Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ৫ আগস্ট, ২০২৫

ওভালে দুরন্ত জয়ের মাধ্যমে নিজেদের মেলে ধরল ভারত

 

Stunning-victory-at-Oval

সমকালীন প্রতিবেদন : ইংল্যান্ডের মাটিতে এক সাহসী অভিযানে পা রেখেছিল এক নবগঠিত ভারতীয় দল। কোহলি-রোহিতহীন সেই স্কোয়াডের নেতৃত্বে ছিলেন টেস্ট ক্রিকেটে অভিষিক্ত অধিনায়ক শুভমান গিল। চারদিক থেকে উঠেছিল প্রশ্ন—এই তরুণ দল কি সত্যিই স্টোকসদের ঘরের মাঠে টিকে থাকতে পারবে? শেষ পর্যন্ত সিরিজ ২-২ ব্যবধানে ড্র করেই সমস্ত সন্দেহের জবাব দিল গিলের ভারত। ওভালে দুরন্ত জয়ের মাধ্যমে নিজেদের মেলে ধরল তারা। জয় না এলেও, পারফরম্যান্স এবং মানসিকতায় স্পষ্ট—এই দল লড়াই করতে জানে, এবং ঘুরে দাঁড়াতেও।

রোহিত কোহলিদের অনুপস্থিতি এবং গৌতম গম্ভীরকে নিয়ে বিতর্কের আবহে শুভমান গিলকে নেতৃত্বের দায়িত্ব দেওয়া হয়। গিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তরুণ হলেও, এই সিরিজ প্রমাণ করে দিল—নেতৃত্বের চাপ তাঁকে ভেঙে দেয়নি, বরং উলটে তাঁর ব্যাট থেকে বেরিয়ে এসেছে রানের স্রোত। ৭৫৪ রান করে গিল এক টেস্ট সিরিজে সর্বাধিক রানের নজির গড়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক হিসেবে। 

বর্ডার-গাভাসকর ট্রফিতে তাঁর ফর্ম নিয়ে প্রশ্ন ছিল, কিন্তু ইংল্যান্ডে এসে নিজেকে নতুন করে চিনিয়েছেন। অবশ্যই গিলকে এখনও অনেক কিছু শিখতে হবে—মাঠে আগ্রাসন, ফিল্ডিং সাজানো, বোলিং পরিবর্তনের সিদ্ধান্তে সময়োচিততা—এই জায়গাগুলিতে এখনও পরিণত হতে হবে তাঁকে। তবে একটা কথা স্পষ্ট, দলটা ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে “শুভমান গিলের ভারত”।

এবারের ইংল্যান্ড সফরে জশপ্রীত বুমরা তিনটি টেস্ট খেলেছেন—লিডস, লর্ডস এবং ম্যানচেস্টারে। তার মধ্যে উইকেট সংগ্রহ ১৪টি। কিন্তু সিরিজে আরেক পেসার হিসেবে যিনি নিজের ছাপ রেখে গেছেন, তিনি মহম্মদ সিরাজ। সিরিজের সর্বোচ্চ ২৩টি উইকেট তুলে সিরাজ প্রমাণ করে দিয়েছেন, তিনি এখন দলের নির্ভরযোগ্য অস্ত্র। বুমরাকে ছাড়াও দল লড়েছে ওভালে, এজবাস্টনে জিতেছে তাঁর উপস্থিতিতে। 

আশ্চর্যের বিষয়, বুমরা না থাকলেই বরং সিরাজের পারফরম্যান্স আরও তীব্র হয়। এই সিরিজে আকাশ দীপ, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণ, অংশুল কাম্বোজের মতো অনভিজ্ঞ পেসারদের সঙ্গে নিয়ে বোলিং আক্রমণের হাল ধরেছেন তিনি। পেস ইউনিটে সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও ভারত নিজেদের লড়াকু মানসিকতা বজায় রেখেছে। তবে বোলিং কোচ মর্নি মর্কেলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠছেই। তরুণ পেসারদের যথাযথ গাইডলাইন কতটা দেওয়া হচ্ছে, তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

রোহিত, কোহলির অবসর বা অনুপস্থিতির পর এই দলের সিনিয়র মুখ কার্যত একজনই—রবীন্দ্র জাদেজা। ব্যাটে-বলে তাঁর অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ভর করেই বহু ম্যাচে ভারত লড়াইয়ে থেকেছে। সিরিজে তাঁর মোট রান ৫১৬। লর্ডসে হার, তবে ম্যাঞ্চেস্টারে দুরন্ত সেঞ্চুরি করে ম্যাচ ড্র করিয়ে দেন। ওভালেও হাফসেঞ্চুরি করে যান। তাঁর ‘অ্যানিমেশন’-পূর্ণ ব্যাট চালানো মানে শুধু রান নয়, দলের ভারসাম্যও ঠিক রাখা। পাশাপাশি ওয়াশিংটন সুন্দরের আগমনও আশার আলো দেখাচ্ছে ভবিষ্যতের জন্য।

গৌতম গম্ভীরের অধীনে এই ভারতীয় টেস্ট দলের যাত্রা শুরু। তবে দল নির্বাচন নিয়ে তাঁর ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সাই সুদর্শন, করুণ নায়ার, প্রসিদ্ধ কৃষ্ণদের ব্যবহার নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। কুলদীপ যাদবের ক্ষেত্রেও একই কথা। গৌতম গম্ভীর একসময় সাহসী ক্রিকেটার ছিলেন, কিন্তু কোচ হিসেবে তার প্রতিফলন এখনো দৃশ্যমান নয়। 

তাঁর দল গঠনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা আইপিএল-এর ফ্র্যাঞ্চাইজিতে মানানসই হতে পারে, তবে জাতীয় দলের ক্ষেত্রে চাই আরও পরিষ্কার পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি। টেস্ট ক্রিকেটে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে হোমওয়ার্ক এবং আত্মবিশ্বাস—দুটিই প্রয়োজন। ইংল্যান্ড সিরিজে তাঁর এই ঘাটতিগুলো স্পষ্ট। তবে শুভমান গিলদের পারফরম্যান্স অন্তত একটা কথা স্পষ্ট করে দিয়েছে—এই দল মাথা নিচু করে খেলবে না।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন