সমকালীন প্রতিবেদন : প্লাস্টিক এখন এক আন্তর্জাতিক সমস্যা। আধুনিক সভ্যতার সৃষ্টি প্লাস্টিক। আর ওই প্লাস্টিকই সভ্যতাকে ধ্বংসের মুখে নিয়ে যাচ্ছে। এবার প্লাস্টিকমুক্ত বিশ্ব গড়তে এগিয়ে এলেন পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী। গবেষণার নেতৃত্বে রয়েছেন বিজ্ঞানী ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন বিজ্ঞানী প্রীতিরঞ্জন মণ্ডল, শুভাশিস মাইতি, অধ্যাপক সূর্যসারথী বসু এবং অধ্যাপক কৌশিক চট্টোপাধ্যায়।
প্লাস্টিকের সমস্যা এখন ভয়ঙ্কর সমস্যা। সেই সমস্যার সমাধানে প্লাস্টিকের বিকল্পের সন্ধান শুরু করেছিলেন বিজ্ঞানীরা, যা পরিবেশের ক্ষতি করে না, কিন্তু গুণাগুণ প্রায় একই। সম্প্রতি এমনই একটি বায়োপলিমার আবিষ্কার করেছেন ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স, বেঙ্গালুরুর পাঁচ বাঙালি বিজ্ঞানী।
গবেষকদের দাবি, তাঁদের তৈরি পলিইউরেথেন জীবাণুবিয়োজ্য, টেকসই, সহজলভ্য এবং একেবারেই ব্যয়সাপেক্ষ নয়। এর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হল, এটি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর তো নয়ই, বরং উপকারী। পলিইউরেথেন-এর জন্য পেটেন্টের আবেদন জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানী দলটি। সদ্য ভারত সরকারের কাছ থেকে পেটেন্টের শংসাপত্র পেয়েছেন তাঁরা।
এব্যাপারে ইন্দ্রনীল চক্রবর্তী জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই পরিবেশবান্ধব বায়োপলিমারটি কিনেও নিয়েছে একটি স্টার্ট আপ। রেস্তোরাঁ থেকে বাড়িতে আনানো খাবারের পাত্র হোক কিংবা ক্যারিব্যাগ, কাঁটা চামচ কিংবা দাঁত মাজার ব্রাশ, প্লাস্টিকের ব্যবহার সর্বত্র। আর দূষণও ঠিক ততটাই।
ভারতে প্রতি বছর প্রায় ৩৩ লক্ষ মেট্রিক টন প্লাস্টিক তৈরি করা হয়, যার মাত্র ৯ শতাংশ পুনর্ব্যবহার করা হয়। প্লাস্টিক জীবাণুবিয়োজ্য নয়। এটি সহজে মাটিতে মেশে না, ৫০০ থেকে ১০০০ বছরও লেগে যেতে পারে। তাতেও এর বিষক্রিয়া শেষ হয় না।
প্লাস্টিক যদি পোড়ানো হয়, সেক্ষেত্রে এটি বাতাসে ডায়োক্সিন, ফিউরান, মার্কারি, পলিক্লোরিনেটেড বাইফিনাইল জাতীয় বিষাক্ত গ্যাস তৈরি করে। প্লাস্টিকের ব্যবহার রাসায়নিক দূষণ তৈরি করে, সমুদ্র এবং স্থলভাগের বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস করে। তাছাড়া মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরির ভয় তো রয়েইছে, যা ক্যানসার পর্যন্ত ডেকে আনতে পারে।
ইন্দ্রনীল জানিয়েছেন, তাঁরা পলিইউরেথেন তৈরি করেছেন রেড়ির তেল, ডাই আইসোসায়ানেট এবং ধানের গোড়া দিয়ে। রেড়ির তেল ভোজ্যতেল নয়, কিন্তু ভারতে এর উৎপাদন প্রচুর। ফলে দাম কম। বহু নিষেধ সত্ত্বেও চাষের কাজের পরে ধানের গোড়া পুড়িয়ে ফেলা হয়। যা ভয়াবহ দূষণ সৃষ্টি করে।
বিজ্ঞানী দলটি জানিয়েছে, ধানের গোড়ার ব্যবহার এক দিকে দূষণ রুখবে, অন্য দিকে তা পরিবেশের উপকারে ব্যবহার করা হবে। বিজ্ঞানীদের দাবি, এর উপযোগিতা প্লাস্টিকের মতোই। কিন্তু এটি জীবাণুবিয়োজ্য। ইন্দ্রনীলরা পরীক্ষামূলকভাবে পলিইউরেথেনকে মাটি চাপা দিয়ে রেখেছিলেন। দেখা গেছে, তিন-চার মাস পরে এর ৩৫ শতাংশ জীবাণুবিয়োজিত হয়ে গেছে।
বিজ্ঞানী দলটি এ-ও নিশ্চিত করেছেন, পদার্থটি সম্পূর্ণ জীবাণুবিয়োজ্য, ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিক তৈরি করে না। পলিইউরেথেনের সাহায্যে চামচ, ব্যাগ, গ্লাস এমন বেশ কিছু প্রতিদিনের ব্যবহৃত জিনিস তৈরি করেছেন ইন্দ্রনীলরা।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন