সমকালীন প্রতিবেদন : বিয়ের আয়োজন ততক্ষণে সম্পন্ন। আজির দুপক্ষের আত্মীয় পরিজন। তারই মধ্যে হঠাৎ করেই ছন্দপতন। বিয়ের আসনে পুলিশ নিয়ে হাজির বিডিও। আর বিডিও এবং পুলিশকে দেখে বিপদ বুঝে বিয়ের আসর ছেড়ে পালালো পাত্র।
উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট মহকুমার হাসনাবাদ থানার বরুনহাট গ্রাম পঞ্চায়েতের কাটাখালি গ্রামে গতকাল বসেছিল এই বিয়ের আসর। আসলে এদিন বছর ১৬ বয়সের এক নাবালিকা ছাত্রীর সঙ্গে প্রতিবেশী যুবক বছর ২৪ এর বাপি মোল্লার বিয়ে ঠিক করেছিল নাবালিকার পরিবার।
অভিযোগ, এই বিয়েতে রাজি ছিল না ওই নাবালিকা ছাত্রী। একপ্রকার জোরকরেই বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছিল নাবালিকার বাবা–মা। বিয়ের কথা জেনে ওই ছাত্রী নিজেই গ্রামের বড়দের পুরো বিষয়টা জানায়। এই ঘটনা জানতে পেরে মঙ্গলবার গ্রামেরই একটি আত্মীয়ের বাড়িতে এই বিয়ের ব্যবস্থা করে নাবালিকার পরিবার।
অত্যন্ত গোপনে পাত্র এবং পাত্রীর পরিবার এই বিয়ের আয়োজন করলেও প্রতিবেশীরা সে কথা জানতে পেরে তাদের পক্ষ থেকে বিডিও অফিসের টোল ফ্রি নম্বরে ফোন করে বিষয়টি জানানো হয়। খবর দেওয়া হয় চাইল্ড লাইনকেও।
এরপরই হাসনাবাদের বিডিও অলিভিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় এবং জয়েন বিডিও ফায়সাল আহমেদ হাসনাবাদ থানার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এদিন রাতে ওই বিয়েবাড়িতে হাজির হন। সঙ্গে ছিলেন চাইল্ড লাইনের প্রতিনিধিরাও। আচমকা পুলিশ এবং প্রশাসনের লোকদের দেখে হকচকিয়ে যান বিয়েবাড়ির লোকেরা।
বিপদ বুঝে বিয়ের আসর থেকে পালিয়ে যায় পাত্র বাপি মোল্লা। বিডিও অলিভিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় নাবালিকা পাত্রী এবং তার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন। নাবালিকার পরিবারকে তিনি বোঝান যে, কোনও নাবালিকা মেয়েকে বিয়ে দেওয়া আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। তাই এই বিয়ে দেওয়া যাবে না।
প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় যে, নাবালিকার পড়াশোনার থেকে শুরু করে সবরকম সাহায্য বিনা পয়সায় ব্যবস্থা করবে প্রসাসন। পাশাপাশি, বিয়ের উপযুক্ত বয়স হলে রূপশ্রীর মাধ্যমে যে অর্থ পাবে, তা পাওয়ার ক্ষেত্রেও সবরকম সাহায্য করবে প্রশাসন।
প্রশাসনের আশ্বাসে বিয়ে বন্ধ করার পাশাপাশি পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিত মুচলেকা দিয়ে বলা হয় যে, ওই নাবালিকা যতদিন সাবালিকা না হচ্ছে, ততদিন তার বিয়ের ব্যবস্থা করা হবে না। নাবালিকাকে বিয়ে করার চেষ্টার ঘটনায় পাত্রের বিরুদ্ধে হাসনাবাদ থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে।
হাসনাবাদের বিডিও অলিভিয়া বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নাবালিকার বিয়ে বন্ধ করার জন্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে সচেতনা অভিযান চালানো হচ্ছে। নাবালিকাদের নানা সরকারি প্রকল্পের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। তারপরেও কিছু মানুষ নাবালিকাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। সেব্যাপারে প্রশাসন সচেষ্ট রয়েছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন