সমকালীন প্রতিবেদন : ছোট ছোট অথচ ভাল অভ্যাস বদলে দিতে পারে আপনার গোটা জীবন। পার্সোনাল হোক বা প্রফেশনাল লাইফ; জীবনচর্যায় কাজে লাগান জাপানি পন্থা 'শুকান'। যা কাজে লাগিয়ে ইতিমধ্যেই জাপানিদের জীবনধারায় আমুল পরিবর্তন এসেছে। সকাল থেকে রাত, 'শুকান'-এর নিয়মে বাঁধা পড়ুন। আর বদলে ফেলুন নিজের জীবন, কিন্তু কিভাবে?
জীবনে ভাল থাকার জন্য জরুরি ভাল অভ্যাস। সেই অভ্যাস গঠনের কথাই বলে ‘শুকান’, যা ব্যক্তি বিশেষের কর্মজগত, সামাজিক জীবনেও গভীর প্রভাব ফেলে। জাপানি শব্দ ‘শু’-এর অর্থ শিক্ষা অথবা অভ্যাস। ‘কান’ হল অভ্যস্ত হয়ে ওঠা। ‘শুকান’ বলতে বোঝায়, ক্রমাগত একই কাজ করার মাধ্যমে অভ্যাস গঠন। জাপানিরা মনে করেন, ব্যক্তিবিশেষের সঠিক অভ্যাস মানবজীবন গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
যেকোনো কর্মক্ষেত্রে অল্প সময়ের মধ্যে নির্ভুল কাজ করার জন্য প্রয়োজন কঠোর অভ্যাসের। কোনও কর্মী কতটা সফলভাবে তা করতে পারছেন, তার উপর নির্ভর করে তার কর্মজগতের সাফল্য। খুঁটিনাটি বিষয়ে জোর দিয়ে, একই কাজ বার বার সম্পাদনের মাধ্যমে একজন কর্মীর ব্যক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধির কথা বলা হয় শুকানে। এই অভ্যাসে একজন কর্মীর প্রতিনিয়ত কাজের উন্নতি হয়। যেমন, জাপানের স্কুলপড়ুয়াদের বাধ্যতামূলকভাবে পরিচ্ছন্নতার পাঠ দেওয়া হয় এবং তা তাদের পালন করতেও হয়। নিয়মিত একই কাজ করার ফলে ছোট থেকে পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস তৈরি হয় শিশুদের মধ্যে।
এবার প্রশ্ন হল, ভারতীয়রা কিভাবে জাপানি পন্থা শুকান-কে নিজেদের জীবনে মেনে চলবেন। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যোগাভ্যাস শরীরকে সুস্থ রাখে। তাই ঘুম থেকে উঠে প্রাণায়াম শুরু করুন। মাঝপথে বন্ধ করলে চলবে না। এভাবে জীবনের সঙ্গে যুক্ত হবে এক ভাল অভ্যাস। যা ব্যক্তির শরীর ভাল রাখবে, মনকে সংযত রাখবে। শরীর-মন ভাল থাকলে তার প্রভাব কর্মজগতেও পড়বে। এক দিনও বাদ না দিয়ে, টানা ৩০ দিন করতে পারলেই দেখা যাবে, তার পর এ নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না। ঘুম থেকে উঠলেই প্রাণায়াম না করলে আর চলছে না।
দৈনন্দিন জীবনে কিছুদিন অন্তর নতুন অভ্যাস তৈরির চেষ্টা করতে হবে। এই যেমন যোগাভ্যাস যখন অভ্যাসে পরিণত হবে তখনই প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে খালিপেটে জল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। এতে শরীরে জমা দূষিত পদার্থ বেরিয়ে যায়। ঘড়ি ধরে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে জল খেতে হবে। তাহলে এটাও দৈনিন্দিন জীবনের একটা অভ্যাস হয়ে উঠবে।
শুধু অভ্যাস করলেই চলবে না, তা লিখেও রাখতে হবে। কোনও অভ্যাসে ইতিবাচক বদলগুলি লিখে রাখলে বা এই নিয়ে মনে সন্তুষ্টি থাকলে অভ্যাস গঠন সহজ হয়ে যায়। যেকোনও যোগাভ্যাস প্রথম দিন খুব বেশি সময় ধরে করলে পরে আর তা করতে ইচ্ছে নাও করতে পারে। তাই ধীরে ধীরে সময়সীমা বাড়ান। কর্মজগৎ হোক, শরীরচর্চা বা পারিবারিক ক্ষেত্র, কাজের গতি ধীরে ধীরে বাড়ানো প্রয়োজন।
ভারতীয় শিশুদের পরিচ্ছন্নতার পাঠ শুরু থেকে দিলে এটা তাদেরও অভ্যাসে পরিণত হয়ে যাবে। তখন স্কুল হোক বা বাড়ি তারা নিজেদের এবং আশপাশ পরিচ্ছন্ন রাখতে শিখে যাবে। ‘শুকান’-এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে জাপানিদের প্রথা, বিশ্বাস, ভাবনা-দর্শন। সঠিক অভ্যাসের গুরুত্ব ভারতীয় দর্শনেও রয়েছে। তাই চেষ্টা করলে ভারতীয়রাও সহজেই শুকানের নিয়মে বাঁধা পড়তে পারেন। তাতে জীবন আরো উন্নত হয়ে উঠতে সময় লাগবে না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন