জানা গেছে, আকাইপুর পঞ্চায়েতের ২৫টি বুথের মানুষজন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এলাকায় কম করে ৫০ একর জমির ফসল জলের নিচে তলিয়ে গেছে। বহু কাঁচা বাড়ি ইতিমধ্যে আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছে। চরম দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছেন, “এভাবে জল জমে থাকলে দীর্ঘমেয়াদে সংক্রমণের আশঙ্কাও রয়েছে। ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা ঠান্ডা, পেটের রোগে ভুগছে। কিন্তু পর্যাপ্ত ওষুধ বা চিকিৎসার ব্যবস্থাও নেই।”
অবস্থা পরিদর্শনে বুধবার আকাইপুরে যান তৃণমূল সাংসদ পার্থ ভৌমিক, জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী, বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস, মহকুমা শাসক উর্মি দে বিশ্বাস প্রমুখ। এলাকা ঘুরে দেখেন তাঁরা। পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রশাসনের তরফে গরিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে একটি অস্থায়ী ত্রাণশিবির গঠন করা হয়েছে। সেখানে আপাতত প্রায় ২৫০ জনের জন্য চালু হয়েছে কমিউনিটি কিচেন।
তবে ত্রাণের তুলনায় দুর্গত মানুষের সংখ্যা এতটাই বেশি যে চাহিদা মেটানো সম্ভব হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন স্থানীয়রা। খাদ্যসামগ্রী, বিশুদ্ধ পানীয় জল, শুকনো খাবার, ত্রিপল এবং ওষুধের অভাবে চরম সঙ্কটের মুখে পড়েছেন বহু পরিবার। শৌচাগার এবং নলকূপ জলের নিচে চলে যাওয়ায় স্বাভাবিক দৈনন্দিন প্রক্রিয়াও ব্যাহত হচ্ছে।
ত্রাণ পৌঁছানোয় অনিয়মিততা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন এলাকাবাসী। তাঁদের অভিযোগ, শুধুমাত্র একটি কেন্দ্রীয় ত্রাণশিবির চালু হলেও বহু গ্রামে এখনো পর্যন্ত প্রশাসনের কোনও কার্যকর উপস্থিতি নেই। সবচেয়ে বিপর্যস্ত এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে শিয়ালডাঙ্গা, কামদেবপুর, সন্তোষপুর, দ্বারবাসিনী, ছাতনী, পানপাড়া, চামটা, মেঠোপাড়া, মাটিহারা, মনোহরপুর, ব্যাসপুর, হুদা, আইটপাড়া সহ একাধিক গ্রাম।
আকাইপুর আঞ্চলিক তৃণমূল কংগ্রেসের আহ্বায়ক প্রদীপ চ্যাটার্জি জানান, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গরিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কমিউনিটি কিচেন চালু করা সম্ভব হয়েছে। তবে এখনও বহু গ্রামে কোনও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছায়নি। দ্রুত প্রশাসনের উদ্যোগ প্রয়োজন।” এদিকে এলাকার পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিদর্শনে আসা প্রতিনিধিরা।
এই পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীদের একটাই দাবি— দ্রুত ও পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রী, ওষুধ ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হোক। একই সঙ্গে আগামীদিনে যাতে জলনিকাশির উন্নয়ন ঘটে, তারও দাবি উঠছে জোরদারভাবে। প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপেই এই সঙ্কট থেকে মুক্তি মিলতে পারে বলে আশা স্থানীয়দের।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন