সমকালীন প্রতিবেদন : বাংলার ক্রিকেটে এক নতুন ইতিহাস লিখল বনগাঁর তরুণ অঙ্কিত চট্টোপাধ্যায়। মাত্র ১৫ বছর ৩৬১ দিন বয়সে রঞ্জি ট্রফিতে বাংলার হয়ে ব্যাট করতে নেমে নতুন নজির গড়ল বনগাঁর এই তরুণ। ১৭ বছর বয়সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের রঞ্জি অভিষেকের রেকর্ড ভেঙে বাংলা ক্রিকেটে সবচেয়ে কম বয়সে রঞ্জি খেলার গৌরব অর্জন করল অঙ্কিত।
কল্যাণীর মাঠে বাংলার অভিজ্ঞ উইকেটকিপার ঋদ্ধিমান সাহার হাত থেকে রাজ্যের টুপি নেওয়ার মুহূর্তটি ছিল তার জীবনের অন্যতম সেরা মুহূর্ত। এই ম্যাচেই হরিয়ানার বিরুদ্ধে বাংলার হয়ে ওপেনিং ব্যাট করতে নেমে শুরু হল তার রঞ্জি যাত্রা। যদিও এই সাফল্যের নেপথ্যে রয়েছে অঙ্কিতের হাড়ভাঙা পরিশ্রম।
বনগাঁ হাইস্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কিত প্রতিদিন ভোর সাড়ে ৩টায় ঘুম থেকে উঠে বনগাঁ লোকালে চেপে শিয়ালদা পৌঁছায়। সেখান থেকে কলকাতা ময়দানে পৌঁছাতে লাগে প্রায় দু’ঘণ্টা। সারা দিনের কঠোর অনুশীলনের পর বাড়ি ফিরে পড়াশোনা করে তার দিন শেষ হয় রাত ১০টায়।
তিন বছর ধরে এই রুটিন মেনে চলা অঙ্কিতের পরিশ্রমের ফসল আজ তার হাতে। তার কোচ দোলন গোলদার বলেন, “অঙ্কিত খুব শান্ত স্বভাবের ছেলে। যতক্ষণ না তাকে অনুশীলন থামাতে বলতাম, ততক্ষণ চালিয়ে যেত। ক্রিকেটের প্রতি তার নিষ্ঠা ও ভালোবাসা তাকে আজকের জায়গায় নিয়ে এসেছে।”
বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে বাংলার অনূর্ধ্ব-১৬ দলের হয়ে সর্বাধিক রান করে নজর কেড়েছিল অঙ্কিত। এরপর সৌরাশিস লাহিড়ীর অধীনে অনূর্ধ্ব-১৯ বাংলা দলে জায়গা করে নেয়। বিনু মাঁকড় ট্রফিতে অসমের বিরুদ্ধে তার ৭৫ বলে শতরান, যেখানে ছিল ৯টি ছক্কা, তাকে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সুযোগ এনে দেয়।
সৌরাশিস লাহিড়ী বলেন, “অঙ্কিত ভয়ডরহীন ক্রিকেটার। দলের প্রয়োজনে নিজেকে উজাড় করে দেয়। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে প্রথম বলেই তার কভার ড্রাইভ মারাটা তার আত্মবিশ্বাসের প্রতিফলন। বাঁহাতি ব্যাটার হিসেবে ওকে খেলতে দেখা এক অন্য রকম অভিজ্ঞতা।”
অঙ্কিতের বাবা অনুপ চট্টোপাধ্যায়,বলেন, “আমাদের বাড়ির উঠোনেই খেলা শুরু করেছিল অঙ্কিত। তার খেলায় মনোযোগ দেখে ব্যাট কিনে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে সোনালি স্পোর্টিং ক্লাব ক্রিকেট কোচিং সেন্টারে ভর্তি করি।” পরিবার, কোচ ও দলের প্রতি কৃতজ্ঞ অঙ্কিত জানায়, “এটা তো সবে শুরু। সামনে আরও অনেকটা পথ যেতে হবে।”
অঙ্কিতের প্রিয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি। তাঁর মাঠের আগ্রাসন এবং দলের প্রতি নিবেদন তাকে অনুপ্রাণিত করে। নিজের ক্রিকেট যাত্রার প্রতিটি ধাপে কোহলির মতো মানসিকতা ধরে রাখতে চায় অঙ্কিত। অঙ্কিতের এই অসামান্য যাত্রা শুধু তাঁর নয়, গোটা বাংলা ক্রিকেটের জন্য গর্বের।
এমন একজন প্রতিভাবান তরুণ ক্রিকেটারের অভিষেক বাংলার ক্রিকেটকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলেই আশা করছেন তার কোচ এবং সমর্থকেরা। মাঠে তার পারফরম্যান্সই ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, তবে ইতিমধ্যেই অঙ্কিত দেখিয়ে দিয়েছে যে, কঠোর পরিশ্রম এবং আত্মবিশ্বাস থাকলে অসম্ভব বলে কিছু হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন