সমকালীন প্রতিবেদন : ২৩ বছরের তরতাজা সন্তানকে হারিয়েও শুধুমাত্র মনের জোর এবং চিকিৎসকদের অদম্য প্রচেষ্টায় ৪৬ বছর বয়সে নতুন করে সন্তানের মুখ দেখলেন এক মা। তাঁর কথায়, অসাধ্য সাধন করেছেন চিকিৎসকেরা। শারীরিক নানা প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও তিনি সুস্থ সন্তানের জন্ম দিতে পারায় খুশি চিকিৎসকেরাও।
উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙার বাবুপাড়া এলাকার বাসিন্দা অঞ্জন মুখার্জী এবং তাঁর স্ত্রী শিখা মুখার্জীর জীবনে ঘটে যায় বড় অঘটন। বিফার্ম পাশ করে চাকরিতে যোগদানের অপেক্ষায় তাঁদের ২৩ বছরের একমাত্র সন্তান অর্ণব মুখার্জী গতবছরের ৭ জুলাই রাতে আচমকাই মারা যান।
একমাত্র সন্তানকে এভাবে হারিয়ে হতাশগ্রস্থ এই দম্পতি এরপর মানসিক অবসাদে ভুগতে শুরু করেন। কিন্তু হার না মেনে নিজেরা আলোচনা করে নতুন করে বাঁচার সিদ্ধান্ত নেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রসূতি ও স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা: অরিন্দম মজুমদারের কাছে আসেন ওই দম্পতি।
সমস্ত কিছু শুনে তিনি ওই দম্পতিকে আশ্বস্ত করেন। ডা: মজুমদার তাঁর সিনিয়র চিকিৎসক অভিষেক দাগারও পরামর্শ নেন। এব্যাপারে নতুন করে সন্তান ধারণ করানোর জন্য ডা: অরিন্দম মজুমদারের তত্ত্বাবধানে ডিসেম্বর মাস থেকে শুরু হয় চিকিৎসা।
মার্চ মাস নাগাদ শিখাদেবী বুঝতে পারেন যে, তিনি গর্ভবতী হয়েছেন। আর তারপর গত রবিবার তিনি একটি সুস্থ কন্যাসন্তানের জন্ম দেন। নতুন করে সন্তানের মুখ দেখতে পেয়ে চিকিৎসকদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিখাদেবী। তিনি চিকিৎসককে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
তিনি জানালেন, ছেলেকে হারিয়ে যে শোক পেয়েছি, নতুন করে সন্তানের মুখ দেখে কিছুটা হলে তার থেকে মুক্তি দিয়েছেন চিকিৎসকেরা। তাই কখনও হাল না ছাড়ার আবেদন জানিয়েছেন সন্তান লাভের আশায় থাকা অন্য মহিলাদের।
শিখাদেবীর স্বামী অঞ্জন মুখার্জী জানালেন, সন্তানকে হারিয়ে তাঁরা দুজনেই বিপর্যস্ত হয়ে পরেছিলেন। এরপর এক পরিচিতের মাধ্যমে ডা: অরিন্দম মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তাঁর মানবিক ভূমিকায় তিনি এবং তাঁর স্ত্রী নতুন করে বাঁচার স্বাদ পেয়েছেন।
আর এব্যাপারে ডা: অরিন্দম মজুমদার জানালেন, 'শিখাদেবী এবং তাঁর স্বামীর মুখ থেকে সমস্ত ঘটনা জানার পর আমরাও মনস্থির করেছিলাম, শিখাদেবীকে নতুন করে মাতৃত্বের স্বাদ এনে দেওয়ার জন্য আমরা সর্বতোভাবে চেষ্টা করবো। অনেক প্রতিবন্ধকতাকে জয় করে অবশেষে সাফল্য এসেছে।'
শুধু সুস্থ সন্তান জন্ম দেওয়াই নয়, শিখাদেবী নিজেও এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। তাঁর এবং তাঁর স্বামীর হাসিমুখ দেখে খুশি নার্সিং হোমের সবস্তরের স্বাস্থ্যকর্মীরা। গ্রামের একটি ছোট্ট নার্সিং হোমেও যে এমন ঘটনা ঘটানো সম্ভব, তা আরও একবার প্রমান করলেন ডা: মজুমদার।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন