সমকালীন প্রতিবেদন : ভারতবর্ষে শীত পড়লেই দূর-দূরান্তের দেশ থেকে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিরা উড়ে আসে মাস কয়েকের জন্য। মূলত অত্যন্ত শীতপ্রধান দেশগুলির কড়া শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য পরিযায়ী পাখিরা কয়েক হাজার কিলোমিটার উড়ে ভারতবর্ষে আসে এখানকার নাতিশীতোষ্ণ আবহাওয়ায় নিজেদের প্রজনন করার জন্য এবং খাবারের খোঁজে।
তেমনি এই রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জের একটি জলাশয়েও বহু বছর ধরে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখিদের আনাগোনা চলতেই থাকে। তবে সেই পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে এইবার দেখা গিয়েছে একটি অত্যন্ত বিরল প্রজাতির পাখির তুন্দ্রা বিন গুস এর।
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জে পানিশালা এলাকায় দীপ রাজার দীঘি নামক একটি জলাশয় অবস্থিত। বহু বছর ধরেই সেই জলাশয়ে বিভিন্ন পরিযায়ী পাখি এবং হাঁসের আনাগোনা চলতেই থাকে। তবে এইবার সেই পরিযায়ী প্রজাতির পাখিগুলির মধ্যে দেখা গেল এক বিরল প্রজাতির হাঁস তুন্দ্রা বিন গুস এর। এই পাখিটি একটি সাইবেরিয়ান প্রজাতির হাঁস, যা কিনা ভারতবর্ষে দেখা পাওয়া খুবই দুর্লভ।
স্থানীয় বাসিন্দা মীর ফিরোজ আলী জানান, 'আগে আরও বেশি পাখি এবং বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসের দেখা পাওয়া যেত। বর্তমানে তার সংখ্যা বেশ কিছুটা কমে গেছে। তবে গত ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে এই জলাশয়টিতে এইরকম প্রচুর হাঁস আমি দেখে আসছি। যদিও এই নতুন প্রজাতির হাঁসকে এর আগে কখনও দেখিনি।'
নতুন প্রজাতির এই হাঁসের কথা জানামাত্রই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রচুর পাখিপ্রেমিক এবং বার্ড ফটোগ্রাফারেরা ভিড় জমাতে শুরু করেছেন এই স্থানে। বার্ড ফটোগ্রাফার এবং বিশেষজ্ঞদের কথা অনুযায়ী, এই অঞ্চলে উত্তর ইউরোপীয় এবং রাশিয়া, সেইসঙ্গে উত্তর এশিয়ার এক প্রজাতি গ্রে ল্যাগ গুস নামক হাঁসের দেখা পাওয়া যেত।
ভারতবর্ষে এসে থাকা মোট এই প্রজাতির হাঁসের মধ্যে তাদের প্রায় এক চতুর্থাংশ হয়তো এই এলাকাতেই আছে। তবে তুন্দ্রা বিন গুস নামক এই হাঁসটিকে এর আগে কখনও দেখা যায়নি। এমনকি হাঁসটি এতটাই বিরল যে, রায়গঞ্জের এই দীঘিতে দেখা পাওয়া এই হাঁসটি হয়তো দ্বিতীয় অথবা তৃতীয়তম হাঁস, যেটি কিনা পশ্চিমবঙ্গে এসেছে। এর আগে ২০১৬ থেকে ১৮ সালের ভেতরে এই হাঁসটিকে রাজ্যের গাজলডোবায় একবার দেখা গিয়েছিল বলে জানান বিশেষজ্ঞরা।
তবে বিভিন্ন প্রজাতির হাঁসের মধ্যে থেকে এই তুন্দ্রা বিন গুস নামক হাঁসটিকে চেনার উপায় কি কি? হাঁসটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, এর ঠোঁট। অন্যান্য হাঁসের ঠোঁট কমলা রংয়ের হলেও এর ঠোঁটটি কালচে। ঠোটের উপরে একটি কমলা রঙের দাগ আছে। এমনকি এর শরীরের রং এবং অন্যান্য হাঁসেদের থেকে বেশ আলাদা।
এই পাখির গায়ের রং একটু কালচিটে। ডানার রং সম্পূর্ণ কালচে এবং ছাই রংয়ের। এই প্রজাতির হাঁসেরা মূলত জলাশয়ের বিভিন্ন উদ্ভিদ খেয়ে জীবনধারণ করে। শীত কেটে যাওয়ার পর এই পাখিরা আবারও নিজেদের বাসস্থানে ফিরে গিয়ে নিজেদের প্রজনন প্রক্রিয়া শুরু করবে।
এই বিরল প্রজাতির হাঁসের কথা জানার পর থেকেই কলকাতা, মালদা, শিলিগুড়ি, বালুরঘাট ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন পাখিপ্রেমী এবং বিশেষজ্ঞরা। এমনকি এই হাঁস দেখার জন্য দূরদূরান্ত থেকে ছুটে এসেছেন বিভিন্ন পর্যটকরাও। সবাই ব্যস্ত এর ছবি তোলার জন্য। এমনকি এই নতুন প্রজাতির আগমনের কথা জানতে পেরে বেশ উচ্ছ্বসিত এখানকার এলাকাবাসীরাও। তাদের কথা অনুযায়ী, তারা এর আগেও বিভিন্ন বিরল প্রজাতির পাখি এখানে দেখে থাকলেও এই নতুন প্রজাতির হাঁসের কথা তারা বনদপ্তরের কাছ থেকেই প্রথমবার জানতে পেরেছেন।
পাখি বিশেষজ্ঞ এবং এলাকাবাসীদের বনদপ্তর এর কাছে অনুরোধ, পরিযায়ী বিভিন্ন পাখি এবং এইরকম বিরল প্রজাতির পাখি এবং হাঁসেদের আনাগোনা যাতে চলতে থাকে, সেইজন্য তাদের দেখাশোনার ব্যবস্থা করা এবং সরকারিভাবে যাতে একটি পাখিরালয়ের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তার উদ্যোগ নেওয়া হোক।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন