Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

শুক্রবার, ১০ সেপ্টেম্বর, ২০২১

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৭)‌

 

Why-Rohingya-refugees-Episode-6

রোহিঙ্গা শরনার্থী কেন ? (‌‌পর্ব-৭)‌

অজয় মজুমদার

উত্তর মায়ানমারের রাখাইন প্রদেশের রোহিঙ্গাদের নিয়ে সমস্যা সেদেশের কাছে একটা সংকট। যা কিনা ক্রমেই তীব্র হচ্ছে ৷ রোহিঙ্গাদের হাতে সম্প্রতি আক্রান্ত হচ্ছে সে দেশের পুলিশ। ভারত এই কাজকে তীব্র ভাষায় নিন্দা করে জানিয়েছে, মায়ানমারের পাশেই নয়াদিল্লি থাকতে চায়। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রভীন কুমারের কথায়, 'মায়ানমারের নিরাপত্তাকর্মীদের প্রাণহানিতে আমরা ব্যথিত‌। কঠোর ভাষায় এই হামলার নিন্দা করা উচিত।'‌ অথচ ২০১৫ সালে মোদি সরকারই বিজ্ঞপ্তি জারি করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে ধর্মীয় হানাহানির ভয়ে পালিয়ে আসা শরনার্থীদের আশ্রয় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, পার্শি, জৈন ও শিখদের কথা বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়। 


২০১৭ সালের ৯ অক্টোবর ঘরবাড়ি ছেড়ে দাঁত কামড়ে পড়ে থাকা রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে নাফ নদী পেরোতেই নৌকাডুবি ঘটে ৷ তাতে ১২ জনের মৃত্যু হয় এবং তার মধ্যে ১০ জনই শিশু ৷ এই পরিস্থিতিতে রোহিঙ্গাদের পুশব্যাক করা, না করার সিদ্ধান্তের পেছনে রাজনৈতিক চাপ দেখছেন অনেকে ৷ মোদি সরকার যেভাবে রোহিঙ্গাদের সমস্যার মোকাবিলা করছে, তাতে কেবল বিশ্বের গণতন্ত্রপ্রিয় মানুষরাই হতাশ হননি, জনসংখ্যায় বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের নাগরিকরাও হতাশ। এই অবস্থায় ভারতের পক্ষে মায়ানমারের জেনারেল মিং অউং লাং এবং তার খুনে অনুগামীদের পক্ষে পাশে দাঁড়ানোটা একেবারেই বেমানান। 

পুরো ঘটনা ও ইতিহাস না জেনে, তার গোড়ায় না গিয়ে কেবলমাত্র কয়েকটি বিক্ষিপ্ত ঘটনার ওপর ভিত্তি করে একটি গোটা জাতিকে অপরাধের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোটা সমীচীন নয়। বরং মায়ানমারের ক্ষতিগ্রস্তদের এখন অন্তত প্রচুর অর্থ এবং চিকিৎসার উপকরণ দিয়ে সাহায্য করলে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হত। তা না করে, ভারত যে ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল, তা অদক্ষতা ও অদূরদৃষ্টিমূলক পদক্ষেপ, সেই ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ও বহুসংস্কৃতির বেলাভূমির যুক্তরাষ্ট্র হিসাবে ভারত পরিচিত। এখনই দুনিয়ার কাছে এটা প্রমাণ করা কি উচিত হবে, যে তারা ইসলাম ফোবিয়ার উপাসক নয় ৷ ভারতের রাষ্ট্রনায়কদের ভাবতে হবে, রোহিঙ্গারা যদি হিন্দু হতো, তবে কি সব দায় এড়াতে পারত? 

সন্ত্রাসবাদি অপবাদ দেওয়াটা কতটা প্রাসঙ্গিক। শারীরিক ও মানসিক এমন অত্যাচার ও অপমান দিনের পর দিন সহ্য করতে হয়েছে। তার পরেও কেন রোহিঙ্গারা জঙ্গি হয়ে যায়নি, সেটাই বড় বিস্ময়ের ৷ রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদি তকমা দিয়ে যারা তাদের উপর রাষ্ট্রীয় আক্রমণের যুক্তি খাড়া করেছেন, সেই পরিপ্রেক্ষিতে তারা কোফি আন্নান কমিটির বক্তব্যটি মন দিয়ে শুনলে ভালো করবেন ৷ পরিষ্কার কথা, মার খেতে খেতে দেওয়ালে যখন পিঠ ঠেকে যায়, তখন আক্রান্তরা পাল্টা মার দেবেই এবং তাদের উগ্রপন্থী হয়ে ওঠার সম্ভাবনা প্রবল হয়। বাস্তুহারা, দিশেহারা, পরিচয়হারা, সহায় সম্বলহীন মানুষেরা একসময় জঙ্গী আগ্রাসনে অভ্যস্ত হয়ে উঠবে। 

আর এমন সুযোগই তো এগিয়ে আসে বিদেশি শক্তিশালী জাতিগোষ্ঠীর সাহায্যের হাত। যেমন মায়ানমারে, আরাকান স্যালভেশন আর্মির হাতে নাকি ধরা পড়েছে লস্কর-ই-তৈবা গোষ্ঠীর সদস্য। সেই সন্ত্রাসের কঠোর মোকাবিলা অবশ্যই করা দরকার। কিন্তু কেন এই উগ্রপন্থীদের জন্ম হচ্ছে ? তার জন্য রাষ্ট্রকে বৃহৎ একটি দায়িত্ব পালন করতে হবে। কিন্তু মায়ানমার সরকার তা শুনতে রাজি নয়। শুনতে রাজি নয় ভারত সরকারও ৷ এই উত্তাল সময়েই ভারতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্রায় ৪০ হাজার রোহিঙ্গাকে উৎখাত করতে উদ্যোগ নিয়েছে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।




কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন