সমকালীন প্রতিবেদন : ভারত-ভুটান বন্ধুত্বের নতুন অধ্যায় রচনা করতে চলেছে রেল যোগাযোগের সেতু। সোমবার কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে, দুই দেশের মধ্যে গড়ে উঠছে প্রথম রেল সংযোগ ব্যবস্থা। এই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ৮৯ কিলোমিটার দীর্ঘ দুটি আন্তর্জাতিক রেল প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে, যা সম্পূর্ণ হলে ভারত থেকে সরাসরি ট্রেনে ভুটানে যাত্রা করা সম্ভব হবে।
প্রস্তাবিত রেলপথগুলির মধ্যে একটি যাবে পশ্চিমবঙ্গের বানারহাট থেকে ভুটানের সামৎসে পর্যন্ত, অন্যটি সংযুক্ত করবে অসমের কোকরাঝাড় এবং ভুটানের গেলেফুরকে। প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় প্রায় ৪,০৩৩ কোটি টাকা এবং আগামী তিন বছরের মধ্যেই কাজ সম্পন্ন করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের পেছনে রয়েছে দুই দেশের শীর্ষ নেতৃত্বের দীর্ঘদিনের কূটনৈতিক প্রচেষ্টা। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গত বছর ভুটান সফরের সময় এই প্রকল্পের জন্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিলেন। সোমবার নয়াদিল্লিতে ভারত সফরে এসে সেই চুক্তিতে আনুষ্ঠানিক সিলমোহর দেন ভুটানের বিদেশসচিব। এদিনই প্রকল্প সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে।
রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব জানান, “এই দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ভুটানের গুরুত্বপূর্ণ শহর সামৎসে ও গেলেফুর ভারতের সঙ্গে রেলপথে যুক্ত হবে। ভারত ও ভুটান বহুদিনের বাণিজ্যিক অংশীদার। ভুটানের সমস্ত আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম মূলত ভারতের মাধ্যমেই সম্পন্ন হয়। নতুন রেলপথ ভুটানের আর্থিক উন্নয়ন ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে নতুন দিগন্ত খুলে দেবে।”
তিনি আরও বলেন, “এই ৮৯ কিলোমিটার রেলপথ ভুটানকে ভারতের ১,৫০,০০০ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত করবে। বিশেষভাবে পরিকল্পিত হয়েছে গেলেফুর শহর এবং সামৎসের মতো ভুটানের শিল্পকেন্দ্রগুলির সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপন। এর ফলে সেখানকার মানুষেরা গোটা বিশ্বের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হওয়ার সুযোগ পাবেন।”
বিদেশসচিব বিক্রম মিশ্রি এদিন জানান, “এটি দুই দেশের মধ্যে প্রথম রেল সংযোগ প্রকল্প। ভারত ও ভুটান উভয় সরকারের সম্মতিতেই এই সীমান্ত পারাপার রেলপথ বাস্তবায়নের কাজ শুরু হয়েছে। এটি শুধু অবকাঠামোগত উন্নয়নের উদ্যোগ নয়, বরং দুই দেশের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বকে আরও সুদৃঢ় করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।”
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, আগামী তিন বছরের মধ্যে এই প্রকল্প সম্পূর্ণ হলে ভারত ও ভুটানের মধ্যে যাত্রী ও পণ্যবাহী রেল পরিষেবা চালু হবে। এতে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের বাণিজ্য, পর্যটন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময় নতুন গতি পাবে।
এই প্রকল্প কার্যকর হলে উত্তর-পূর্ব ভারত ও পূর্ব হিমালয়ের যোগাযোগ ব্যবস্থার মানোন্নয়ন ঘটবে এবং ভারতের প্রতিবেশী কূটনীতিতেও এটি এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে চিহ্নিত হবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন