সমকালীন প্রতিবেদন : ঋষভ পন্থ—এই নামটাই যেন ক্রিকেটীয় সাহসিকতার প্রতিশব্দ। যে ব্যাটার নিজস্ব স্টাইলে প্রতিটি বলের উত্তর খোঁজেন সাহস, উদ্ভাবনী শক্তি আর খোলা হাতে খেলার মানসিকতায়, তাঁর কাছে প্রচলিত ক্রিকেট ব্যাকরণের কোনও স্থায়ী স্থান নেই। শনিবার এজবাস্টনের সবুজ গালিচায় সেই 'অন্যধরনের' ক্রিকেটেরই এক অনবদ্য, রসালো ও মজার মুহূর্তের সাক্ষী থাকল হাজার হাজার দর্শক।
ভারত-ইংল্যান্ড টেস্টের চতুর্থ দিনে, ইনিংসের ৩০তম ওভারে কেএল রাহুল আউট হয়ে প্যাভিলিয়নের পথে হাঁটলে, ক্রিজে আসেন ঋষভ পন্থ। বোলার তখন ইংল্যান্ডের তরুণ গতিময় পেসার জশ টাঙ্গ। সেই ওভারেই তৃতীয় ও চতুর্থ বলে পন্থ যথাক্রমে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে বুঝিয়ে দেন, তিনি কেবল জায়গা পূরণ করতে আসেননি—তিনি এসেছেন ম্যাচ ঘুরিয়ে দিতে, জমিয়ে দিতে রণাঙ্গন।
এর ঠিক কিছু সময় পরেই ঘটে সেই নজিরবিহীন ঘটনা। ওভারের একটি শর্ট বলকে মিডওয়েকে পাঠাতে গিয়ে এত জোরে ব্যাট চালান পন্থ, যে ব্যাট ছিটকে গিয়ে উড়ে যায় স্কোয়ার লেগ অঞ্চলের দিকে। বল তখন জেমি স্মিথের হাতে থাকলেও, ব্যাট উড়ে গিয়ে প্রায় বাউন্ডারির কাছাকাছি গিয়ে পড়ে। ইংল্যান্ডের এক ফিল্ডার ছুটে গিয়ে ব্যাটটি কুড়িয়ে পন্থকে ফিরিয়ে দেন।
গ্যালারির দর্শকরা হঠাৎ বিস্ময়ের পর ফেটে পড়েন অট্টহাসিতে। কেউ কেউ হাততালি দেন, কেউ আবার মোবাইলে মুহূর্তটি বন্দি করেন। ভারতীয় ডাগআউটে থাকা জসপ্রীত বুমরাও এই দৃশ্য দেখে হাসিতে ফেটে পড়েন। এই ঘটনাটি নিছকই মজার নয়, বরং এর মধ্যে নিহিত রয়েছে পন্থের ব্যাটিং চরিত্রের অন্তর্নিহিত বার্তা—আক্রমণই শেষ কথা। যখন তিনি ব্যাট হাতে নামেন, তখন কিছু অপ্রত্যাশিত ঘটনার অপেক্ষা থেকেই যায়। এদিনও তার অন্যথা হয়নি।
ক্রিকেটীয় পরিসংখ্যানের নিরিখেও দিনটা ছিল পন্থময়। তখন তাঁর রান ছিল ৩১, খেলেছিলেন মাত্র ১৯টি বল। প্রতিটি শটে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ, প্রতিটি স্ট্রাইকে ছিল বোলারদের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার স্পর্ধা। চোট সারিয়ে পন্থ যখন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছেন, তখন থেকেই তাঁর ব্যাটে যেন আরও একপ্রকার পরিণত আক্রমণ ভর করেছে।
শনিবারের ‘উড়ন্ত ব্যাট’ কাণ্ড নিছক একটি ঘটনা নয়—তা একদিকে যেমন বিনোদনের মুহূর্ত তৈরি করে, তেমনি অন্যদিকে পন্থের নির্ভীক ক্রিকেট মনোভাবের প্রমাণও দেয়। এজবাস্টনের সেই বিকেলে ব্যাট উড়েছিল ঠিকই, তবে তা যেন উড়িয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটপ্রেমীদের মনের ক্লান্তি, আর ফিরিয়ে দিয়েছিল ক্রিকেটের সেই পুরনো আনন্দ—যেখানে খেলা শুধু ফলাফলের নয়, তা হয়ে ওঠে এক অনির্দেশ্য নাট্যপ্রবাহ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন