সমকালীন প্রতিবেদন : পৃথিবীর কক্ষপথে ১৮ দিনের ঐতিহাসিক অভিযান শেষে মঙ্গলবার ভারতীয় সময় দুপুর ৩টা ১ মিনিটে সফলভাবে পৃথিবীতে ফিরে এলেন ভারতের গর্ব, মহাকাশচারী গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লা। স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন’-এ চড়ে তাঁর সঙ্গে ফিরেছেন আরও তিন নভশ্চর। প্রশান্ত মহাসাগরের সান দিয়াগো উপকূলে ক্যাপসুলটি অবতরণ করতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গোটা দেশ, বিশেষত তাঁর নিজের শহর লখনউ।
স্পেসএক্স ও অ্যাক্সিয়ম স্পেসের যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত ‘অ্যাক্সিয়ম-৪’ মিশনে শুভাংশুর সঙ্গে ছিলেন অভিজ্ঞ মহাকাশচারী এবং মিশন কমান্ডার পেগি হুইটসন, মিশন বিশেষজ্ঞ স্লাওস উজানস্কি-উইজ়নিউস্কি এবং টিবর কাপু। ২৫ জুন ফ্লরিডার কেনেডি স্পেস সেন্টার থেকে যাত্রা শুরু করে তাঁরা আন্তর্জাতিক মহাকাশ কেন্দ্র (ISS)-এ পৌঁছন। এরপর ১৮ দিন মহাকাশে কাটিয়ে সোমবার বিকেলে শুরু হয় তাঁদের পৃথিবীতে ফেরার যাত্রা।
পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশের সময় ক্যাপসুলের গতি ছিল ঘণ্টায় প্রায় ২৮,০০০ কিলোমিটার। তীব্র ঘর্ষণ ও উত্তাপ অতিক্রম করে গতি ধীরে ধীরে কমে আসে ২৪ কিমি/ঘণ্টায়। এরপর একে একে চারটি প্যারাশ্যুট খুলে যায় এবং ধীরে ধীরে নামতে থাকে ড্রাগন ক্যাপসুল। প্রশান্ত মহাসাগরে প্রস্তুত থাকা ‘রিকভারি ভেহিকল’ সঙ্গে সঙ্গেই পৌঁছে যায় অবতরণস্থলে। ক্যাপসুলকে উদ্ধার করে জাহাজে তোলা হয় এবং তার হ্যাচ খুলে একে একে উদ্ধার করা হয় চার নভশ্চরকে। প্রথম বের হন পেগি হুইটসন, এরপর বেরিয়ে আসেন শুভাংশু শুক্লা।
অভিযান শেষে এখন চলছে তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার ধাপ। মহাকাশের মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশ থেকে পৃথিবীর অভ্যস্ত পরিবেশে ফিরে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। তাই চার নভশ্চরকে রাখা হয়েছে সাত দিনের জন্য বিশেষ পর্যবেক্ষণে। এদিকে, ছেলের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত শুভাংশুর বাবা শম্ভুদয়াল শুক্ল ও মা আশা শুক্ল। সংবাদমাধ্যমকে তাঁরা জানান, “ছেলের জন্য আমরা গর্বিত। সে আজ শুধু আমাদের নয়, সারা দেশের অহংকার।”
এই ঐতিহাসিক মুহূর্তে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। তিনি তাঁর এক্স (পূর্বতন টুইটার) হ্যান্ডলে লেখেন, “ঐতিহাসিক অভিযান সেরে পৃথিবীতে ফিরে আসা গ্রুপ ক্যাপ্টেন শুভাংশু শুক্লকে স্বাগত জানাই! ভারতের প্রথম মহাকাশচারী হিসাবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে পা রেখে তিনি অসম্ভব নিষ্ঠা, সাহস এবং উদ্যমের পরিচয় দিয়েছেন। কোটি কোটি স্বপ্নকে অনুপ্রাণিত করেছেন শুভাংশু। এই অভিযান আমাদের নিজস্ব মানব মহাকাশ অভিযান ‘গগনযান’-এর দিকে আরও একটি মাইল ফলক।”
শুভাংশুর এই অভিযানের সাফল্য ভারতের মহাকাশ গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। শুধু বিজ্ঞান নয়, দেশের আগামী প্রজন্মকেও মহাকাশ গবেষণার পথে এগিয়ে যেতে অনুপ্রাণিত করবে এই জয়যাত্রা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন