Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শনিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৮)‌

 

Why-Rohingya-refugees-Episode-8

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৮)‌

              অজয় মজুমদার

মায়ানমারের দুর্গত রোহিঙ্গারা আপাতত সবাই 'সন্ত্রাসবাদী'‌। অন্তত মায়ানমার সরকারের কথায় তেমনই মনে হয়। আমাদের দেশের শাসকরাও ওই একই কথায় সায় দিচ্ছেন ৷ ১১ লক্ষ মানুষ একসঙ্গে সদলবলে জঙ্গী হয়ে গেল, এটা সম্ভব ? মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশে, যেখানে রোহিঙ্গাদের বাস, সেখানে ২৫ আগস্ট ২০১৭ থেকে ফের শুরু হলো তান্ডব ৷ তাতে বৃদ্ধ, যুবক,মহিলা, ৬ বছরের শিশু– কেউ বাদ পরল না। রাষ্ট্রপুঞ্জের উদ্যোগে প্রচারিত উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, রোহিঙ্গা অধ্যুষিত বিস্তীর্ণ এলাকা এবং মানুষ আগুনে পুড়ে মারা গেল, গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া হলো।

এ প্রসঙ্গে কিছু পেছনের কথা স্মরণ করা যাক। এশিয়ার একটি দেশ ভিয়েতনাম। পূর্ব ও দক্ষিণ চীন সাগর এলাকা ৩,২২,৩৩৮ বর্গ কিমি। সময়কাল ১৮৫৮। ফরাসি ঔপনিবেশিকরা আক্রমণ করল ভিয়েতনাম ৷ সেদিন উত্তর ভিয়েতনাম থেকে দক্ষিণ ভিয়েতনামে মানুষ সেই আক্রমণ প্রতিরোধে নামেন। লড়াই করার দীর্ঘ ঐতিহ্য ভিয়েতনামের মানুষের ছিল। উত্তর দিক থেকে আসা সামন্ত প্রভুদের রিরুদ্ধে তাদের বারে বারে লড়তে হয়েছে। কিন্তু ফরাসিদের বিরুদ্ধে অনেক সংগ্রাম করার পরও প্রতিরোধ ব্যর্থ হয়। আর তার ফলে ভিয়েতনামে শুরু হয় আধা–সামন্ততান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা।

এক্ষেত্রে মায়ানমারের সাধারণ মানুষই তো রোহিঙ্গাদের পক্ষে নেই ৷ তাদের পক্ষে ওই রাষ্ট্রীয় শক্তির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাটা তো ভীষণ কঠিন। যে দেশ একটা গোষ্ঠীকেই নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য গণহত্যা চালায়, তাদের কাছে মানবতাবোধ আশা করা যায় না। কিন্তু এখানেই ভিয়েতনামের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়। এমন পরিস্থিতিতে ভিয়েতনামের মানুষ বাঁচার জন্য মরিয়া লড়াই করার শপথ নিয়েছিল।

উত্তর–পূর্ব ভারতে জাতি দাঙ্গা অনেকবার হয়েছে। বো‌ড়ো মুসলমান, বোড়ো আদিবাসী সংঘর্ষে ব্যাপক মানুষ উৎখাত হয়েছে ৷ ত্রিপুরা উপজাতি বাঙালির ধারাবাহিক দাঙ্গা, মণিপুরে নাগা– কুকি ও কুফি–পেইতি সংঘর্ষ এবং সাম্প্রতিক বছরগুলিতে অসমের কার্বি অংলং জেলায় বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের কথা আমাদের জানা। ১৯৯৩ এর ১৮ সেপ্টেম্বর অসমে নেলি গণহত্যা সংঘটিত হয়। সরকারি হিসাবে ২১৯১ জন মারা যান। বেসরকারি হিসাবে তা ৫ হাজারের বেশি। 

১৯৯৩ এর অক্টোবরে বঙ্গাইগাঁও- এ আরও একটি সংঘর্ষে প্রায় ৫০ জন প্রাণ হারান। প্রায় পাঁচ হাজার পরিবার কোকড়াঝাড় ও বঙ্গাইগাঁও–এর ত্রান শিবিরে আশ্রয় নিয়ে বহুদিন পর্যন্ত থাকতে বাধ্য হয়। বর্তমানে লেখক তা চাক্ষুষ পর্যবেক্ষণ করে এসেছেন। ঐতিহাসিকরা সহমত এবং দেশের প্রাচীন ইতিহাস থেকে জানা যায় যে, এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া ও সময় জুড়ে জনজাতি/ উপজাতি সমাজ ব্যবস্থা থেকে বর্ণভিত্তিক মূল ধারার সমাজ ব্যবস্থাতে উত্তরণ ঘটেছে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন