সমকালীন প্রতিবেদন : কোভিশিল্ড টিকা নিয়ে একসময় নানা প্রশ্ন উঠেছিল—বিশেষত করোনা অতিমারির সময় হৃদরোগে আকস্মিক মৃত্যুর সঙ্গে এর কোনও যোগ রয়েছে কি না, তা নিয়ে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল দেশজুড়ে। তবে এই আশঙ্কা খারিজ করে ভ্যাকসিন নির্মাতা সংস্থা সিরাম ইনস্টিটিউট অফ ইন্ডিয়া স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, কোভিশিল্ড টিকা সম্পূর্ণ নিরাপদ। হার্ট অ্যাটাক বা আকস্মিক মৃত্যুর কারণ কোভিশিল্ড টিকা নয়।
সিরাম তাদের এক্স (পূর্বে টুইটার) হ্যান্ডেলে দেওয়া বিবৃতিতে জানায়, “করোনা টিকা বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা হয়েছে। অতিমারির সময়ে কোটি কোটি ভারতীয় নাগরিকের শরীরে এই টিকা প্রয়োগ করা হয় এবং তা সম্পূর্ণ নিরাপদ।” এই দাবিকে জোরালো ভিত্তি দিয়েছে ভারতীয় চিকিৎসা গবেষণা পরিষদ আইসিএমআর এবং এইমস-এর সাম্প্রতিক গবেষণা। তাঁরা জানিয়েছেন, করোনা টিকা গ্রহণের পর হৃদরোগে মৃত্যুর প্রবণতা বেড়েছে—এমন কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
সিরামের এই বিবৃতি এমন এক সময় এসেছে, যখন কর্নাটকের হাসান জেলায় মাত্র এক মাসে ৫০০-র বেশি মানুষের আকস্মিক মৃত্যু রেকর্ড হয়েছে। এর পরপরই শুরু হয় জল্পনা—এই মৃত্যুগুলির পেছনে টিকার কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে কি না। এই প্রসঙ্গে কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া মন্তব্য করলে, বিষয়টি আরও চাঞ্চল্য তৈরি করে। জবাবে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, “কোভিড টিকা ও হৃদরোগজনিত মৃত্যুর মধ্যে কোনও প্রমাণিত যোগ নেই।”
আইসিএমআর এবং ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ এপিডেমিওলজি-র যৌথ গবেষণায় দেশের ১৯টি রাজ্যের ৪৭টি হাসপাতালে প্রাপ্তবয়স্কদের আকস্মিক মৃত্যুর কারণ বিশ্লেষণ করা হয়। ২০২১ সালের অক্টোবর থেকে ২০২৩ সালের মার্চ পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, টিকা গ্রহণের সঙ্গে মৃত্যুর হারের কোনও প্রত্যক্ষ সম্পর্ক নেই। প্রাথমিক ফলাফলে উঠে এসেছে, হৃদরোগ বা হার্ট অ্যাটাকই বেশিরভাগ মৃত্যুর মূল কারণ। পাশাপাশি কিছু ক্ষেত্রে বংশগত জেনেটিক কারণকেও দায়ী করা হয়েছে।
ভারতের টিকাকরণ কর্মসূচিতে প্রধানত কোভিশিল্ড ও কোভ্যাকসিন ব্যবহার করা হয়েছিল, যার মাধ্যমে ১০০ কোটিরও বেশি মানুষের টিকাদান সম্পন্ন হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, “এই টিকাগুলির উপরে বিস্তৃত গবেষণা হয়েছে এবং এখন পর্যন্ত এগুলি সম্পূর্ণ নিরাপদ বলেই প্রমাণিত।” সরকারের মতে, টিকা সংক্রান্ত ভ্রান্ত ধারণা ও গুজব দূর করা এখন সবচেয়ে জরুরি কাজ, যাতে ভবিষ্যতে আরও স্বাস্থ্য সচেতন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব হয়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন