সমকালীন প্রতিবেদন : দিঘার প্রথম রথযাত্রার স্পেশাল ভোগ সরাসরি আসবে আপনার হাতে? সেজে উঠছে জগন্নাথের মাসির বাড়ি! দর্শনার্থীদের জন্য থাকছে বিশেষ আয়োজন। প্রসাদের মেন্যু ফিক্সড! কিভাবে পাবেন জগন্নাথদেবের প্রসাদ? থিকথিকে ভিড়েও ভয় থাকবে না প্রাণের। দুর্ঘটনা এড়াতে তারকেশ্বর মডেলের স্ট্র্যাটেজি অ্যাপ্লাই পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশের।
তীর্থ কেন্দ্র হওয়ার পর এবার রথযাত্রা উপলক্ষে নতুন ইতিহাস গড়তে চলেছে দিঘা। তাই জোরকদমে চলছে প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই নবান্নে বৈঠক সেরেছে দিঘার জগন্নাথ দেবের মাসির বাড়ি কমিটি। রথে জগন্নাথ দর্শনে আসা ভক্তদের জন্য জমজমাট আয়োজন করাই তাঁদের মূল লক্ষ্য। আর সেখানে প্রসাদ একটা বড় ফ্যাক্টর। সেক্ষেত্রে জানা দরকার দর্শনার্থীদের জন্য প্রসাদি থালায় এবার কি কি দেওয়া হবে কমিটির তরফে? ভাতের সঙ্গে থাকবে ডাল, সবজি, চাটনি এবং পায়েস। রথের পরের দিন থেকেই অন্ন প্রসাদের ব্যবস্থা থাকবে দর্শনার্থীদের জন্য।
তবে শেষ দিন বেশি ভিড় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ওই দিন প্রায় দশ হাজার মানুষের জন্য অন্ন প্রসাদের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়াও প্রতিদিনই জগন্নাথ দেবকে মিষ্টান্ন-সহ একাধিক ভোগ নিবেদন করা হবে। তাই রথের পরের দিন, অর্থাৎ ২৮ জুন থেকে ৫ জুলাই মানে উল্টো রথ পর্যন্ত প্রতিদিন দুপুরে জগন্নাথ দেবকে যে ভোগ নিবেদন করা হবে, সেই প্রসাদ পরে বিলিয়ে দেওয়া হবে দর্শনার্থীদের মধ্যে। অর্থাৎ ওই সময়কালে কয়েকশো মানুষের জন্য প্রসাদের ব্যবস্থা থাকবে ওই কয়েকদিন।
ফলে এটা একপ্রকার সুখবর তাদের জন্য যারা ওই সময় দীঘায় যাবেন। কিন্তু এত এত মানুষের রান্না করবেন কারা? মাসির বাড়ি মন্দির ট্রাস্টির তরফে জানা গিয়েছে, উল্টো রথ পর্যন্ত মাসির বাড়ির বিশেষ অন্নভোগ তৈরির দায়িত্বে থাকবেন স্থানীয় ১৩ জন ব্রাহ্মণ। তাঁদের নামের তালিকা চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। মোদ্দাকথা আয়োজনে কোনো রকম কোনো ত্রুটি রাখা হচ্ছে না। কারণ হাতে গোনা আর মাত্র কয়েকটা দিন।
আগামী ২৭ জুন, শুক্রবার দিঘার জগন্নাথ মন্দির থেকে এক কিলোমিটার দূরে ‘মাসির বাড়ি’র উদ্দেশে রথযাত্রা শুরু হবে। প্রভু জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার এই রথ টানতে সমবেত হবেন অন্তত দু’লক্ষ ভক্ত এমনটাই আশা করছে জেলা প্রশাসন। ভিড়ের সেই চাপে যাতে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি না হয়, তাই তারকেশ্বর মন্দিরের স্ট্র্যাটেজিকেই অনুসরণ করছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ।
তারকেশ্বরের মতো, দিঘার মন্দির প্রাঙ্গণে ঢোকা ও বেরোনোর পথ আলাদা করে দেওয়া হচ্ছে। মেন গেট দিয়ে ঢুকবেন ভক্তরা, বেরিয়ে যাবেন ৬ ও ৭ নম্বর গেট দিয়ে। তৈরি হচ্ছে বাঁশের ব্যারিকেড, যাতে রশিতে টান দেওয়ার সময় ভিড় ছড়িয়ে না পড়ে। জগন্নাথ মন্দির থেকে মাসির বাড়ি পর্যন্ত পুরো পথেই বসবে ড্রপ গেট, যার ফলে ধাপে ধাপে নিয়ন্ত্রিত হবে রথ টানা।
দিঘার রথযাত্রায় কোনওরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ প্রশাসন। তাই ভক্তদের রথের রশি টানার সময়কে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ অতীতের অভিজ্ঞতায় দেখা গিয়েছে, পদপিষ্ট হওয়ার আশঙ্কা তখনই বেশি থাকে। তাই সেই বুঝেই করা হবে ব্যবস্থা। প্রায় ৩ হাজার পুলিশ কর্মী থাকবেন মোতায়েন। সঙ্গে থাকবেন সিভিক ভলান্টিয়ার ও পুলিশ অফিসাররা।
সবকিছু চুড়ান্ত হয়ে গেছে। মুখ্যমন্ত্রী সহ অন্যান্য ভিআইপিরা দীঘায় পৌঁছে যাবেন ২৬ জুনেই। যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে থাকবে কড়া নজর। ইসকনের বিদেশি ভক্তরাও থাকবেন এই উৎসবে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞে নজরদারির দায়িত্বে থাকবেন রাজ্যের পাঁচ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, পুলক রায়, সুজিত বসু, স্নেহাশিস চক্রবর্তী ও চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে তাঁদের বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, যাতে দীঘার প্রথম রথযাত্রা হয় নিখুঁত ও নির্বিঘ্ন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন