Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ২ জুলাই, ২০২৫

ভারত-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচে কোটি কোটি টাকার মুনাফা

  

India-Pakistan-cricket-match

সমকালীন প্রতিবেদন : ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ বন্ধ প্রায় এক দশকের বেশি সময়। এই দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েনের প্রভাব পড়েছে ক্রিকেট মাঠেও। এখন তাদের দ্বৈরথ দেখা যায় কেবলমাত্র আইসিসি বা এশিয়া কাপের মঞ্চে। অথচ এই ম্যাচগুলো ঘিরেই কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য হয়, যা সরাসরি প্রভাব ফেলে দুই দেশের ক্রিকেট বোর্ড, সম্প্রচারকারী সংস্থা এবং প্রাক্তন ক্রিকেটারদের উপার্জনে।

আইসিসি টুর্নামেন্ট মানেই রোহিত বনাম বাবর, বা কোহলি বনাম শাহীনের দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষা। আয়োজকরা সচরাচর ভারত ও পাকিস্তানকে একই গ্রুপে রাখার প্রবণতা দেখান। এর মূল কারণ আর্থিক মুনাফা। কারণ একটাই—ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ মানেই টেলিভিশন রেটিংয়ের শিখরে ওঠা, বিজ্ঞাপনদাতাদের হুড়োহুড়ি, স্টেডিয়ামের টিকিট মুহূর্তে বিক্রি এবং সামাজিক মাধ্যমে বিপুল আলোড়ন। কিন্তু যদি ভবিষ্যতে আইসিসি টুর্নামেন্টেও এই দুই দল মুখোমুখি না হয়, তবে এই উত্তেজনাপূর্ণ দ্বৈরথ একপ্রকার হারিয়ে যাবে। 

এমন আশঙ্কার মাঝেই বিসিসিআই আইসিসিকে চিঠি লিখে দুই দলকে আলাদা গ্রুপে রাখার আবেদন জানিয়েছে—যার তাৎপর্য, আয়োজকদের আর্থিক পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা। ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি-র হিসাব অনুযায়ী, গত ২০ বছরে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে আয় হয়েছে আনুমানিক ১০ হাজার কোটি টাকা। 

শুধুমাত্র একটি ম্যাচ থেকেই কয়েকশো কোটি টাকার বিজ্ঞাপন আসে। ভারত-পাক ম্যাচ চলাকালীন ১০ সেকেন্ডের বিজ্ঞাপন স্পট বিক্রি হয় প্রায় ২০–৩০ লক্ষ টাকায়, যা সাধারণ ম্যাচের তুলনায় তিন থেকে চারগুণ বেশি। এছাড়া স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্ম, ইউটিউব চ্যানেল, জার্সি, মার্চেন্ডাইজ, এবং মাঠভর্তি দর্শকের বিক্রি - সব মিলিয়ে এই দ্বৈরথ একটি ‘বিনোদন-শিল্পে পরিণত’ হয়েছে। অর্থাৎ, এই একটি ম্যাচ আয় করতে পারে একাধিক সিরিজের সমপরিমাণ।

এদিকে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কড়া অবস্থানের ফলে ‘FanCode’ অ্যাপে পাকিস্তান সুপার লিগ সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায়। ভারতে বন্ধ হয় শোয়েব আখতার, বাসিত আলি, রশিদ লতিফদের ইউটিউব চ্যানেল। উল্লেখ্য, পাকিস্তানের এই প্রাক্তন তারকারা ইউটিউব ও স্পনসরশিপের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা উপার্জন করতেন মূলত ভারতের দর্শকদের ভরসায়। 

পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেট বোর্ড প্রধান রামিজ রাজা একবার স্পষ্ট করে বলেন, "আইসিসির মোট লাভের ৯০ শতাংশ আসে ভারত থেকে। যদি ভারত সিদ্ধান্ত নেয় তারা আর কোনওরকম আর্থিক সংযোগ রাখবে না, তাহলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড মুখ থুবড়ে পড়বে।" অর্থাৎ, পাকিস্তান ক্রিকেট কার্যত ভারতনির্ভর। 

ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে ক্রিকেটীয় সম্পর্ক শুধুই ‘খেলার দ্বৈরথ’ নয়, এটি দুই দেশের আর্থিক সম্পর্কেরও এক বড় প্রতিচ্ছবি। রাজনৈতিক কারণে যদি এই ম্যাচগুলো একেবারেই বন্ধ হয়ে যায়, তবে শুধু আবেগ নয়, আরও অনেক কিছুর—বিশেষ করে হাজার হাজার কোটি টাকার—ক্ষয়ক্ষতি হবে। এই বাস্তবতাই প্রমাণ করে, ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ কেবল ক্রিকেট নয়—এ এক জটিল আর্থ-রাজনৈতিক সাম্যাবস্থার মঞ্চ।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন