সমকালীন প্রতিবেদন : দেশের পুরনো ও জটিল শ্রম আইনগুলিকে সরলীকরণের যুক্তি দেখিয়ে ২০২০ সালে কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকার যে চারটি নতুন শ্রম কোড প্রস্তাব করে, তা ঘিরে তৈরি হয়েছে চরম বিতর্ক ও বিক্ষোভ। কেন্দ্র দাবি করেছে, ৪৪টি পুরনো শ্রম আইনকে একত্রিত করে শ্রমজগতে স্বচ্ছতা ও সমতা আনার লক্ষ্যেই এই উদ্যোগ। অন্যদিকে, শ্রমিক সংগঠনগুলির অভিযোগ—এই আইন শ্রমিকদের স্বার্থবিরোধী এবং মালিক পক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেবে।
নতুন শ্রম কোড অনুযায়ী, দেশের যেকোনও প্রান্তেই শ্রমিকদের বেতন ও অন্যান্য শ্রমিক-সুবিধা হবে অভিন্ন। ‘কোড অন ওয়েজেস’-এর আওতায় সব কর্মীর জন্য নির্দিষ্ট বেসিক বেতন নিশ্চিত করা হবে। এছাড়া রয়েছে ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস কোড’, যার মাধ্যমে ধর্মঘট ডাকার উপর কড়া বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। কর্মীদের ধর্মঘটে যেতে হলে অন্তত ৬০ দিন আগে নোটিস দিতে হবে।
‘অক্যুপেশনাল সেফটি, হেলথ অ্যান্ড ওয়ার্কিং কন্ডিশন কোড’-এ কাজের সময় বাড়িয়ে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কর্মীরা দৈনিক ৯ থেকে ১২ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করলে, সপ্তাহে তিন দিন ছুটি পাওয়ার সুযোগ থাকবে। ওভারটাইমের সীমা ত্রৈমাসিকে ৫০ ঘণ্টা থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ঘণ্টা পর্যন্ত করা হতে পারে। ওভারটাইমের পারিশ্রমিক অবশ্য দ্বিগুণ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
নতুন আইনে নারী কর্মীরা নাইট শিফটে কাজ করতে পারবেন, আর পাঁচ ঘণ্টা টানা কাজের পর ৩০ মিনিটের বিশ্রাম বাধ্যতামূলক। এছাড়া, কর্মী ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে দুই দিনের মধ্যে প্রাপ্য পরিশোধের নির্দেশও রয়েছে।
তবে এসবের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আপত্তি উঠছে ট্রেড ইউনিয়নের ক্ষমতা খর্ব করা, শ্রমিক ছাঁটাইয়ে সহজতা আনা, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাড়ানো এবং স্থায়ী চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে। শ্রমিকদের মতে, এই নতুন আইন মালিক পক্ষকে বাড়তি সুবিধা দেবে এবং শ্রমজীবী মানুষের সামাজিক সুরক্ষা সঙ্কুচিত করবে। এর ফলে ‘বেসরকারিকরণ’ এবং ‘নিশ্চিত কর্মসংস্থানের অভাব’ আরও চেপে বসবে বলেই আশঙ্কা তাঁদের।
এই আইনের এখনও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন হয়নি। এখনও পর্যন্ত ২৩টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল এই আইনের খসড়া গাইডলাইন তৈরি করলেও, পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্য এই আইন কার্যকর করার বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান নিয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলির দাবি, এই আইন অবিলম্বে বাতিল করতে হবে। ইতিমধ্যেই ধর্মঘট, মিছিল ও নানা প্রতিবাদ কর্মসূচির মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তাঁদের মতে, উন্নয়নের নামে এই শ্রম কোড শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত করে তুলবে।
এই শ্রম কোড শ্রমিক বিরোধী ইউনিয়ন বলে কিছু থাকবে না। মালিক দের সাহায্য করবে।মোদি যা করছে ভূল ।
উত্তরমুছুন