সমকালীন প্রতিবেদন : দেশের বিভিন্ন শহরে ধারাবাহিক বিস্ফোরণ ঘটানোর পরিকল্পনা করছিল জইশ-ই-মহম্মদের সঙ্গে যুক্ত তথাকথিত ‘হোয়াইট কলার’ জঙ্গিগোষ্ঠী– এমনই তথ্য উঠে এসেছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার (এনআইএ) হাতে। তদন্ত সূত্রে জানা যাচ্ছে, ২০২৩ সালেই এই ছকের গোড়াপত্তন হয়েছিল। ধৃত চিকিৎসকদের জেরা করে জানা গিয়েছে, গত দু’বছর ধরে নিখুঁতভাবে বিস্ফোরক সংগ্রহ, অর্থ জোগাড় এবং বোমা তৈরির কাজ এগিয়েছিল পরপর।
দিল্লিতে লালকেল্লার কাছে আই২০ গাড়িতে হওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৩ জন। সেই গাড়িতেই আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল চিকিৎসক উমর মহম্মদ। তার অন্যতম সহযোগী মুজাম্মিল শাকিলকে গ্রেপ্তার করে জেরা করতেই সামনে আসে বিস্ফোরণের নেপথ্যের দীর্ঘ প্রস্তুতি। এনআইএ–র একাধিক সূত্রের দাবি, বিগত দু’বছরে বিস্ফোরক, রিমোট ডিভাইস, ইলেকট্রনিক সরঞ্জাম– ধাপে ধাপে সবই সংগ্রহ করেছিল অভিযুক্তরা। বোমা তৈরির জন্য সারের রাসায়নিক প্রক্রিয়াজাতকরণের দায়িত্বে ছিল উমর, আর ইউরিয়া ও অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট জোগাড় করত শাকিল।
তদন্তকারী সংস্থার সূত্রে খবর, হরিয়ানার নুহ ও গুরুগ্রাম থেকে ৩ লক্ষ টাকায় ১৬ কুইন্টাল এনপিকে সার কেনা হয়। পাশাপাশি ফরিদাবাদের বাজার থেকে কেনা হয় প্রয়োজনীয় ইলেকট্রনিক উপকরণ। বোমা তৈরির রাসায়নিকগুলি সংরক্ষণের জন্য আলাদা একটি ফ্রিজও কেনা হয়েছিল। পরে তদন্তে জানা যায়, শাকিল আরও ২৬ কুইন্টাল ইউরিয়া সার সংগ্রহ করেছিল, যার প্রক্রিয়াজাতকরণ করত উমর। যে চারটি মিলে সার পেষাই করা হয়েছিল, সেগুলিও চিহ্নিত করেছে এনআইএ।
আর্থিক তদন্তেও উঠে এসেছে বিস্ফোরণের পরিকল্পনার গভীরতা। এনআইএ সূত্র বলছে, মোট প্রায় ২৬ লক্ষ টাকা তুলে বিস্ফোরকের সরঞ্জাম কেনা হয়েছিল। এর মধ্যে মুজাম্মিল দেয় প্রায় ৫ লক্ষ টাকা, আদিল রাথের ৮ লক্ষ, মুজফ্ফর রাথের ৬ লক্ষ এবং লখনউয়ের শাহীন শাইদ ৫ লক্ষ টাকা। উমর নিজে দিয়েছিল ২ লক্ষ। পুরো অর্থটাই গোষ্ঠীর সদস্যদের মধ্যেই জোগাড় করা হয়েছিল বলে দাবি তদন্তকারীদের।
জেএম–এর ‘হোয়াইট কলার টেরর’ নেটওয়ার্কের শাখা ছড়িয়ে ছিল বিভিন্ন রাজ্যে। দিল্লি বিস্ফোরণের তদন্তে নেমে এনআইএ ইতিমধ্যেই শ্রীনগর–সহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে একাধিক চিকিৎসককে গ্রেপ্তার করেছে– যাঁদের বেশিরভাগই কাশ্মীরের বাসিন্দা। পাশাপাশি ধৃতদের মাধ্যমে উঠে এসেছে বিদেশি যোগও। তদন্তকারীদের দাবি, ওকাসা নামে তেহরিক-এ-তালিবান পাকিস্তানের এক সদস্যের নির্দেশে শাকিল, আদিল ও মুজফ্ফর তুরস্কে গিয়েছিল। তাঁদের পরিকল্পনা ছিল আফগানিস্তানে প্রবেশের।
কিন্তু হ্যান্ডলারদের সহযোগিতা না মেলায় তা ব্যর্থ হয়। ওই ওকাসাই টেলিগ্রামের মাধ্যমে শাকিলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখত। জিজ্ঞাসাবাদের সময় শাকিল জানিয়েছে, সাড়ে ছয় লক্ষ টাকায় একটি একে–৪৭ রাইফেলও কিনেছিল সে। পরে আদিলের লকার থেকে সেই অস্ত্র মিলেছে। তাঁদের হ্যান্ডলার মনসুর ও হাশিম– দু’জনই ইব্রাহিম নামে এক ব্যক্তির অধীনে কাজ করত, এমনটাই দাবি সূত্রের।
ঘটনার পর দেশজুড়ে একাধিক স্থানে তল্লাশি চালাচ্ছে এনআইএ। গ্রেপ্তার হয়েছে একাধিক ষড়যন্ত্রী। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হচ্ছে, চিকিৎসকের পরিচয়ে আড়াল করে বহুদিন ধরে বিস্ফোরণের পরিকল্পনা করছিল জইশের এই ‘হোয়াইট কলার’ নেটওয়ার্ক। দুই বছরের প্রস্তুতি, বিশাল অর্থব্যয় ও বিস্তৃত ভূগর্ভস্থ যোগাযোগ– সব মিলিয়ে সামনে আসছে আধুনিক জঙ্গিবাদের এক নতুন, আরও ভয়ানক চেহারা।








কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন