Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বুধবার, ৩০ জুলাই, ২০২৫

অনুপ্রবেশকারীদের জাল নথি তৈরির অভিযোগে বাগদায় গ্রেফতার বিজেপি কর্মী

Creating-fake-documents

সমকালীন প্রতিবেদন : উত্তর ২৪ পরগনার বাগদা থানা এলাকার বানেশ্বরপুর গ্রামে অনুপ্রবেশকারীদের নামে জাল ভারতীয় পরিচয়পত্র তৈরির অভিযোগে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতের নাম রাজকুমার বারুই। ধৃত ব্যক্তি এলাকায় অনেক বছর ধরে একটি রকমারি দোকান চালায়। কিন্তু তার আড়ালেই চলছিল অবৈধ নথিপত্র তৈরির গোপন ব্যবসা–এমনই অভিযোগ।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার রাতে রাজকুমারের দোকানে হানা দেয় বাগদা থানার একটি বিশেষ দল। সেখান থেকে উদ্ধার হয় বেশ কিছু জাল আধার কার্ড, ভোটার কার্ড, বেশ কয়েকটি সিল, নথিপত্র তৈরির সফটওয়্যার ও যন্ত্রপাতি। এছাড়াও বেশ কিছু আধা-প্রস্তুত নথি ও খসড়া তালিকাও পাওয়া গেছে, যা থেকে অনুমান করা হচ্ছে এই জালিয়াত চক্র বহুদিন ধরেই সক্রিয় ছিল এবং অনুপ্রবেশকারীদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার কাজ করছিল।

ধৃত রাজকুমারকে বুধবার বনগাঁ মহকুমা আদালতে পেশ করে পুলিশ। বনগাঁ আদালতের সরকারি আইনজীবী সমীর দাস জানান, “এই ঘটনায় শুধু একজন নয়, আরও অনেকে জড়িত থাকতে পারে। ধৃত ব্যক্তি কার নির্দেশে কাজ করছিল, কে কে এই জাল নথিপত্র সংগ্রহ করেছিল, তার খোঁজে তদন্ত শুরু হয়েছে। সেই কারণে ৭ দিনের পুলিশ হেফাজতের আবেদন জানানো হয়েছে।” আদালত পুলিশ হেফাজতের আবেদন মঞ্জুর করেছে।

ঘটনাটি সামনে আসতেই শুরু হয়ে যায় তীব্র রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূল কংগ্রেস দাবি করেছে, ধৃত রাজকুমার বারুই বিজেপি-র সক্রিয় কর্মী এবং দলের ছত্রছায়াতেই এতদিন ধরে এই বেআইনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল। তৃণমূলের বনগাঁ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি বিশ্বজিৎ দাস বলেন, “বিজেপি মুখে বলছে অনুপ্রবেশকারীদের তাড়াবে, কিন্তু ভিতরে ভিতরে নিজের স্বার্থে নাগরিকত্ব পাইয়ে দেওয়ার চক্রান্ত করছে। এটা তার জলজ্যান্ত প্রমাণ। রাজকুমার বারুই সেই চক্রান্তের অংশ।”

তবে এই সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন বিজেপি নেতা স্বপন হাওলাদার। তাঁর বক্তব্য, “ধৃত ব্যক্তি আমাদের দলের কেউ নয়। কেউ যদি অন্যায় করে, তাহলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবেই। বিজেপি কোনওভাবেই জালিয়াতি বা বেআইনি কাজে প্রশ্রয় দেয় না। আমাদের কাছে আগে থেকেই একটা খবর আসছিল যে, ওই ব্যক্তি কোনও অসাধু কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। তাই আমরা তার সঙ্গে কোনওরকম সংসর্গ রাখি নি। বিজেপির কালচার আলাদা। ‌বিজেপির নামে অপবাদ ছড়াচ্ছে তৃণমূল।”

এই ঘটনায় জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ মহলে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রাথমিকভাবে এটি একটি 'ডিপ রুটেড চক্র'-এর অংশ বলে মনে হচ্ছে, যার শিকড় বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে রয়েছে। অনুপ্রবেশকারীদের বেআইনিভাবে পরিচয়পত্র জোগাড় করিয়ে দেশের অভ্যন্তরে থাকার অধিকার পাইয়ে দেওয়া হচ্ছে–এমন অভিযোগ পূর্বে একাধিকবার উঠলেও, এবারের ঘটনাটি পুলিশকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করছে।

একের পর এক ভুয়ো নথিপত্র তৈরি ও অনুপ্রবেশ ঘিরে উদ্বিগ্ন নির্বাচন কমিশন যখন দেশজুড়ে সচেতনতামূলক অভিযান চালাচ্ছে, ঠিক সেই সময় উত্তর ২৪ পরগনার সীমান্ত এলাকায় এই ঘটনা রাজনৈতিক আবহে নতুন করে উত্তাপ ছড়াল। প্রশাসনিক স্তর থেকে রাজনৈতিক মহল–সব জায়গাতেই বিষয়টি নিয়ে চলছে জোর আলোচনা। আগামী দিনে তদন্ত কোন দিকে মোড় নেয় এবং আরও কাদের নাম উঠে আসে, এখন সেটাই দেখার।‌




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন