ফলে দেশে লগ্নি বৃদ্ধি পাবে, উৎপাদন দ্রুততর হবে এবং জিডিপির বৃদ্ধিতেও সহায়ক হবে এই সরলীকরণ।
নতুন মজুরি আইনে পূর্বের চারটি পৃথক আইন একত্রিত করা হয়েছে। এখানে সিটিসি-র অন্তত ৫০ শতাংশকে ‘বেসিক পে’ হিসেবে ধরা বাধ্যতামূলক। এর ফলে কর্মীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অঙ্ক বাড়বে। অবসরের পর হাতে পাওয়া রাশিও বাড়বে। তবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়া বেতনের অঙ্ক কিছুটা কমতে পারে বলে অর্থনীতিবিদদের মত। উল্লেখযোগ্যভাবে ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করবে কেন্দ্র, যা সমস্ত রাজ্যকে মান্য করতে হবে। সংগঠিত ও অসংগঠিত– উভয় ক্ষেত্রেই এই বিধান কার্যকর হবে।
১৯৪৮ থেকে ১৯৭২ সালের বিভিন্ন আইনকে একত্রিত করে তৈরি হয়েছে সামাজিক সুরক্ষা কোড। প্রথমবার গিগ শ্রমিকদের সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। তাঁদের আর্থিক সুরক্ষা, ইপিএফও, ইপিএস, মাতৃত্বকালীন সুবিধা, গ্র্যাচুইটি এবং কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের নিয়ম স্পষ্ট করা হয়েছে। নতুন বিধানে গ্র্যাচুইটি পাওয়ার ন্যূনতম কাজের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে এক বছর করা হয়েছে– যা বড় পরিবর্তন।
নতুন শিল্প সম্পর্ক আইনে আগের তিনটি আইনকে সংযুক্ত করা হয়েছে। ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন– আগে ১০০ কর্মী থাকলে সরকারি অনুমতি প্রয়োজন হত, এখন সেই সীমা ৩০০ করা হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো অভিযোগ করছে, এতে ছাঁটাইয়ের ক্ষমতা আরও বেড়ে গেল নিয়োগকর্তাদের হাতে।
নতুন নিরাপত্তা কোডে কারখানা, খনি, কৃষিক্ষেত্র ও চুক্তিভিত্তিক শ্রমিকদের জন্য একক নিরাপত্তা নীতি তৈরি হবে। ৪০ বছরের বেশি বয়সি কর্মীদের বিনামূল্যে স্বাস্থ্য পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, মহিলাদের সমবেতন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
কেন্দ্রীয় শ্রমমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবীয় দাবি করেছেন, নতুন কোডে প্রায় ৪০ কোটি শ্রমিককে সামাজিক সুরক্ষার আওতায় আনা হবে। তবে কংগ্রেসসহ বিরোধীরা বলছে, পুরনো আইনগুলিকে নতুন মোড়কে সাজানো ছাড়া প্রকৃত পরিবর্তন হয়নি। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন– রাজ্যগুলি কতটা দ্রুত নিয়ম প্রণয়ন করবে। ইতিমধ্যে বহু রাজ্য নিয়ম তৈরি করলেও পশ্চিমবঙ্গ এখনও কোনওটিই করেনি।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন