Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২

উনিশ শতকে কলকাতার দুর্গাপুজো : পর্ব– ১

Durga-Puja-in-Calcutta-in-the-19th-century-Part-1

উনিশ শতকে কলকাতার দুর্গাপুজো : পর্ব– ১

স্বপন ঘোষ 

দুর্গোৎসব বাংলা দেশের পরব। উনিশ শতকে বাংলা ছাড়া ভারতের অন্য প্রদেশে দুর্গাপুজোর নাম গন্ধ ছিল না। বোধহয়,  রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমল থেকে বাংলায় দুর্গোৎসবের প্রাদুর্ভাব বাড়ে। কিংবদন্তি আছে যে, রাজশাহী জেলার তাহেরপুরের রাজা কংসনারায়ণ আকবর বাদশাহের সময় বাংলায় প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। 

নদীয়ার রাজা কৃষ্ণচন্দ্র ১৭২৮ খ্রিস্টাব্দে সিংহাসন লাভ করার পর সাড়ম্বরে দুর্গোৎসব প্রবর্তন করেন। খুব সম্ভব সাধারণ জনের মধ্যে দুর্গোৎসব জনপ্রিয় করার কৃতিত্বও তাঁর। 

১৭.১০.১৮২৯ তারিখের 'সমাচার দর্পণ' মন্তব্য করে যে, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র সর্বপ্রথম দুর্গোৎসবে বড় জাঁকজমক করেন এবং তাঁর দৃষ্টান্ত দেখে ব্রিটিশ সরকারের আমলে যাঁরা ধনী হয়েছেন, তাঁরা দেশের অধিপতির সামনে নিজেদের সম্পদ প্রদর্শন করতে আর ভীত নন। 

ফলে তাঁরাও এইসব ব্যাপারে প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, রাজা কংসনারায়ণের পৌত্র উদয়নারায়ণের সভাপণ্ডিত আচার্য রমেশ শাস্ত্রী কৃত দুর্গাপুজোবিধিকে কৃষ্ণচন্দ্র নবদ্বীপের পণ্ডিত সমাজের সহযোগিতায় আরও সরল ও সহজসাধ্য করিয়ে নেন সকলের সুবিধার্থে। 

উনিশ শতকে কৃষ্ণনগরের কারিগররাই কলকাতার কুমোরটুলি ও সিদ্ধেশ্বরীতলায় এসে ঠাকুর গড়তেন। কুমোরটুলিতে প্রতিমা নির্মাণের স্থায়ী ব্যবস্থা তখনও হয়নি। 

দুর্গাপুজোর সময় এলেই জায়গায় জায়গায় রং করা পাটের চুল, জরি ও শলমার কাজ করা মালা, টিন ও পিতলের তৈরি অসুর ও দুর্গার ঢাল তলোয়ার, নানা রঙে চোবানো প্রতিমার কাপড় ঝুলত। 

দর্জিরা ছেলেদের টুপি, চাপকান নিয়ে দরজায় দরজায় ফেরি করে বেড়াত। 'মধু চাই!' 'শাঁখা নেবে গো!' বলে ফেরিওয়ালা ডেকে ডেকে ঘুরত। ঢাকাই ও শান্তিপুরী কাপড়ের মহাজনরা, আতরওয়ালা ও যাত্রার দালালরা আহার-নিদ্রা ভুলে কাজে নেমে পড়ত। 

কোনওখানে কাঁসারির দোকানে রাশীকৃত মধুপর্কের বাটি, চুমকি ঘটি ও পিতলের থালা ওজন হচ্ছে দেখা যেত। সিঁদুর-চুপড়ি, মোমবাতি, পিঁড়ে ও কুশাসনেরা অবসর বুঝে দোকানের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসত। 

এতদিন জুতোর দোকান ধুলো ও মাকড়সার জালে পরিপূর্ণ ছিল। কিন্তু পুজোর মরশুমে নতুন করে সেজে উঠত। পুজো যত এগিয়ে আসত,  বাজারের কেনাবেচা ততই বাড়ত, ততই কলকাতা গরম হয়ে উঠত। 

পল্লীগ্রামের টুলো অধ্যাপকরা বৃত্তি ও বার্ষিক ভাতা আদায়ে বেরিয়ে পড়তেন। বৃত্তি হিসাবে তাঁরা পেতেন হয় নগদ অর্থ অথবা মাঠের ফসল। কিন্তু বার্ষিক যেহেতু কোনও পার্বণে দেওয়া হতো, তাই তাতে অর্থের পরিবর্তে পিতলের থালা, চিনি বা মিষ্টান্নও জুটত। 

পুজোর মরশুমে কলকাতায় খুন-জখম, দাঙ্গা, সিঁদ চুরি, গাঁটকাটা, ছিনতাই এসব লেগেই থাকত। পাহারাওয়ালারা শশব্যস্ত, বদমাইশ ধরতে পুলিশ ব্যস্ত। চোরেরা পুজোর সময় দেদার কারবার ফলাত। 

"লাগে তাক না লাগে তুক্কো", "মারিতো গন্ডার লুটিতো ভাণ্ডার" তাদের জপমন্ত্র হতো। অনেকে পার্বণের আগে শ্রীঘরে অথবা বাঙ্কুলে অর্থাৎ ব্রিটিশের দ্বারা ব্রহ্মদেশ, সুমাত্রায় প্রেরিত হতো। 



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন