সমকালীন প্রতিবেদন : ডিজিটালের বদলে এবার বাড়িতে বাড়িতে বিদ্যুতের স্মার্ট মিটার। এখন প্রশ্ন হল, এতে গ্রাহকদের কী কী সুবিধা? বা কি ধরনের অসুবিধে ফেস করতে হবে? কেন জায়গায় জায়গায় 'স্মার্ট মিটার' বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ চলছে? আসলে এই 'স্মার্ট মিটার' কি? ডিটেইলসে বলবো আজকের এই প্রতিবেদনে।
এবার একে একে অসুবিধাগুলো বলি। যারা মনে করছেন যে এই স্মার্ট মিটারের জন্য অসুবিধা হতে পারে এবং যে কারণে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে, আসলে তাদের মতে একজন গ্রাহকের বিদ্যুতের বিল কত এসেছে, সেটা দেখে সাধারণত পরের মাসে তা জমা দেওয়া হয়। কিন্তু প্রিপেইড মিটার চালু হলে সেই টাকা আগে দিতে হবে। সেই টাকা কবে বা কীভাবে শেষ হবে, তা একজন গ্রাহক জানতেও পারবেন না। কারণ, তিনি কোনও মিটার রিডিং দেখতে পাবেন না।
তবে হ্যাঁ, গ্রাহক এক সপ্তাহ আগে মোবাইলে মেসেজের মাধ্যমে জানতে পারবেন যে, জমা দেওয়া টাকার পরিমান শেষ হয়ে আসছে এবং টাকা জমা দিতে হবে। এবার যদি রাত বারোটার পর টাকা শেষ হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। তার জন্য আগাম কোনো নোটিশ বা বাড়ি গিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে না। অর্থাৎ রিচার্জ শেষ হলেই বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবে।
না সমস্যা শুধু এটুকু নয়! এর ফলে কি কি হতে পারে, সেটাও ভাববার বিষয়। অনেকেই বলছেন, এতে বিদ্যুৎ দফতরের অনেক কর্মীর কাজ হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। সেই সব পরিবারগুলোও সমস্যার মধ্যে পড়বে। আবার বিদ্যুৎ বিলের যে ট্যারিফ রয়েছে, তারও পরিবর্তন হবে বলে জানানো হয়েছে।
নতুন ট্যারিফে বোঝা চাপবে সাধারন মানুষের উপর। এতদিন ফিক্সড চার্জ প্রতি কেভিএর ছিল ১৫ টাকা, এবার সেটা বেরে হবে ৩০ টাকা। পাশাপাশি, নূন্যতম চার্জ এতদিন ছিল ২৮ টাকা। সেটা বেড়ে হবে ৭৫ টাকা। এই ট্যারিফ গৃহস্থের জন্য ধার্য করা হয়েছে। আর এর প্রতিবাদেই ডেপুটেশন, আন্দোলন, বিক্ষোভ চলছে দিকে দিকে।
যদিও আরেকাংশের মতে, স্মার্ট মিটার চালু হলে গ্রাহকদের বেশ কিছুটা সুবিধা হবে। সেটাই বা কী? কতটা ইউনিট প্রতিদিন বিদ্যুৎ পুড়ছে, কতটা বিল উঠছে, সেটা তাঁরা জানতে পারবেন। অবৈধভাবে কেউ কিছু করছে কি না, তাও সঙ্গে সঙ্গে তাঁর ফোনে মেসেজ যাবে। আসলে অ্যাডভান্স টেকনোলজি দিয়ে তৈরি এই মিটার। ফলে গ্রাহকদের কোনো অসুবিধার মধ্যে পড়তে হবে না। বরং এতে পরিষেবা অনেকটাই সুবিধা হবে।
বাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলেই, সেটা কন্ট্রোলরুমের কাছে সঙ্গে সঙ্গে মেসেজ যাবে। বাড়িতে কেউ না থাকলেও, বিদ্যুতে কোনও সমস্যা হলে গৃহকর্তার কাছে মেসেজ যাবে। বেসিক্যালি, 'স্মার্ট মিটার' একটা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যা বিদ্যুৎ খরচ, ভোল্টেজ লেভেল ইত্যাদি রেকর্ড করে তা রিয়েল টাইমে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার কন্ট্রোল রুমে পাঠাবে।
এছাড়া কন্ট্রোল রুম থেকেও সরাসরি মিটার নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। দরকারে কন্ট্রোল রুম থেকেই মিটার বন্ধ বা চালু করতে পারবে বন্টন সংস্থা। এই মিটারে একটি সিম থাকবে, যা ইন্টারনেট-সংযুক্ত। আর এখন যে মিটারগুলো রয়েছে, সেগুলো ইলেকট্রনিক হলেও স্মার্ট নয়। তাই গ্রাহকের বাড়ি এসে মিটার রিডিং নিতে হয়। কন্ট্রোল রুম থেকে মিটার নিয়ন্ত্রণ বা চালু-বন্ধ করা যায় না।
যদিও, এই সুবিধার বহরে আপাতত চিড়ে ভিজছে না। রাজ্যু জুড়ে অধিকাংশ বাড়িতে ‘স্মার্ট মিটার’ বসানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। সেক্ষেত্রে অনেকেই ভুক্তভোগী। যারা বলছেন পোস্টপেইড মিটারের তুলনায় এই মিটারের কারণে তাদেরকে বেশি টাকা গুনতে হচ্ছে। সে কারণেই চারিদিকে আন্দোলন, বিক্ষোভ চলছে। যদিও বিদ্যুৎ বন্টন সংস্থার পরিষ্কার দাবি, গ্রাহকদের সুবিধার জন্যই এই মিটারের ব্যবস্থা। যাতে আরও সঠিক ও স্বচ্ছ হয় গোটা বিষয়টা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন