সমকালীন প্রতিবেদন : একধাক্কায় দুর্গাপুজোর অনুদান বাড়ানো হলো ২৫ হাজার টাকা। দুর্গাপুজোকে ঘিরে বড়সড় ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী। বৃহস্পতিবার নেতাজি ইনডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত এক সভা থেকে এদিন তিনি জানিয়ে দেন, রাজ্যের সমস্ত দুর্গাপুজো কমিটি এবং ক্লাবগুলিকে এবারে অনুদান হিসেবে দেওয়া হবে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা করে। যা গতবারের তুলনায় ২৫ হাজার টাকা বেশি।
গত বছর ক্লাবগুলি পেয়েছিল ৮৫ হাজার টাকা করে সরকারি অনুদান। এদিনের ঘোষণা অনুযায়ী, এবার সেই অনুদানের অঙ্ক ছাড়াল ১ লক্ষের গণ্ডি। অনেক ক্লাবেরই আশা ছিল, হয়তো অনুদান পৌঁছবে ১ লক্ষে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী নিজেই দর কষাকষির ঢঙে বলেন— “৮৫? ৯০? ১ লক্ষ?” শেষে নিজেই ঘোষণা করেন, “হবে ১ লক্ষ ১০ হাজার!” এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুজো কমিটির সদস্যরা ছাড়াও রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আধিকারিকরা।
পুজো অনুদানের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী এদিন আরও জানান, অন্যান্য বছরগুলোর মতো এবারও পুজো কমিটিগুলির ফায়ার লাইসেন্স ফি মকুব করা হবে। পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিলেও মিলবে বিশেষ ছাড়। মুখ্যমন্ত্রী এদিন আবারও জোর দিয়ে বলেন, “দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়। এটি বাংলার সংস্কৃতি, আবেগ এবং অর্থনীতির অঙ্গ। এই উৎসবকে ঘিরে রাজ্যে শিল্প ও বাণিজ্যে অন্তত ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবিকা নির্ভর করে এই উৎসবের উপর।”
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যের ক্লাবগুলিকে অনুদান দেওয়া শুরু হয়। প্রথমদিকে অনুদানের অঙ্ক ছিল ২৫ হাজার টাকা। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তা বেড়ে ২০২০ সালে পৌঁছয় ৫০ হাজারে। ২০২২ ও ২০২৩ সালে অনুদানের পরিমাণ হয় ৮৫ হাজার টাকা। এবারে তা লাফিয়ে পৌঁছল ১ লক্ষ ১০ হাজারে।
অনেকে মনে করেন, এই অনুদানের ফলে একদিকে যেমন পুজোর সময় চাঁদার জুলুম অনেকটাই কমেছে, তেমনই বিভিন্ন ক্লাব নিজেদের থিম ভিত্তিক পুজোর পরিকল্পনায় বেশি করে মন দিতে পেরেছে। তারই ফলশ্রুতি হিসেবে ২০২১ সালে ইউনেস্কো-র তরফে "ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ" বা 'অমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য'-র স্বীকৃতি পেয়েছে কলকাতার দুর্গাপুজো।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পিছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বলেই অভিযোগ তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের বক্তব্য, আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে ক্লাবগুলিকে পাশে পেতে চেষ্টার অংশ হিসেবেই এই বাড়তি অনুদান। বিজেপি এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলোর অভিযোগ, “গত বছর লোকসভা ভোটের আগে অনুদান বাড়িয়ে ক্লাবগুলিকে পুরস্কার দেওয়া হয়েছিল। এবছর দেওয়া হল উৎসাহ ভাতা। আগামী বছর যাতে এই ক্লাবগুলিই শাসকদলের হয়ে সক্রিয় ভূমিকা নেয়, সেই লক্ষ্যেই এই ঘোষণা।”
তবে মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, পুজোকে ঘিরে রাজ্যের গ্রামীণ অর্থনীতি যেমন সচল থাকে, তেমনই বাংলার সংস্কৃতির বিকাশও হয়। “অনেকে কোর্টে যায়, বলে কেন অনুদান দেওয়া হচ্ছে? কিন্তু বলে না এই উৎসবকে কেন্দ্র করে কত মানুষের রুটি-রুজি চলে। সংস্কৃতির সঙ্গে রাজ্য সরকার আছে এবং থাকবেই,” বলেন মুখ্যমন্ত্রী। যদিও এদিন মুখ্যমন্ত্রীর এই দুর্গাপুজো অনুদান প্রসঙ্গে রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'পুজোর অনুদান যত ইচ্ছে বাড়ান, পাশাপাশি রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘ ভাতা দিন, লক্ষ লক্ষ শূন্যপদ পূরণ করুন। তাহলেই রাজ্যের মানুষের মঙ্গল হবে।'
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন