সমকালীন প্রতিবেদন : এই মুহূর্তে বিশ্বজুড়ে, বিশেষ করে ভারতবর্ষে মুখে মুখে একটাই নাম সুনীতা। সুনীতার স্বামীর বিশ্বাস অদ্ভুতভাবে মিলে গেল। ২৮৬ দিন মহাকাশে কাটিয়ে পৃথিবীতে ফিরেছেন সুনীতা এবং বুচ। এখন মানুষ জানতে উৎসুক মহাকাশ ফেরৎ সুনীতা উইলিয়ামসের পার্সোনাল লাইফ কেমন? স্বামী–সন্তান নিয়ে ভরা সংসার? ভগবদ গীতার জেরক্স নিয়ে মহাকাশ যাত্রা থেকে সুনীতার চমকপ্রদ প্রেমকাহিনী, পুরোটা নিয়েই আজকের প্রতিবেদন।
সুনীতার ‘ঘরওয়াপসি’র পর সারা বিশ্বে আনন্দের ঢেউ। তার মধ্যেই নতুন করে কৌতূহল তৈরি হয়েছে নভশ্চর এবং তাঁর পরিবারকে নিয়ে। সুনীতাদের পৈত্রিক বাড়ি গুজরাতের ঝুলাসন। তাঁর বাবা দীপক পাণ্ড্য ছিলেন পেশায় চিকিৎসক। ২০২০ সালে আমেরিকাতেই মৃত্যু হয় দীপকের। তার আগে কন্যার মহাকাশযাত্রা দেখে গিয়েছেন তিনি। সুনীতাকে নিয়ে গর্বের অন্ত নেই তাঁর মায়েরও।
সেই মার্কিন নৌবাহিনীর ৫৯ বছর বয়সি প্রাক্তন ক্যাপ্টেন এবং নাসার মহাকাশচারী সুনীতার ছোটবেলা থেকেই বিজ্ঞানের প্রতি অস্বাভাবিক ঝোঁক। মার্কিন নৌ অ্যাকাডেমিতে একটি সফরের পর সেদিকেই ঝোঁক তৈরি হয় তাঁর। তবে তাঁর শৈশবের স্বপ্ন ছিল পশুচিকিৎসক হওয়ার। কিন্তু ১৯৯৮ সালে নাসার মহাকাশচারী হিসাবে নির্বাচিত হয়ে জনসন স্পেস সেন্টারে প্রশিক্ষণ নেন সুনীতা।
২০০৬ সালের পর থেকে একাধিকবার মহাকাশ অভিযানে গিয়েছেন সুনীতা। মহাকাশে হাঁটার নজিরও রযেছে তাঁর। মহাকাশে তাঁর বেশ কিছু অবিস্মরণীয় ছবি রয়েছে। ভারত সফরেও এসেছিলেন সুনীতা। ভারতে একাধিক সম্মানও পেয়েছেন। সুনীতা বিয়ে করেছেন মাইকেল জে উইলিয়ামসকে। মাইকেল আমেরিকার একজন ফেডারেল মার্শাল। সুনীতা এবং তাঁর স্বামী, উভয়েরই হেলিকপ্টার ওড়ানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেনাবাহিনীতে হেলিকপ্টার পাইলট হিসাবে কাজ করার সময় মাইকেলের সঙ্গে আলাপ হয় সুনীতার।
এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ১৯৮৭ সালে মেরিল্যান্ডের অ্যানাপোলিসের নেভাল অ্যাকাডেমিতে তাঁদের প্রথম দেখা হয়েছিল। সেখান থেকেই তাঁদের বন্ধুত্ব, পরে প্রেম। এরপর শুধুমাত্র ঘনিষ্ঠ পরিবার এবং বন্ধুদের উপস্থিতিতে বিয়ে করেন সুনীতা এবং মাইকেল। সুনীতা এবং মাইকেল ২০ বছর ধরে বিবাহিত। ২০১২ সালে অহমদাবাদ থেকে একটি মেয়েকে দত্তক নেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করেছিলেন নিঃসন্তান সুনীতা। তাদের গর্বি নামে একটি জ্যাক রাসেল টেরিয়ার ছিল। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক চ্যানেলের 'ডগ হুইস্পারার' শোতে সুনীতার সঙ্গে দেখা গিয়েছিল তাকে। গর্বি ছাড়াও, সুনীতা ও মাইকেলের আরও তিনটি পোষা প্রাণী রয়েছে– গানার, বেইলি এবং রোটর।
শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি হলো সুনীতার পাশাপাশি, মাইকেল জে. উইলিয়ামসও হিন্দু ধর্ম পালন করেন। অনেকেই হয়তো জানেন না, ২০০৬ সালে মহাকাশ যাত্রার সময় সুনীতা উইলিয়ামস সঙ্গে ভগবদ গীতার একটি জেরক্স নিয়ে গিয়েছিলেন। ২০১২ সালে তিনি সঙ্গে ওমের একটি প্রতীক, ভগবান শিবের একটি ছোট ছবি এবং উপনিষদের একটি জেরক্স মহাকাশে নিয়ে যান।
২০২৪ সালের অগস্টে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে স্ত্রীর সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে মাইকেল বলেছিলেন, ‘‘মহাকাশ হল সুনীতার সুখের জায়গা।’’ সেই সুখের জায়গাতেই ৮ দিনের বদলে নয় মাস কাটিয়ে ফেলেছেন সুনীতা। উল্লেখ্য, গত বছর ৫ জুন সুনীতাদের নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল বোয়িং স্টারলাইনার। আট দিনের সফরে গিয়েছিলেন তাঁরা।
কিন্তু সেইসময় মহাকাশযানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ফলে সেখানেই আটকে পড়েন সুনীতারা। তার পর থেকে একাধিকবার তাঁদের পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা হলেও সফল হয়নি। অবশেষে ভারতীয় সময় বুধবার ভোর ৩টে ২৭ মিনিট নাগাদ সুনীতা উইলিয়ামস, বুচ উইলমোর সহ ৪ নভশ্চরকে নিয়ে ফ্লরিডার সমুদ্রে অবতরণ করেছে ইলন মাস্কের সংস্থা স্পেসএক্সের মহাকাশযান ‘ড্রাগন ফ্রিডম’।









কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন