সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলাদেশ স্বাধীনতার পর বিপুল সংখ্যক বাঙালি শরণার্থীকে নাগরিকত্ব দিয়েছিলেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। সেই মানবিক সিদ্ধান্তের বার্তা স্মরণে ইন্দিরা গান্ধীর প্রয়াণ দিবস উপলক্ষে বনগাঁ থেকে পেট্রাপোল সীমান্ত পর্যন্ত মোটরবাইক মিছিলের আয়োজন করল পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস। শনিবারের এই কর্মসূচিতে অংশ নেন রাজ্য বিধানসভার প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান, প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী, উত্তর ২৪ পরগনা (গ্রামীণ) জেলা সভানেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত চট্টোপাধ্যায়-সহ একাধিক জেলা ও ব্লক নেতৃত্ব।
কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, আজ যেখানে বাংলাভাষী নাগরিকদের নাগরিকত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেখানে ইন্দিরা গান্ধীর সময়ে বাঙালিত্ব ছিল গর্বের বিষয়। দলীয় নেতাদের অভিযোগ, বর্তমান কেন্দ্র সরকার বাঙালিদের ভাষা ও পরিচয়কে লক্ষ্য করে বিভাজনের রাজনীতি করছে।
প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা আব্দুল মান্নান বলেন, “মোদী সরকার আজ নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার হুমকি দিচ্ছে, আর রাজ্যের সরকার পুলিশ দিয়ে ভোট লুঠ করছে। একদিকে কেন্দ্রে বিজেপির শাসন, অন্যদিকে রাজ্যে তৃণমূল– দুই দলই গণতন্ত্রকে ধ্বংস করছে। বাংলার মানুষকে এখন এই দুই শক্তির বিরুদ্ধেই ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।” তিনি অভিযোগ করেন, “ভোটের দিনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর ভূমিকাই প্রমাণ করে বিজেপি-তৃণমূলের মধ্যে বোঝাপড়া রয়েছে।”
প্রদেশ কংগ্রেস নেতা অমিতাভ চক্রবর্তী বনগাঁ মহকুমার বিজেপি নেতৃত্বকে একহাত নিয়ে বলেন, “বিজেপি বলছে, মোদীজি মতুয়াদের সব সমস্যা মিটিয়েছেন। তাহলে কেন ঠাকুরবাড়ির নেতারা এখনও ‘হিন্দুত্ব কার্ড’ দেখিয়ে ভোট চাইছেন? কেনই বা বলছেন, অনেকের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে পারে? এতদিন মতুয়া সমাজকে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই করা হয়নি।” তিনি জানান, “৫ নভেম্বর ঠাকুরনগরে মতুয়া সমাজের ডাকা অবস্থান মঞ্চে কংগ্রেসকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং আমরা সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছি।”
উত্তর ২৪ পরগনা (গ্রামীণ) জেলা সভানেত্রী ইন্দ্রানী দত্ত চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এসআইআর প্রক্রিয়া চালু হওয়ার পর থেকে তফসিলি, মতুয়া ও সংখ্যালঘু সমাজের মানুষের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তাঁদের ভয় দূর করতে কংগ্রেস মাঠে নামবে। বনগাঁ, গাইঘাটা, বাগদা, স্বরূপনগর ও ঠাকুরনগরে ক্যাম্প করে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো হবে।”
তিনি আরও ঘোষণা করেন, “৯ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের পরে জেলার বুথলেভেল এজেন্টদের সঙ্গে নিয়ে অভিযোগের তালিকা তৈরি করা হবে। তারপর ২৮ ডিসেম্বর, কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠা দিবসে, সেইসব তথ্য-সহ জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের কাছে ডেপুটেশন দেওয়া হবে।”
সীমান্ত এলাকার রাজনীতিতে এই কর্মসূচিকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। কংগ্রেসের বক্তব্য, নাগরিকত্ব ইস্যু এখন আর শুধু কাগজের বিষয় নয়— এটি বাংলার সম্মান, পরিচয় ও অস্তিত্বের প্রশ্ন। আর সেই লড়াইয়েই এবার কংগ্রেস ফের মাঠে নামল ইন্দিরা গান্ধীর উত্তরাধিকারের বার্তা নিয়ে।
 
 








 
 
 
 
 
 
 
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন