সমকালীন প্রতিবেদন : আতঙ্কের আরও এক রাত। দুর্ঘটনাস্থল আবারও সেই রেল লাইন। প্রায় বছর ঘুরতেই আবারও এক অভিশপ্ত দিন দেখল মানুষ। গতবছর ২ জুন করমন্ডলের পর এবার ১৮ ই জুন কাঞ্চনজঙ্ঘা। সারাদিন সারারাত পেরিয়ে মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরল ট্রেন ভর্তি যাত্রীরা। কিছু যাত্রী প্রাণ হারালেও, চোখের সামনে মৃত্যুকে দেখলেন বহু যাত্রী। আতঙ্কে চোখের পাতা বন্ধ করতে পারেননি অনেকেই।
মঙ্গলবার তখন ভোর ৩ টে বেজে ২০ মিনিট। বাকি অক্ষত অংশ নিয়ে শিয়ালদা স্টেশনে এসে পৌঁছায় ১৩১৭৪ ডাউন আগরতলা-শিয়ালদহ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। সেইসময় শিয়ালদার ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্মে গিজগিজ করছে অসংখ্য পুলিশ। সেইসঙ্গে ওই রাতে স্টেশনে এসে উপস্থিত হয়েছিলেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এবং স্নেহাশিস চক্রবর্তী। যাত্রীরা প্ল্যাটফর্মে ঢুকতেই কিছুটা নিশ্চিন্ত হলেন তাঁরা।
এরই মধ্যে এক যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে সোজা গিয়ে জড়িয়ে ধরলেন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে। কলকাতা জিপিওতে চাকরিরত এই যাত্রী মৃত্যুকে একেবারে চোখের সামনে থেকে দেখে ফিরে এসে নিজেকে আর সামলে রাখতে পারলেন না। ট্রেন থেকে নেমে মন্ত্রীকে জড়িয়ে ধরেই হাউহাউ করে কেঁদে উঠলেন। ঠিক যেন নতুন জীবন ফিরে পাওয়া।
ট্রেনে থাকা আরও এক যাত্রী জানান, ‘ওই ঘটনার পর থেকে এতোটাই আতঙ্কে ছিলাম যে, ট্রেনে একটা ঝাঁকুনি হলেও, ভয়ে কেঁপে উঠছিলাম আমরা’। সোমবার ছিল কুরবানির ঈদ। এই দিন সকালে রাঙাপানি স্টেশন সংলগ্ন ফাঁসিদেওয়ায় আচমকাই শিয়ালদামুখী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসকে পেছন থেকে এসে সজোরে ধাক্কা মারে একটি মালগাড়ি। সঙ্গে সঙ্গেই কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়েমুচড়ে যায় এবং একটি বগি উলটে উপর দিকে উঠে যায়।
বিকট আওয়াজ পেয়ে তৎক্ষণাৎ সেখানে ছুটে আসে আশেপাশের লোকজন। শুরু করেন উদ্ধার কাজ। তারপর পরবর্তী সময়ে উদ্ধারকারী দলের সাহায্যে বেশ কয়েকজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করা গেলেও রেল দপ্তরের দাবি, এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ৯ জন। এমনকি মারা গিয়েছেন মালগাড়ির চালকও।
বার বার কেন একইভাবে রেল দুর্ঘটনা ঘটছে? কেন এখনও সুরক্ষার দিকটা খতিয়ে দেখা হছে না? ‘কবচ’ কেন এখনও বাংলায় চালু করা হয়নি? উঠতে থাকে এইরকম বহু প্রশ্ন। তার মধ্যে থেকে সবথেকে বড় কথা হল, এই দুর্ঘটনার গাফিলতি কার? যা নিয়ে ইতিমধ্যেই দোষ চাপানোর প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গিয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন