Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ৯ জুন, ২০২৫

স্মার্ট মিটারের বিরুদ্ধে আন্দোলন বনগাঁতেও

 ‌

Against-smart-meters

সমকালীন প্রতিবেদন : বর্তমান সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে স্মার্ট মিটার লাগানোকে কেন্দ্র করে ক্রমশই বিক্ষোভ বাড়ছে। বিদ্যুৎ গ্রাহকদের এক বড় অংশ মনে করছেন, এই মিটার সাধারণ মানুষের ওপর একপ্রকার আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেওয়ার কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। রাজ্যের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি বনগাঁ মহকুমাতেও এই নিয়ে প্রবল ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে।

সোমবার সারা বাংলা বিদ্যুৎ গ্রাহক সমিতি (আ্যাবেকা)‌–র বনগাঁ শাখার উদ্যোগে বনগাঁ মহকুমা বিদ্যুৎ বিভাগের দফতরে এক স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সেইসঙ্গে প্রচুর সংখ্যক গ্রাহক বিদ্যুৎ অফিসে হাজির হয়ে স্মার্ট মিটার লাগানোর বিরুদ্ধে আপত্তিপত্র জমা দেন। এদিন বিদ্যুৎ অফিসের সামনে দীর্ঘ লাইন দেখা যায়—হাতে হাতে আপত্তিপত্র, মুখে ক্ষোভের সুর। তাদের দাবি, "আমরা স্মার্ট মিটার চাই না, বিদ্যুৎ মিটার যেমন আছে, তেমনই থাকুক।"

গ্রাহকদের প্রধান আশঙ্কা কী? এই প্রশ্নের উত্তরে যা জানা গেল, তা হলো–

১/ বিল বেড়ে যাবে : স্মার্ট মিটার লাগানোর পর থেকেই বিলের অঙ্ক বেড়ে যা‌বে বলে আশঙ্কা বহু গ্রাহকের। এর প্রমানও তারা ইতিমধ্যে পেয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন

২/‌ প্রিপেড সিস্টেম : আ্যাবেকা দাবি করছে, ভবিষ্যতে এই মিটারগুলিকে প্রিপেড (পূর্ব অর্থ প্রদান) ব্যবস্থায় রূপান্তর করা হবে। অর্থাৎ টাকা ভরলে তবেই বিদ্যুৎ মিলবে—এতে নিম্নআয়ের মানুষজন সমস্যায় পড়বেন।

৩/ বেসরকারিকরণ আতঙ্ক : বহু গ্রাহকের ধারণা, স্মার্ট মিটার প্রকল্পের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বিদ্যুৎ পরিষেবাকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে।

৪/ ‌কাজ হারানোর ভয় : এই ব্যবস্থা চালু হলে বিদ্যুৎ দপ্তরে মিটার রিডিও নেওয়ার মতো পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত হাজার হাজার কর্মী বেকার হয়ে পড়বেন বলে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

শুধু বনগাঁ নয়, মুর্শিদাবাদ, নদীয়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, মালদা সহ একাধিক জেলায় স্মার্ট মিটার লাগানোর প্রতিবাদে সভা, মিছিল, পোস্টারিং ও ডেপুটেশন জমা দেওয়ার ঘটনা ঘটছে। বহু জেলায় গ্রাহকরা বিদ্যুৎ অফিসে গিয়ে সরাসরি স্মার্ট মিটার খুলে ফেলারও দাবি জানিয়েছেন।

যদিও বিদ্যুৎ দপ্তরের দাবি, স্মার্ট মিটারের মাধ্যমে বিল নির্ভুল হবে, গ্রাহকরা নিজেই নিজের বিদ্যুৎ খরচ মনিটর করতে পারবেন ও দুর্নীতি কমবে। তবে গ্রাহক সংগঠনগুলির বক্তব্য, যন্ত্র নির্ভর বিল নির্ভুল হলেও তা মানুষের নাগালের মধ্যে থাকবে না বলেই আশঙ্কা।

বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তির অগ্রগতি যেমন দরকার, তেমনি তার প্রয়োগে স্বচ্ছতা ও গ্রাহকবান্ধব নীতি প্রয়োজন। স্মার্ট মিটার চালু করার আগে তার কার্যকারিতা, খরচ ও ভবিষ্যৎ রূপান্তর সংক্রান্ত তথ্য সাধারণ মানুষের কাছে সহজ ভাষায় উপস্থাপন করা উচিত ছিল।

বাংলার এক বিশাল অংশের বিদ্যুৎ গ্রাহক এখন আতঙ্ক ও অসন্তোষে ভুগছেন স্মার্ট মিটার নিয়ে। বনগাঁর মতো এলাকায় প্রতিদিনের জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত বিদ্যুৎ পরিষেবায় হঠাৎ এই পরিবর্তন না জানিয়ে, না বুঝিয়ে চাপিয়ে দেওয়া হলে তার প্রতিবাদ স্বাভাবিক। এখন দেখার, প্রশাসন কতটা দ্রুত এই গণ-আন্দোলনের সুরাহা করতে পারে—জনগণের স্বার্থে।‌



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন