সমকালীন প্রতিবেদন : স্কুল শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশনের কথা বহুদিন থেকেই মাঝে মাঝে শিরোনামে উঠে আসে। কিছুদিন চর্চা হয়, আবার যে কে সেই। কিন্তু এবার আদালতের চাপে সরকার কঠোর পদক্ষেপের পথে।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে জারি করা নির্দেশিকায় বলা আছে, পর্ষদের আওতাভূক্ত সরকারি স্কুল বা সরকারি পোষিত স্কুলের শিক্ষকেরা নিজের বাড়িতে বা প্রতিষ্ঠানে প্রাইভেট টিউশন করতে পারবেন না।
নির্দেশিকায় আরও বলা আছে, এইসব স্কুলের শিক্ষকদের কেউ প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত থাকলে, তা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে। কিন্তু তারপরেও সেই নির্দেশ অমান্য করে অর্থের লোভে দেদার প্রাইভেট টিউশনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন একশ্রেণীর স্কুল শিক্ষক।
এবারে সেইসব শিক্ষকদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপের পথে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। রাজ্যের 'প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন' এর আগেই শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন করার বিরুদ্ধে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সেই রায়ের পরেও একশ্রেণীর লোভী শিক্ষক এখনও পর্যন্ত বহাল তবিয়তে প্রাইভেট টিউশন চালিয়ে যাচ্ছেন, এমনই অভিযোগ ওই সংগঠনের।
প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আরও অভিযোগ, স্কুল শিক্ষকদের কাছে প্রাইভেট টিউশন না নিলে স্কুলের খাতায় ফেল করিয়ে দেওয়া হবে, একাংশের স্কুল শিক্ষকেরা এমন হুমকিও দেন।
ফলে অনেক অভিভাবকই বাধ্য হন, স্কুলের ওইসব শিক্ষকদের কাছে তাঁদের ছেলেমেয়েদের প্রাইভেট টিউশন নিতে। সংগঠনের পক্ষ থেকে নতুন করে এব্যাপারে আদালতে অভিযোগ জানালে মে মাসে আদালত সরকারকে এই বিষয়টি দেখার নির্দেশ দেয়।
উল্লেখ্য, এমনিতেই এই রাজ্যে হাজার হাজার শিক্ষকের চাকরি বিক্রি হয়ে গেছে। লাখ লাখ শিক্ষিত–বেকার ছেলেমেয়ে টিউশন পড়িয়ে সামান্য কিছু উপার্জন করেন, সেই পথটাও বন্ধ করে দিচ্ছেন ওই অসাধু শিক্ষকেরা। এমনকি একশ্রেণীর স্কুল শিক্ষক একপ্রকার সিন্ডিকেট তৈরি করে প্রাইভেট টিউশনের কাজ চালিয়ে যাওয়ায় অনেক শিক্ষিত–বেকার যুবক–যুবতীরা সেইভাবে প্রাইভেট টিউশন করার সুযোগ পর্যন্ত পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ।
স্কুল শিক্ষকদের একাংশের এই ধরনের অবৈধ কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে এবার আরও বেশি করে সরব হয়েছে প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন। সংগঠনের কর্তারা জানিয়েছেন, নিজেদের এলাকায় কারা কারা প্রাইভেট টিউশন পড়ান, তার লিস্ট তারা সরকারের কাছে ইতিমধ্যেই তুলে দিয়েছেন।
নবান্ন সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে কলকাতা হাইকোর্টের রায়কে এবার মান্যতা দিতে চলেছে রাজ্য শিক্ষা দপ্তর। সরকার এই বিষয়ে যথেষ্ট কঠোর। সূত্রের খবর, প্রাইভেট টিউটর ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের কাছ থেকে তালিকা পাওয়ার পর তা খতিয়ে দেখে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর প্রাইভেট টিউশনের সঙ্গে যুক্ত সেই সমস্ত অসাধু শিক্ষকদের তালিকা ইতিমধ্যে তৈরি করা শুরু করেছে। এখন দেখার, এবারে সরকারি স্কুল বা সরকার পোষিত স্কুলের কর্মরত শিক্ষকদের প্রাইভেট টিউশন বাস্তবে বন্ধ হয় কিনা!
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন