সমকালীন প্রতিবেদন : প্রথমে সব ঠিক ছিল! কিন্তু কি করে বুঝলেন বাবা মা ছোট্ট একরত্তি অস্মিকার শরীরেই শেষমেশ বাসা বাঁধল তাঁদের জিনগত জটিল বিরল রোগ SMA? সারাতে লাগবে ১৬ কোটির ইঞ্জেকশন! সময় আর কতদিন? যত বড় হচ্ছে অস্মিকা, ভয়ে আশঙ্কায় বুকের ভেতরটা ঢিব ঢিব করছে বাবা-মায়ের! ইনজেকশন দিলেই কি স্বাভাবিক জীবনে ফিরবে অস্মিকা? আসলে ওই ইনজেকশনের দাম কত? শরীরে পুশ করার পর কিভাবে বা কাজ করবে ওই ইনজেকশন? রানাঘাটের অস্মিকার জন্য লড়াইয়ে সামিল গোটা বিশ্ব! মুখ ফিরিয়ে নেবেন না। হাত বাড়িয়ে দিন "ক্রাউড ফান্ডিং"এ! জিতে যাওয়ার লড়াইয়ে ছোট্ট অস্মিকার পাশে থাকুন।
মুখে মুখে ফিরছে একটাই কথা। SMA, বিরল জটিল রোগে আক্রান্ত রানাঘাটের ছোট্ট অস্মিকা। কিন্তু এই রোগ আসলে কি? স্পাইনালের অন্যতম জটিল রোগ। "স্পাইনাল মাসকুলার অট্রোফি" একটা জেনেটিক ডিসঅর্ডার। জিনগতভাবে হয়। নার্ভ ও পেশীকে এফেক্ট করে। হাত পায়ের নার্ভ ও পেশী শিথিল হতে থাকে। হ্যাঁ, এমন এক জটিল রোগে আক্রান্ত অস্মিকাকে সুস্থ করাই এখন তার বাবা-মায়ের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। যে বয়সে শিশুরা হাঁটতে শেখে, সেই বয়সে ছোট্ট অস্মিকা নিজে থেকে এক ফোঁটাও নড়তে পারে না। কিন্তু অস্মিকা যে এই বিরল রোগে আক্রান্ত, কীভাবে বুঝতে পারলেন তাঁরা?
বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, অস্মিকার মা লক্ষ্মী সরকার দাস জানিয়েছেন, তিন মাস বয়স পর্যন্ত বাকি বাচ্চাদের মতোই ঠিক ছিল। পা তুলত, হাত নাড়াত। সাড়ে তিন মাস বয়স যখন হল, তখনই হঠাৎ একদিন দেখেন পা-টা আর তুলছে না। তিন-চার মাসের বাচ্চাদের ঘাড় শক্ত হয়ে যায় সাধারণত। উবুড় হয়ে যায়। কিন্তু ওর কিছুই হচ্ছিল না।
এরপর প্রথমে ওকে মুকুন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে দেখানো হয়। ওখান থেকে ডাক্তারবাবু কিছু পরীক্ষা করাতে দেন। SMN জিন টেস্ট করানো হয়। রিপোর্ট আসে ২০ দিন পরে। ডাক্তারবাবুই বলে দেন, এটা একটা বিরল রোগ। এর চিকিৎসা ভারতবর্ষে নেই। আর যে চিকিৎসা রয়েছে, সেটা কোটি কোটি টাকা খরচ। এরপরই শুরু হয়ে যায় ছোটাছুটি। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শে শুরু হয় চিকিৎসা। জটিল এই রোগের চিকিৎসা নদিয়াতে হয় না। তাই কলকাতা থেকে চেন্নাই হয়ে বেঙ্গালুরু যেতে হয় তাঁদের। জানা যায়, দু’বছরের নীচের বাচ্চাদের জন্য লাইসেন্সড রয়েছে এই ইঞ্জেকশনের। এটিকে একটা অরফান ড্রাগ বলা যেতে পারে। সেটা জিন থেরাপি। অর্থাৎ ‘Onasemnogene‐abeparvovec’। এটা শরীরে একবার ইঞ্জেক্ট করতে হয়।
কিন্তু এই ইঞ্জেকশন কীভাবে কাজ করে শরীরে? চিকিৎসকরা বলেন, “এই ওষুধ শরীরে মধ্যে গিয়ে ওই যে ডিফেক্টিভ জিন, যেটা প্রোটিন তৈরি করতে পারে না, সেই প্রোটিনটা আবার তৈরি করতে সেলকে সাহায্য করে। তবে, সমস্যা হলো এই ইঞ্জেকশন এখানে পাওয়া যায় না। ইমপোর্ট করতে হয়। এই ইনজেকশন আসবে সুদূর আমেরিকা থেকে। দাম ৯ কোটি। কিন্তু কর-আমদানির খরচ-সহ সব মিলিয়ে ১৬ কোটি টাকা পর্যন্ত লাগতে পারে।
এদিকে অনন্তকাল সময়ও হাতে নেই। কোটি টাকার একটা ইঞ্জেকশন! আর হাতে মাত্র পাঁচ থেকে ছ’মাস। মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে আম জনতার দরজায় দরজায় কড়া নাড়ছে দাস পরিবার। ক্রাউড ফান্ডিংয়ের মাধ্যমে চিকিৎসার খরচ তোলার চেষ্টা করছেন শুভঙ্কর-লক্ষ্মীরা। ইতিমধ্যেই সাহায্য করেছেন কৈলাশ খের, কনসার্ট করতে এসে অস্মিকার চিকিৎসার খরচ দিয়েছেন। সাহায্য করার কথা বলেছেন রূপম ইসলাম সহ আরো অনেকে।
কিন্তু, বাবা মায়ের দুশ্চিন্তা কমছে না। যে বয়সে শিশুরা হাঁটতে শেখে, সেই বয়সে ছোট্ট অস্মিকা নিজে থেকে এক ফোঁটাও নড়তে পারে না। কদিন আগে অস্মিকার এক বছর বয়স হল। কেকও কাটল মায়ের হাত ধরে। না, বলা ভালো, মা তার হাত ধরে কেক কাটাল। একমাত্র মেয়ের প্রথম জন্মদিন, বাবা-মায়ের তো আনন্দে আত্মহারা হওয়ার কথা! কিন্তু নাহ, তেমনটা হচ্ছে না। বরং তাঁদের চোখে জল।
মারণ রোগ নয়। কিন্তু নদিয়ার রানাঘাট স্টেশনের কাছে স্বামী বিবেকানন্দ সরণি-র দাসপাড়ার বাসিন্দা এই দাস পরিবার অস্মিকাকে সুস্থ করে তুলতে জান প্রাণ লড়িয়ে দিচ্ছেন। ওই জটিল রোগের চিকিৎসার খরচ যে কল্পনার অতীত। তাই মেয়ের চিকিৎসার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরছেন শুভঙ্কর। অস্মিকার মা বাবার একটাই আবেদন, যে যেভাবে যতটুকু পারেন, আর্থিক সাহায্য যেন করেন। তাহলেই অস্মিকার ভবিষ্যৎ সোনালি দিন দেখবে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন