সমকালীন প্রতিবেদন : আজকের খবর ভারতীয়-আমেরিকান গণিতবিদ কালিয়ামপুরি রাধাকৃষ্ণ রাও কে নিয়ে, যাকে নিয়ে সমস্ত ভারতীয় এবং আমেরিকানরা বাদেও গোটা গণিতমহল অত্যন্ত গর্বিত। সি. আর. রাও ২০ শতকের অন্যতম প্রভাবশালী পরিসংখ্যানবিদ হিসেবে বিবেচিত।
স্বক্ষেত্রে তাঁর যুগান্তকারী অবদানের জন্য পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কারেও ভূষিত হয়েছেন। রাও প্রথম পরিসংখ্যানের বৈপ্লবিক ধারণা চালু করার ৭৫ বছরেরও বেশি সময় পরে এই পুরস্কারটি আসে, যা আজও বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলেছে।
কর্ণাটকের একটি তেলেগু পরিবারে জন্মগ্রহণ মিস্টার রাওয়ের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে এমএসসি ডিগ্রি অর্জনের আগে বিশাখাপত্তনমে অধ্যয়ন করে তাঁর অ্যাকাডেমিক যাত্রা শুরু করেন। পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে সফল কর্মজীবন শুরু করার আগে তিনি কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের কিংস কলেজ থেকে পিএইচডি এবং ডিএসসি অর্জন করেন।
কেমব্রিজের নৃতাত্ত্বিক জাদুঘর, পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয় এবং পিটসবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো প্রতিষ্ঠানগুলিতে কাজ করার আগে রাও-এর কাজ ভারতীয় পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউটে শুরু হয়েছিল। আজ তিনি বাফেলো বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর, যেখানে তিনি তাঁর যুগান্তকারী কাজের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের পরিসংখ্যানবিদদের অনুপ্রাণিত করেছেন এবং এখনও করে চলেছেন।
গোটা কর্মজীবন জুড়ে রাও ১৯৬৮ সালে পদ্মভূষণ এবং ২০০১ সালে পদ্মবিভূষণ সহ অসংখ্য পুরস্কার এবং প্রশংসায় ভূষিত হয়েছেন। পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে তাঁর অবদান এতটাই তাৎপর্যপূর্ণ যে, আধুনিক পরিসংখ্যানে ব্যবহৃত সমস্ত সূত্রের উপর ভিত্তি করে তাঁর তিনটি তত্ত্ব।
পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে রাও-এর প্রভাব এতটাই গভীর ছিল যে, তাঁকে 'আধুনিক পরিসংখ্যানের জনক' বলা হয়ে থাকে। তাঁর কাজ চিকিৎসা থেকে অর্থনীতি বা সামাজিক বিজ্ঞান পর্যন্ত বিস্তৃত ক্ষেত্র জুড়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণার অগ্রগতিতে সাহায্য করেছে।
তাঁর অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেষ পর্যন্ত ১০২ বছর বয়সে 'দ্যা ইন্টারন্যাশনাল প্রাইস ফর স্ট্যাটিসটিক ফাউন্ডেশন' এর পক্ষ থেকে রাওকে পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রদান করা হয়েছে। এই পুরস্কারটিকে সাধারণত 'পরিসংখ্যানের নোবেল পুরস্কার' বলা হয়ে থাকে।
পুরস্কারটি ৮০ হাজার ডলারের একটি পুরস্কার বহন করে এবং পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এটিকে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরষ্কার হিসাবে বিবেচনা করা হয়। পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কার প্রতি দুই বছর অন্তর দেওয়া হয়। রাও-এর করা বিখ্যাত আবিস্কারের মধ্যে অন্যতম হলো, 'ক্র্যামার-রাও বাউন্ড' এবং 'রাও ব্ল্যাকওয়েল উপপাদ্য' উল্লেখযোগ্য।
কানাডার অন্টারিওতে আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ইনস্টিটিউট আয়োজিত বিশ্ব পরিসংখ্যান কংগ্রেসে এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এই পুরষ্কারটি নোবেল, অ্যাবেল এবং ফিল্ডস পদকের মতোই মর্যাদাপূর্ণ এবং পরিসংখ্যানের ক্ষেত্রে এটিকে সবথেকে মর্যাদাপূর্ণ সম্মানগুলির মধ্যে একটি হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিসংখ্যানবিদদের একজন হিসাবে রাও এর কাজ নতুন আবিষ্কার এবং অগ্রগতির পথ তৈরি করেছে। বিজ্ঞানের গবেষণায় তাঁর প্রভাব বলে শেষ করা সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানে আন্তর্জাতিক পুরস্কারের প্রাপ্তি হলো তাঁর অবিশ্বাস্য কৃতিত্বের একটি প্রাপ্য স্বীকৃতি।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন