Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

সোমবার, ১৫ মে, ২০২৩

ধ্বংসের মুখে সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ

 

Mangroves-of-Sundarbans-in-the-face-of-destruction

সম্পদ দে : ‌ইতিহাস সাক্ষী আছে, যতবার প্রকৃতির ওপর মানুষ চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেছে, ততবার প্রকৃতি দেখিয়ে দিয়েছে তার ক্ষমতা। বর্তমানে সঠিক সময়ে ঋতুর না আসা, কোথাও প্রবল বৃষ্টি হওয়া তো কোথাও বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া, সেই সঙ্গে গ্লোবাল ওয়ার্মিং এর কারণে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকা। এই সমস্ত কিছুই তার প্রমান।

এইবার সেই প্রকৃতির ওপরেই মানুষের অতি খবরদারি এবং সরকারের উদাসীনতার কারণে আজ ধ্বংসের মুখে সুন্দরবন এবং তার ম্যানগ্রোভ অঞ্চল। বেশ কিছু অপরিকল্পিত প্রজেক্টের কারণে এবং পরিবেশ সম্পর্কে সরকারের উদাসীনতার কারণে আজ ধীরে ধীরে ছোট হচ্ছে সুন্দরবন এলাকা। 

সুন্দরবন এবং ম্যানগ্রোভ অঞ্চল গোটা পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান। এই এলাকাতেই দেখতে পাওয়া যায় আমাদের ভারতবর্ষের গর্ব, রয়েল বেঙ্গল টাইগার। সেই সঙ্গে এখানে অবস্থিত ম্যানগ্রোভ জঙ্গল বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া ঝড়ের প্রভাব কমিয়ে দিয়ে উপর দিকের শহরাঞ্চলকে ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়।

বর্তমানে এখানকার বাসিন্দা এবং পরিবেশ রক্ষাকারী এনজিওদের অভিযোগ, সুন্দরবন অঞ্চলের উপকূল রক্ষা করার ক্ষেত্রে প্রশাসন একদমই নজর দিচ্ছে না। এমনকি সুন্দরবনের ‘কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট’-এরও কোনওপ্রকার নিয়মকানুন মানা হচ্ছে না বলেই অভিযোগ তাঁদের।

অভিযোগ কেবলমাত্র সুন্দরবনের কোস্টাল ম্যানেজমেন্ট এবং সেখানকার প্রশাসনের ওপরেই নয়। অভিযোগ আছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপরেও। স্থানীয় মানুষ এবং পরিবেশ রক্ষাকারীদের দাবি, সুন্দরবন সম্পর্কে সরকারের কোনওরকম মাথা ব্যথাই নেই। সরকারকে দেখে মনেই হয় না যে, তাদের একটা পরিবেশ দপ্তর আছে। 

সুন্দরবনে বেশকিছু এলাকা যেমন গঙ্গাসাগর, ঘোড়ামারা, মৌসুনি, নামখানা, জি প্লটের মতো জায়গাগুলি অত্যন্ত ঘন জনবসতিপূর্ণ দ্বীপ এলাকা। যতই দিন যাচ্ছে ততই মানুষও ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নিচ্ছে নিজেদের এলাকা। যার কারণে ক্ষতি হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার পরিবেশের। তবে প্রতিবার ভোট বাক্সের কথা চিন্তা করেই সরকার চোখ বুজে থাকে।

সুন্দরবনে গঙ্গাসাগর, ঘোড়ামারা, মৌসুনির মতো জায়গা বাদেও ডালহৌসি, ধনচি, বঙ্গদুনি, বুলচেরি এবং জম্বুদ্বীপের মতো সম্পুর্ন জঙ্গল দিয়ে ঢাকা দ্বীপ এলাকাও রয়েছে। তবে আসল চিন্তার বিষয় হলো, পরিবেশ বিজ্ঞানীদের একটি দল সম্প্রতি বেশ কিছু উপগ্রহ চিত্র পরীক্ষা করে পেয়েছেন, গত পাঁচ দশকের ভেতরে এই দ্বীপগুলির প্রায় ১৩০ বর্গ কিলোমিটারের সমান এলাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তলিয়ে গেছে নদী এবং গভীর সমুদ্রে। এমনকি এই প্রক্রিয়া এখনও পর্যন্ত চলমান। 

অর্থাৎ সরকারের উদাসীনতা না কাটলে এইভাবেই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকা ক্ষয়প্রাপ্ত হতেই থাকবে। কেবলমাত্র তাই নয়, সুন্দরবনের জঙ্গলে ঢাকা বিভিন্ন দ্বীপ এলাকাগুলির এই পাঁচ দশকের ভেতরে প্রায় ৮০ বর্গ কিলোমিটার এলাকা এবং বসতি দ্বীপগুলির প্রায় ৪৯ বর্গ কিলোমিটার এলাকা ক্ষয় হয়েছে। তবে এই এলাকাগুলিতে যে কেবলমাত্র ক্ষয় হয়েছে তা নয়। ক্ষয়ে যাওয়া পলি বছরের পর বছর জোয়ারের টানে ভেসে এসে নদী খাতে জমতে জমতে প্রায় নতুন ভূমিও তৈরি করেছে, যা প্রায় ৯০ বর্গ কিলোমিটার সমান।

তবে চিন্তা এখানেই শেষ নয়। সাগরদ্বীপ সংলগ্ন লোহাচরা এবং বেডফোর্ড ও ল্যাসদ্বীপ এলাকা সমুদ্রে তলিয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। এমনকি পর্যটনের জন্য বিখ্যাত ঘোড়ামারা দ্বীপও ক্রমাগত ছোট হয়ে আসছে। তবে উল্টোদিকেই, হলদি নদীর মোহনায় সম্প্রতি এক নতুন দ্বীপ জেগে উঠেছে। 

জেলা প্রশাসনের এক কর্তার অভিযোগ, আইআইটি. চেন্নাই থেকে বিশেষজ্ঞদের একটি দল এসে এলাকা পরিদর্শন করার পর সাগরদ্বীপ এলাকাকে রক্ষা করার জন্য জোয়ারের নিম্নসীমা থেকে প্রায় ২০০ মিটার দক্ষিণে একটি বড় প্রাচীর নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিলেন, তবে কেন্দ্রের অসহযোগিতায় সেই কাজ বহুদিন যাবত আটকে আছে। 

পাথরপ্রতিমা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ এলাকায় প্রশাসন বেহাল অবস্থায় পড়ে থাকা একাধিক নদীবাঁধ সম্প্রসারণ করে তা কংক্রিটের বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু সেই কাজও এখনো পর্যন্ত শেষ হয়নি। গোটা পশ্চিমবঙ্গ এবং উপকূলবর্তী এলাকার জন্য সবথেকে বিপদজনক খবর হলো, সুন্দরবন ছোট হয়ে আসছে। সম্প্রতি হওয়া একাধিক ঝড়ের কারণে প্রচুর ম্যানগ্রোভ এলাকাও ধ্বংস হয়েছে। 

বর্তমান সত্যি এটাই যে, পৃথিবীর বৃহত্তম ব-দ্বীপ সুন্দরবন ধীরে ধীরে ছোট হয়ে আসছে। সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছে কয়েকশো বর্গ কিলোমিটার এলাকা। কেবলমাত্র সরকারের উদাসীনতার কারণে আমরা হারিয়ে ফেলছি ভারতবর্ষের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র এবং বড় বড় ঝড় থেকে আমাদেরকে রক্ষা করার জন্য পরিবেশের তরফ থেকে আমাদেরকে দেওয়া প্রাকৃতিক ম্যানগ্রোভ প্রাচীরের মতো বহু মূল্যবান উপহারটিকে।







 


‌‌

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন