সমকালীন প্রতিবেদন : স্কুল সার্ভিস কমিশনের নতুন নিয়োগবিধিকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের হওয়া মামলাটি খারিজ করে দিল সুপ্রিম কোর্ট। সোমবার বিচারপতি সঞ্জয় কুমার এবং বিচারপতি সতীশচন্দ্র শর্মার ডিভিশন বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। মামলাকারীদের উদ্দেশে বিচারপতি কুমারের প্রশ্ন, “আপনারা কারা? যোগ্য না অযোগ্য? অযোগ্যদের তো বাদ দেওয়া হয়েছে।” আদালতের পর্যবেক্ষণ, মামলাকারীরা নিয়োগের জন্য নির্বাচিত হননি, তাই তাঁদের দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।
আদালত আরও জানায়, পূর্ববর্তী রায়ে কোথাও বলা হয়নি যে, পুরনো বিধি অনুসারে নিয়োগ করতে হবে। বরং স্পষ্টভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল, “নতুন নিয়োগপ্রক্রিয়া শুরু করতে হবে” এবং এসএসসি নিজের বিধি নির্ধারণের অধিকার রাখে। মামলাটির গ্রহণযোগ্যতা না থাকায়, সেটি প্রত্যাহারের চেষ্টা করা হলে বিচারপতিরা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, অনেকটা শুনানি হয়ে যাওয়ার পর এমন চেষ্টা আদালতের সময় নষ্ট করার শামিল। ফলত, মামলা প্রত্যাহার না করে সরাসরি খারিজ করে দেওয়া হয়।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের এসএসসি নিয়োগ সংক্রান্ত পুরো প্যানেলটি বাতিল করে ২০২৪ সালে রায় দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খন্নার বেঞ্চ। ওই রায়ে বাতিল হয় মোট ২৫,৭৫২ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মীর চাকরি। সেই রায়ে বিচারপতি কুমারও সহমত ছিলেন। রায়ের পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, নতুন নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ও বিধি প্রকাশ করে এসএসসি।
কিন্তু সেই নতুন বিধিতে আপত্তি তোলেন চাকরিপ্রার্থীদের একাংশ। তাঁদের দাবি ছিল, কেন পূর্ব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে ১০ নম্বর অতিরিক্ত দেওয়া হবে? কেন বয়সের অতিরিক্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে? এবং কেন চিহ্নিত ‘অযোগ্য’ প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসার সুযোগ দেওয়া হবে? এই প্রশ্ন তুলে হাই কোর্টের দ্বারস্থ হন ওয়েটিং লিস্টে থাকা সহ বহু চাকরিপ্রার্থী।
কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি সৌমেন সেন এবং বিচারপতি স্মিতা দাসের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, নতুন নিয়োগবিধি (২০২৫) মেনেই হবে পরীক্ষা, তবে আগের নির্দেশ অনুযায়ী, চিহ্নিত ‘অযোগ্য’রা এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবেন না। এই রায়কেই চ্যালেঞ্জ জানিয়ে চাকরিপ্রার্থীরা সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন, কিন্তু সেখানেও মিলল না স্বস্তি। আদালত স্পষ্ট করে জানায়, এসএসসি একটি দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা, নিয়োগ সংক্রান্ত বিধিনির্ধারণের অধিকার তাদেরই আছে।
চাকরিপ্রার্থীদের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টে সওয়াল করেন বর্ষীয়ান আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য ও ফিরদৌস শামিম। অন্যদিকে, এসএসসির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কপিল সিব্বল ও কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। মামলার গ্রহণযোগ্যতা নেই জানার পর, মামলাকারীদের আইনজীবী মামলাটি প্রত্যাহার করার চেষ্টা করলে বিচারপতিরা কড়া প্রতিক্রিয়া দেন। তাঁরা বলেন, এই ধরনের আচরণ “দুর্ভাগ্যজনক” এবং এটি আদালতের সময়ের অপব্যবহার।
আদালতের এই রায়ে স্পষ্ট হয়ে গেল, এসএসসির নিয়োগে নতুন নিয়ম বলবৎ থাকবে। দ্রুত শূন্যপদ পূরণের লক্ষ্যে এই রায় প্রশাসনের পক্ষে সহায়ক হতে পারে। তবে এই পর্বের পরও নিয়োগ নিয়ে জটিলতা একেবারে মিটেছে বলা যাবে না, এমনটাই মনে করছে শিক্ষাক্ষেত্রের বিশ্লেষকরা। তবে সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়ে যথেষ্ট হতাশ চাকরিপ্রার্থীরা। তাঁরা ইতিমধ্যেই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয় নিয়ে ভাবনাচিন্তা শুরু করেছেন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন