সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতের জয়ে দুই আকাশ মিলেমিশে গেলেন এজবাস্টনের আকাশে। একদিকে মাথার উপর ঘন মেঘ, অন্যদিকে বল হাতে তরুণ পেসার আকাশদীপ। বার্মিংহ্যামে প্রথম টেস্ট জয়ে ভারতীয় দলের নায়ক হয়ে উঠলেন এই তরুণ পেসার। তাঁর বিধ্বংসী বোলিংয়ে ভেঙে গেল ইংল্যান্ডের এক সময় অজেয় মনে হওয়া দুর্গ—এজবাস্টন।
ম্যাচের পঞ্চম দিন শুরুই হয়েছিল দেরিতে। এক ঘণ্টা ৪০ মিনিট পরে খেলা শুরুর পরেই আকাশদীপ ভারতকে এনে দেন প্রথম সাফল্য। চতুর্থ ওভারেই ফিরিয়ে দেন ইংল্যান্ডের ব্যাটিং স্তম্ভ অলি পোপকে। কিছুক্ষণ পরেই ফেরান হ্যারি ব্রুককে। দ্রুত দুটি উইকেট তুলে নিয়ে চাপ বাড়িয়ে দেন প্রতিপক্ষের উপর।
তবে এরপর প্রতিরোধ গড়ে তোলেন ইংল্যান্ড অধিনায়ক বেন স্টোকস ও উইকেটরক্ষক জেমি স্মিথ। তাঁরা 'বাজবল' ভুলে গিয়ে ক্লাসিক টেস্ট ব্যাটিংয়ে মন দেন। ৭০ রানের জুটিতে ভারতের চিন্তা বাড়তে থাকে। শুভমন গিলের রক্ষণাত্মক ফিল্ডিং সাজানো, স্পিনারদের উপর অতিরিক্ত ভরসা—সবই প্রশ্নের মুখে পড়ে।
ঠিক সেই সময়, মধ্যাহ্নভোজের ঠিক আগে ভারতীয় দলকে স্বস্তি দেন অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর। তাঁর বলে মনোযোগ হারিয়ে স্টোকস এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরে যান। সেই উইকেট ছিল ভারতের জয়ের টার্নিং পয়েন্ট। এরপর আবার মঞ্চে আবির্ভাব আকাশদীপের। আগ্রাসী হয়ে উঠেছিলেন জেমি স্মিথ। আকাশের একটি ওভারে দু’টি ছয় হাঁকিয়েও আত্মবিশ্বাসে ভরপুর ছিলেন স্মিথ।
কিন্তু তৃতীয়বার শর্ট বল মারতে গিয়ে ফাঁদে পড়েন। স্লোয়ার বল বুঝতে না পেরে তুলে মারতে যান, বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ ধরেন ওয়াশিংটন। স্মিথের বিদায়ে কার্যত ভেঙে পড়ে ইংল্যান্ডের শেষ ভরসাও। যদিও টেলএন্ডাররা কিছুটা সময় কাটিয়ে দেন, তবু ভারতের জয় আর আটকায়নি। জয় এল ৩৩৬ রানের বিশাল ব্যবধানে। সিরিজে সমতা ফেরাল ভারত।
আকাশদীপের এই পারফরম্যান্স তাঁকে লর্ডস টেস্টের জন্য পাকা জায়গা করে দিল বলেই মনে করছে ক্রিকেটমহল। প্রথম ইনিংসে চার উইকেট ও দ্বিতীয় ইনিংসে গুরুত্বপূর্ণ তিনটি উইকেট তুলে নিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি শুধু প্রতিভাবানই নন, ধৈর্য ও পরিকল্পনার সঙ্গেও বল করতে জানেন।
বিরাট কোহলি সমাজমাধ্যমে প্রশংসায় ভরিয়ে দেন আকাশদীপকে। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও বলেন, “আকাশদীপ এবং সিরাজ দুর্দান্ত বোলিং করেছে। ভারতীয় দলের বোলিং এখন ইংল্যান্ডের থেকে অনেক শক্তিশালী দেখাচ্ছে।” বুমরার অনুপস্থিতিতে যেকোনও ভারতীয় পেসার এমন আধিপত্য বিস্তার করতে পারেন, তা সত্যিই বড় প্রাপ্তি। আকাশদীপ এখন শুধু দলের অন্যতম অস্ত্র নন, ভারতের নতুন পেস সেনার উদীয়মান মুখ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন