সমকালীন প্রতিবেদন : ১৮ আগস্ট মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পরিযায়ী শ্রমিকদের সমস্যা নতুন করে আলোচনায় এসেছে। এসইউসিআই এর শ্রমিক সংগঠন এআইইউটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক অশোক দাস এক বিবৃতিতে জানান, তাঁদের সংগঠন বহুদিন ধরেই পরিযায়ী শ্রমিকদের সুরক্ষা, নথিভুক্তকরণ এবং বেঁচে থাকার মতো মজুরি নিশ্চিত করার দাবি জানিয়ে আসছে। সাম্প্রতিক ঘোষণায় সরকারের আংশিক স্বীকৃতি মিললেও মূল সমস্যাগুলি এখনও অমীমাংসিত রয়ে গেছে।
অশোক দাস জানান, মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন রাজ্যে বর্তমানে নথিভুক্ত পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ২২ লক্ষ ৪০ হাজার। কিন্তু বাস্তবে এই সংখ্যা অনেক বেশি। করোনা পরিস্থিতির সময়ই প্রমাণিত হয়েছিল, পশ্চিমবঙ্গে ৪০ লক্ষেরও বেশি শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে ফিরেছিলেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী—কেরালা থেকে ৯ লক্ষ, মহারাষ্ট্র থেকে ৬ লক্ষ ১৭ হাজার এবং তামিলনাড়ু থেকে ৬ লক্ষ ১২ হাজার শ্রমিক ফিরেছিলেন।
এছাড়াও, কেন্দ্র সরকারের ই-শ্রম পোর্টাল অনুসারে ২০২৫ সালের ১১ আগস্ট পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে নথিভুক্ত অসংগঠিত শ্রমিকের সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লক্ষ ৮১ হাজার ৪৫৩ জন। এই হিসেবে, সারা দেশে অসংগঠিত সহ পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা ৩ কোটি ৯৮ লক্ষ ৪৩ হাজার ৮২৪ জন। ফলে স্পষ্ট, এখনও বিপুল সংখ্যক পরিযায়ী শ্রমিক নথিভুক্তির বাইরে রয়েছেন।
সরকারি আহ্বান সত্ত্বেও শ্রমিকরা কেন ফিরে আসছেন না, তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন এআইইউটিইউসি নেতা। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে কাজের অনিশ্চয়তা এবং অত্যন্ত কম মজুরি শ্রমিকদের নিরাশ করছে। মাসে ৫ হাজার টাকায় সংসার চালানো সম্ভব নয়, তাই শ্রমিকরা শত অত্যাচার সহ্য করেও ভিনরাজ্যে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন। স্বাধীনতার আগে ও পরে বহু দশক বাইরের রাজ্যের শ্রমিকেরা কাজ করতে আসতেন পশ্চিমবঙ্গে। অথচ এখন পরিস্থিতি উল্টো—এ রাজ্যের শ্রমিকরাই ভিনরাজ্যে কাজের সন্ধানে যাচ্ছেন।
অশোক দাস বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে শ্রমিকদের ভরসা ফেরাতে সরকারকে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ করতে হবে। সংগঠনের তরফে সাত দফা দাবি জানানো হয়েছে। আর সেই দাবিগুলি হল—
১. ভাষা ও ধর্ম নির্বিশেষে যে কোনও ভারতীয় নাগরিক যাতে নিরাপদে অন্য রাজ্যে কাজ করতে পারেন, তার নিশ্চয়তা দিতে হবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে।
২. “ইন্টার স্টেট মাইগ্র্যান্ট ওয়ার্কমেন অ্যাক্ট, ১৯৭৯” অনুযায়ী পরিযায়ী শ্রমিকদের সব সুবিধা দিতে হবে।
৩. নথিভুক্ত ও অনথিভুক্ত সকল শ্রমিকের নাম নথিভুক্ত করে দ্রুত পরিচয়পত্র দিতে হবে এবং তা সব রাজ্যে স্বীকৃত করতে হবে।
৪. যারা পশ্চিমবঙ্গে ফিরে এসেছেন, তাঁদের বাঁচার মতো মজুরিতে অবিলম্বে কাজ দিতে হবে। যতদিন কাজ দেওয়া সম্ভব হবে না, ততদিন অন্তত মাসে ১৫ হাজার টাকা ভাতা দিতে হবে।
৫. পরিযায়ী শ্রমিকদের অন্ত্যোদয় প্রকল্পে রেশন দিতে হবে।
৬. শ্রমিক পরিবারের সদস্যদের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য পরিষেবার দায়িত্ব নিতে হবে রাজ্য সরকারকে।
৭. কোনও অবস্থাতেই শ্রমিকদের নিজ রাজ্যের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া যাবে না।
এআইইউটিইউসি-র বক্তব্যে পরিষ্কার, সরকারের সাম্প্রতিক ঘোষণা সমস্যার একটি আংশিক সমাধান হলেও মূল সংকট অটুট রয়ে গেছে। পরিযায়ী শ্রমিকদের নথিভুক্তি, পরিচয়পত্র প্রদান, ন্যায্য মজুরি ও সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত না হলে শ্রমিকরা ভিনরাজ্যের উপর নির্ভরশীল হয়েই থাকবেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন