সমকালীন প্রতিবেদন : ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বলার ‘অপরাধে’ বাংলাদেশি সন্দেহে আটক হলেন গোপালনগরের এক যুবক। যদিও পরে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। তবে এখনও পর্যন্ত পরিবারের সবার সঙ্গে তাঁর ফোনে কথা বলার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এই ঘটনায় এলাকায় চরম উৎকণ্ঠা ছড়িয়েছে। এব্যাপারে যুবকের বাড়ি গিয়ে পরিবারের পাশে দাঁড়ালেন তৃণমূল সাংসদ মমতা ঠাকুর।
আটক যুবকের নাম বিবেক গোস্বামী, বাড়ি গোপালনগর থানার আকাইপুর গ্রামে। তিনি পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক, দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে মুম্বইয়ে নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে যুক্ত। সম্প্রতি মুম্বইয়ে এক অভিযানে তাকে পুলিশ বাংলায় কথা বলার কারণে বাংলাদেশি সন্দেহে আটক করে। পরে ভারতীয় হিসেবে তাঁর সমস্ত নথি যাচাই করার পর পুলিশ তাঁকে ছেড়ে দেয়।
বিবেকের মা সবিতা গোস্বামী জানান, বহু বছর ধরে ছেলে মহারাষ্ট্রে শ্রমিকের কাজ করছে। ভারতীয় হিসেবে সমস্ত নথি তাঁর সঙ্গে রয়েছে। তারপরেও বাংলায় কথা বলায় তাঁকে বাংলাদেশী সন্দেহ করে মহারাষ্ট্র পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে যায়। পরে সমস্ত কাগজপত্র দেখে একদিন পর ছেড়ে দেয়। তবে বৌমা ছাড়া ছেলে কারোর ফোনে যোগাযোগ করতে পারছে না। তাঁদের ধারনা, এব্যাপারে সেখানকার পুলিশ ছেলের উপর চাপ সৃষ্টি করে রেখেছে।
এই পরিস্থিতিতে তাঁদের আশ্বাস দিতে শনিবার আকাইপুরে বিবেকের বাড়িতে পৌঁছান তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ও মতুয়া মহাসংঘের সংঘাধিপতি মমতা ঠাকুর। পরিবারের সঙ্গে কথা বলে মমতা ঠাকুর বলেন, “ভিন রাজ্যে বাংলায় কথা বললেই যদি বাংলাদেশি বলে গ্রেফতার করা হয়, তাহলে এ দেশের কণ্ঠস্বর কোথায়? এটা বাংলা ভাষার ও বাঙালির বিরুদ্ধে অপমান। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ব।”
তিনি জানান, শুধু বিবেক নয়, রাজ্যের বাইরে কাজ করতে যাওয়া একাধিক বাঙালি শ্রমিককে একই অভিযোগে আটক করা হয়েছে। বিবেকের সঙ্গে আরও ৩ বাঙালি যুবককে আটক করেছিল মহারাষ্ট্র পুলিশ। স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের পরিবারের সদস্যরা উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছে। দিল্লিতে মতুয়া মহা সংঘের এক সদস্য মারফত তিনি এই খবর পেয়ে আকাইপুরে এসেছেন বলে জানান।
মমতা ঠাকুর জানিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা যদি অব্যাহত থাকে, তবে মতুয়া মহাসঙ্ঘ ভবিষ্যতে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবে। তিনি বলেন, “বাঙালিদের এইভাবে টার্গেট করা হলে সেটা শুধু প্রশাসনিক অন্যায় নয়, জাতিগত বৈষম্য হিসেবেও দেখা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে তার জবাব দিতেই হবে।”
ঘটনাটিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক তৎপরতা বাড়ছে। রাজ্যের শাসক দল ইতিমধ্যেই কেন্দ্রের অনুপ্রবেশ বিরোধী অভিযানকে ‘বাঙালি বিরোধী’ আখ্যা দিয়েছে। এই প্রেক্ষিতে বিরোধীরা যদিও বলছে, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বজায় রাখতে পদক্ষেপ করাই সরকারের কাজ, কিন্তু এভাবে ভাষার ভিত্তিতে পরিচয় নির্ধারণ করা অমানবিক ও অসাংবিধানিক। এব্যাপারে সঠিক বাংলাদেশীদের চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে ভিন রাজ্যের প্রশাসনকে আরও সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করার দাবি উঠেছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন