সমকালীন প্রতিবেদন : ওড়িশার চাঁদিপুরের ইন্টিগ্রেটেড টেস্ট রেঞ্জ থেকে সফলভাবে পরীক্ষামূলক উৎক্ষেপণ করা হল অগ্নি–৫ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, স্ট্র্যাটেজিক ফোর্সেস কমান্ডের তত্ত্বাবধানে এই উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হয়েছে এবং সমস্ত প্রযুক্তিগত ও কার্যকরী মানদণ্ড সফলভাবে যাচাই করা হয়েছে। প্রায় ৫,০০০ কিমি পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ভারতের পারমাণবিক প্রতিরোধ ক্ষমতার অন্যতম প্রধান স্তম্ভ হিসেবে বিবেচিত। এর আওতায় গোটা এশিয়া, উত্তর চিন এমনকি ইউরোপের কিছু অংশও চলে আসে।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, সাম্প্রতিক সীমান্ত উত্তেজনার প্রেক্ষিতে এই উৎক্ষেপণ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। পাকিস্তানের সঙ্গে সীমান্তে টানাপোড়েন এবং চিনের বাড়তে থাকা আগ্রাসী কৌশলকে সামনে রেখে এই পরীক্ষার মাধ্যমে বার্তা স্পষ্ট— ভারতের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় কোনও শিথিলতা নেই। এর আগে গত বছর মার্চ মাসে অগ্নি–৫-এর শেষ পরীক্ষা হয়েছিল।
অগ্নি–৫ ক্ষেপণাস্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল– এটি মধ্যপাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, এর পাল্লা সর্বোচ্চ ৫,০০০ কিমি, এটি পারমাণবিক ওয়ারহেড বহনে সক্ষম, মোবাইল লঞ্চার ও চাঁদিপুর টেস্ট রেঞ্জ থেকে এটিকে উৎক্ষেপণ করা হয়, উন্নত গাইডেন্স সিস্টেমে উচ্চমাত্রার নির্ভুলভাবে আঘাত হানতে সক্ষম এটি, তিন ধাপের সলিড-ফুয়েল রকেট, দ্রুত মোতায়েনযোগ্য প্রপালশন সিস্টেম রয়েছে, এশিয়ার প্রায় পুরো অঞ্চল, উত্তর চিন, ইউরোপের কিছু অংশ এর কভারেজ এরিয়ার মধ্যে থাকছে।
অগ্নি সিরিজের মধ্যে অগ্নি–১ থেকে অগ্নি–৪ ইতিমধ্যেই সেনাবাহিনীতে মোতায়েন রয়েছে। অগ্নি–১-এর পাল্লা ৭০০–৯০০ কিমি, অগ্নি–৪ পৌঁছে যায় প্রায় ৩,৫০০ কিমি পর্যন্ত। এছাড়া পৃথ্বী–২ এবং অগ্নি–১-এরও সম্প্রতি সফল পরীক্ষা করা হয়েছে। পৃথ্বী–২-এর পাল্লা ৩৫০ কিমি, আর ‘প্রলয়’ নামের নতুন ট্যাকটিকাল ক্ষেপণাস্ত্র ১,০০০ কেজি পর্যন্ত প্রচলিত ওয়ারহেড বহনে সক্ষম।
অগ্নি–৫-এর এই উৎক্ষেপণ এমন সময়ে হল যখন শীঘ্রই চিন সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং এসসিও সম্মেলনে ভারত–চিন–রাশিয়ার বৈঠক ঘিরে কূটনৈতিক গুরুত্ব বেড়েছে। এর আগে দিল্লি সফর করেছেন চিনের বিদেশমন্ত্রী ওয়াং ই। সীমান্ত উত্তেজনা ও গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষের পর দুই দেশ নিজেদের সম্পর্ক পুনর্গঠনের চেষ্টা করছে। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, মার্কিন অর্থনৈতিক চাপও ভারত–চিনকে আপাতত কাছে আসতে সাহায্য করছে।
তবে অগ্নি–৫ উৎক্ষেপণের কৌশলগত বার্তা স্পষ্ট— পাকিস্তান নয়, চিনও ভারতের প্রতিরক্ষা কৌশলের সরাসরি আওতায়। পাকিস্তানের অস্ত্রভাণ্ডারের বড় অংশ যেখানে আসে চিন থেকে, সেখানে এসসিও বৈঠকের ঠিক আগে এই ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ প্রতিদ্বন্দ্বী দু’দেশকেই সতর্ক করল বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন