সমকালীন প্রতিবেদন : চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রয়োজনে ছুটি চাইতে গিয়ে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের হাতে চরম হেনস্থার শিকার হতে হলো এক সহকারী শিক্ষিকাকে। আর এমনই অভিযোগকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ালো বাংলার গ্যাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ে। অসম্মানিত সহশিক্ষিকা বিচারের আশায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলেন।
গ্যাঁড়াপোতা উচ্চ বিদ্যালয়ে এই মুহূর্তে কোন স্থায়ী প্রধান শিক্ষক দায়িত্বে নেই। সেই জায়গায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন পঙ্কজ কুমার ব্যাপারী নামে স্কুলের আর এক সহশিক্ষক। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষকদের অভিযোগ, তিনি দায়িত্বে আসার পর থেকেই স্কুলের পরিস্থিতি আরো খারাপ হয়েছে। তিনি প্রতি মুহূর্তে ছাত্র এমনকি সহশিক্ষক–শিক্ষিকাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে চলেছেন।
এই স্কুলেরই দীর্ঘদিনের ইতিহাসের সহ-শিক্ষিকা রাখি মন্ডল বিশ্বাস জানান, তিনি চিকিৎসার প্রয়োজনে বাইরের রাজ্যে যাবেন। আর সেই জন্য তাঁর জরুরী ভিত্তিতে কিছুদিনের ছুটির প্রয়োজন। সেই ছুটি মঞ্জুর করার জন্য তিনি বুধবার স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পঙ্কজকুমার ব্যাপারীর কাছে আবেদনপত্র জমা দিতে যান। আর তাকে কেন্দ্র করেই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি তৈরি হয়।
শিক্ষিকা রাখী মন্ডল বিশ্বাসের অভিযোগ, তিনি যখন ছুটির আবেদনপত্র নিয়ে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের কাছে যান, তখন আবেদনপত্রটি নিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে তা পা দিয়ে মাড়িয়ে ধরেন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক এবং বলেন, কোনভাবেই ছুটি মঞ্জুর করা হবে না।
এই নিয়ে তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হলে শিক্ষিকা রাখির উদ্দেশ্যে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক একটি অশালীন শব্দ ব্যবহার করেন বলে তাঁর অভিযোগ। এমনকি তাঁকে শারীরিকভাবে হেনস্থা করতেও এগিয়ে আসেন বলে অভিযোগ।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু হলে স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক–শিক্ষিকারা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ঘরে ছুটে এসে সহ শিক্ষিকা রাখি মন্ডল বিশ্বাসকে রক্ষা করেন। এই ঘটনায় স্কুলের সহকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
রাতেই ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পঙ্কজ কুমার ব্যাপারীর বিরুদ্ধে বনগাঁ থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন সহশিক্ষিকা রাখি মন্ডল বিশ্বাস। স্কুলের অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অভিযোগ, এর আগেও ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক পঙ্কজকুমার ব্যাপারী তাঁদের অনেকের সঙ্গেই এইরকম দুর্ব্যবহার করেছেন। এমনকি ছাত্রদের সঙ্গেও তিনি দুর্ব্যবহার করেন।
ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার স্কুলে ক্লাস বয়কটের পাশাপাশি অন্যান্য শিক্ষক-শিক্ষিকারা স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ঘরে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের সঙ্গে অন্যান্য শিক্ষক শিক্ষিকাদের প্রবল গোলমাল বেধে যায়। স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের একাংশ ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের পদ থেকে পঙ্কজকুমার ব্যাপারীকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।
যদিও গোটা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পঙ্কজ কুমার ব্যাপারী। তার পাল্টা বক্তব্য, 'চাইল্ড কেয়ার লিভ এ লম্বা ছুটি নিয়ে মাত্র দুদিন আগেই স্কুলে জয়েন করেছেন রাখি মন্ডল বিশ্বাস। তারপর ফের লম্বা ছুটির আবেদন করেছেন তিনি। কিন্তু এতে স্কুলে পড়াশোনার ক্ষতি হবে বলে সেই ছুটি আমি মঞ্জুর করিনি। তার সঙ্গে কোনো খারাপ ব্যবহার করা হয়নি।' এদিন স্কুলের পড়ুয়ারা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষকের ঘরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে তার পদত্যাগ দাবি করে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন