সমকালীন প্রতিবেদন : দীপাবলির সময়ে যখন সারা দেশ আলোয় সেজে ওঠে, তখন সেই উজ্জ্বলতার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে অযোধ্যা। রাম জন্মভূমির এই পবিত্র শহর প্রতি বছরই দীপোৎসবের মাধ্যমে আলো, বিশ্বাস ও ঐতিহ্যের এক অপূর্ব সংমিশ্রণ তৈরি করে। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। বরং এ বছর উৎসবের আয়োজন আরও বৃহত্তর, আরও জাঁকজমকপূর্ণ।
সরযূ নদীর তীরে জ্বালানো হবে ২৬ লক্ষ মাটির প্রদীপ, যা একসঙ্গে জ্বলে উঠবে অযোধ্যার ৫৬টি ঘাটে। ইতিমধ্যেই চলছে জোরকদমে প্রস্তুতি। নদীর ঘাট থেকে শুরু করে রাম জন্মভূমি মন্দির চত্বর পর্যন্ত— সর্বত্র সাজসজ্জা ও আলোর রঙে মুখরিত অযোধ্যা।
উত্তরপ্রদেশের পর্যটন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৮ ও ১৯ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে এই বছরের দীপোৎসব। অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ থাকবে মিউজিক্যাল ড্রোন ও থ্রি-ডি হলোগ্রাফিক লেজার শো, যা আয়োজন করা হবে ‘ঐতিহ্য ও প্রযুক্তির মেলবন্ধন’-এর ভাবনায়।
পর্যটন ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী জয়বীর সিং জানিয়েছেন, এবারের প্রদর্শনীতে ১১০০টি ড্রোনের মাধ্যমে আকাশে ফুটে উঠবে রামায়ণের বিভিন্ন অধ্যায়— “জয় শ্রী রাম”, “ধনুকধারী ভগবান রাম”, “সঞ্জীবনী পর্বত বহনকারী হনুমান”, “রাম সেতু”, এমনকি “শ্রী রাম জন্মভূমি মন্দির”-এর প্রতিরূপও। থিম রাখা হয়েছে “ত্রেতা যুগ থেকে নব অযোধ্যা”, যা আলোর মাধ্যমে তুলে ধরবে অতীত থেকে বর্তমানের যাত্রাপথ।
গত বছর দীপোৎসবে যেখানে মাত্র ৫০০ ড্রোন উড়েছিল, এ বছর সেই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। সংগীতের তালে, আলোর খেলা আর প্রযুক্তির নিপুণতায় এই প্রদর্শনী হয়ে উঠবে এক অনন্য দৃশ্যাবলি। পর্যটন দফতরের আশা, এ বছরের দীপোৎসবে যোগ দিতে আসবেন দেশ-বিদেশের হাজার হাজার দর্শক, যা অযোধ্যাকে আন্তর্জাতিক পর্যটন মানচিত্রে আরও দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠা করবে।
অযোধ্যার দীপোৎসব শুধু ধর্মীয় নয়, সাংস্কৃতিক উৎসব হিসেবেও এখন স্বীকৃত। প্রদীপের আলোয় রামমন্দির, সীতার রান্নাঘর, কনক ভবন ও অন্যান্য ঐতিহাসিক স্থাপত্য যেন নতুন প্রাণ ফিরে পায়। শহরের নানা প্রান্তে আয়োজন করা হয় রামলীলা— অভিনয়, সংগীত ও নৃত্যের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে রামায়ণের অমর কাহিনি।
পর্যটন বিশেষজ্ঞদের মতে, দীপাবলির সময়ই অযোধ্যা ভ্রমণের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। প্রতিটি ঘাট, প্রতিটি গলি যেন আলোর উৎসবের অংশ হয়ে ওঠে। স্থানীয় ব্যবসায়ী, কারিগর ও শিল্পীরাও এই সময়কে ঘিরে নতুন আশায় বুক বাঁধেন। দীপোৎসবের সাফল্যের হাত ধরে বাড়ছে কর্মসংস্থানের সুযোগও। লাখো প্রদীপের আলোয় যখন আলোকিত হবে সরযূ নদীর তীর, তখন অযোধ্যা হয়ে উঠবে প্রকৃত অর্থে আলোর শহর— ভারতের হৃদয়ে দীপাবলির প্রাণকেন্দ্র।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন