সমকালীন প্রতিবেদন : নিজের জীবনের কোন বড় সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেও ভাবছেন লোকে কি বলবে? সমাজকে নিয়ে কি আপনি বেশি ব্যস্ত? কে, কী ভাববে? এই চিন্তাতেই কি আপনি সাহস করে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে ভয় পান? মাত্র পাঁচটা অভ্যাসেই আপনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন এই সামাজিক উদ্বেগ। কি কি? সেগুলো নিয়েই আলোচনা করব আজকের এই প্রতিবেদনে।
মনোবিদ এবং মনোরোগ চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, এমন কিছু মানুষ রয়েছেন, যারা নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে আত্মবিশ্বাসী নন। নিজেদেরকে নিয়ে কনফিডেন্ট নন। বরং প্রতি মুহূর্তেই তাঁরা হীনম্মন্যতায় ভোগেন। ভাবতে থাকেন কে, কী ভাবে তাঁকে বিচার করছেন। বা সর্বসমক্ষে এই কথাটা বলে ভুল করলেন না তো? অনেকে আবার এটাও ভাবেন, তাঁকে তাঁর সামনে দুজন মানুষ ভুল বুঝল না তো? আপনিও যদি সেই তালিকায় পড়ে থাকেন তাহলে বুঝবেন কিভাবে?
ধরুন আপনি নিজের সম্পর্কে খুব নিম্নমানের মূল্যায়ন করছেন। নিজের আচার-আচরণ নিয়ে ভয়ে থাকছেন। এগুলোই মূলত সমস্যার প্রধান লক্ষণ। তাছাড়া যাঁরা এই সমস্যায় আক্রান্ত হন, তাঁরা সব সময়ই ভাবেন, সমাজ বা চারপাশের মানুষ তাঁর থেকে অনেক কিছু চাইছেন। আর তাঁরা সেটা পূরণ করতে পারবেন না। এমনকি কাজের ক্ষেত্রেও সেই এফেক্ট পড়ে। কোনও প্রেজেন্টেশন বা অ্যাসাইনমেন্ট সামলাতে গিয়ে বা আর পাঁচজনের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে ভয় বা উদ্বেগ কাজ করে। এই সমস্যার যদি সমাধান করতে চান তাহলে মানসিকতায় বদল আনতে হবে। যেমন–
প্রস্তুতি : এটা নিশ্চয়ই জানেন চেষ্টার কোনও বিকল্প নেই। তাই বাইরে পাঁচটা লোকের সামনে প্রেজেন্টেশন দিতে হবে বা মিটিং রয়েছে। সেখানে কোন কথা বলবেন না বলবেন, সেগুলো বরং আগে থেকে একবার ঝালিয়ে নিন। বাড়িতেই এক-দু’বার আয়নার সামনে মহড়া দিন। যত ভাল ভাবে বক্তব্য গুছিয়ে নেবেন, ততই বলতে সুবিধা হবে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো একটা খাতায় লিখে রাখুন, পয়েন্ট করে। যাতে বলার সময় সহজ হয়ে যায়।
আলাপচারিতা : আগে নিজেকে সহজ করুন। সামাজিক উদ্বেগের কারণে অনেকেই সহকর্মী বা বাইরের কারোর সঙ্গে ঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না। মনে হয়, যা বলবেন, সেটা নিয়ে অন্যে কী ভাববে। সে কারণেই কর্মক্ষেত্রেও লোকজনকে এড়িয়ে চলেন অনেকে। তবে বাড়তি কথা না বলেও, অন্যের কুশল সংবাদ নেওয়া যায়। কথাবার্তা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। সেক্ষেত্রে ছোটখাটো আলোচনায় অংশ নিতে পারেন। কথা বলার অভ্যাস কিন্তু সম্পর্ক সহজ করতে এবং জড়তা কাটাতে সাহায্য করে। তাই সেই চেষ্টা করে দেখতে পারেন আপনি।
বেশি ভাবা বন্ধ করুন : ওভার থিঙ্কিং কমান। লোকে কী ভাববে, লোকে কী বলবে, এমন ভাবনা থেকেই মনে ভয় এবং উদ্বেগ তৈরি হয়। একইসঙ্গে নেতিবাচক ভাবনা বাদ দেওয়ার চেষ্টা করুন। নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখা ভাল। কাজটা কী ভাবে করতে পারেন, তাতে মন দিন। লাভ হবে। ফল নিয়ে আগে থেকে ভেবে উদ্বেগ বাড়ানো অর্থহীন।
সাহায্য : এই সমস্যা কাটিয়ে ওঠার জন্য কোনও সহকর্মী এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাহায্য নিতে পারেন। এমনকি চেনা পরিচিত বিশ্বস্ত কোন মানুষের সাহায্যও নিতে পারেন আপনি। কাজের জায়গায় আত্মবিশ্বাসের অভাব হলে, যাঁরা তিরস্কার না করে পাশে থাকবেন এমন মানুষের সান্নিধ্য বেছে নিন। তাঁদের কাছাকাছি থাকুন। 'পজিটিভ' মাইন্ডসেট' ও অন্যের অনুপ্রেরণা আপনাকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।
প্রাণায়াম ও যোগা : এটা কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা পয়েন্ট। জেনে রাখুন, নিয়মিত প্রাণায়ামের অভ্যাস মন শান্ত রাখতে সাহায্য করে। ঠান্ডা মাথায় কাজ করার ক্ষমতা বাড়ায়। শরীরচর্চা এবং প্রাণায়াম মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্যেও খুব জরুরি।
নিয়মিত এগুলো অভ্যাসে রাখলে সামাজিক উদ্বেগ কাটিয়ে ওঠা আপনার জন্য কিছুটা হলেও সহজ হবে। তবে, সামাজিক উদ্বেগ যদি শরীরকে অবসন্ন করে তোলে। যদি সমস্যা বাড়ে, সেক্ষেত্রে ফেলে না রেখে অবশ্যই মনোবিদ বা মনোরোগ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন