Breaking

Post Top Ad

Your Ad Spot

মঙ্গলবার, ১০ আগস্ট, ২০২১

উত্তর সম্পাদকীয় : ডোম বনাম ইঞ্জিনিয়ার

Dom-vs-Engineer

ডোম বনাম ইঞ্জিনিয়ার

বাসুদেব পাল

ডোমের চাকরিতে ইঞ্জিনিয়ার আবেদন করেছেন। তাই নিয়ে তোলপাড় চলছে। এর আগেও অনেকবার এই ধরনের খবর প্রকাশিত হয়েছে। কখনো ডোমের চাকরির জন্য পিএইচডি হোল্ডার, কখনো বন দপ্তরের অস্থায়ী রক্ষীর চাকরির জন্য অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষ আবেদন করেছেন। আমার মনে হয় এটা নিয়ে এতো হইচই করার মতো কিছু নয়। এখন তো কোন পেশাই আর নির্দিষ্ট কারো জন্য সংরক্ষিত নয়। যেকোনো কাজ যে কেউ করতে পারেন। 

তাহলে এতো হইচই কেন? আসলে ব্যাপারটা কি ? দেশে শিক্ষার হার যখন অতি সামান্য ছিল, যখন ডিগ্রিধারী মানুষ খুঁজে পাওয়া যেত না, তখন চাকরির ক্ষেত্রে যে শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রয়োজন হতো, এখন শিক্ষার হার এত বেশি হওয়ার পরেও চাকরির যোগ্যতা সেই একই রয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে, ৭০ বছর আগে যে চাকরি অষ্টম শ্রেণী পাশে পাওয়া যেতো, এখনও সেই চাকরি অষ্টম শ্রেণী পাশ করলেই আবেদন করা যায়। এটা কেন থাকবে? পাশাপাশি যে পরিমাণ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ খোলা হয়েছে এবং সেখান থেকে যত সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ার তৈরি হচ্ছেন, তত সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ারের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে চাকরির ব্যবস্থা হয়েছে কি ? না হলে সেই ইঞ্জিনিয়াররা কোথায় যাবেন ? আবার যত সংখ্যক শিক্ষার্থী বিএড বা ডি এল এড করছেন, তত সংখ্যক শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা হয়েছে কি ? না হলে বিএড বা ডিএলএড করে তাঁরা কোথায় যাবেন ? যত সংখ্যক পিএইচডি করার সুযোগ আছে, তত সংখ্যক পিএইচডি হোল্ডারের কাজে নিযুক্ত হওয়ার সুযোগ আছে কি ? না থাকলে পিএইচডি হোল্ডাররা কোথায় যাবেন ? সমস্ত ক্ষেত্রেই এই একই কথা প্রযোজ্য। 

স্বাভাবিকভাবেই যখনই কোথাও কোনও নিয়োগের প্রশ্ন আসছে সবাই ঝাপিয়ে পড়ছেন। যদি নির্দিষ্ট যোগ্যতাসম্পন্ন প্রার্থীদের জন্য নির্দিষ্ট কাজের সুযোগ থাকত, তাহলে এই ঘটনা ঘটত না। ততো সুযোগ হয়তো তৈরি করা সম্ভব নয়। যদি সম্ভব না হয়, তাহলে কোনও পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে এইরকম আবেদন দেখে বিস্মিত হওয়ার কিছু নেই। বরং এই সমস্ত নিয়ে হৈচৈ করাটা আসলে একপ্রকার অপমান। ডোমের কাজ ইঞ্জিনিয়ার করতে পারবেন না, এমনটা ভাবারই বা কি আছে ? যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারকে ইঞ্জিনিয়ারিং কাজ করার সুযোগ আমরা করে দিতে পারিনি, সেহেতু তিনি যদি স্বেচ্ছায় ইঞ্জিনিয়ারিং এর বাইরে অন্য কোনও কাজ করতে চান, তা নিয়ে এতো হৈচৈ করার কি আছে ? উচ্চ শিক্ষিত মানুষের আবেদন জমা পড়েছে তাই তোলপাড় হচ্ছে। কিন্তু যারা নীরবে প্রতিদিন অনেক পরিশ্রম করে সংসার চালাতে পারছেন না, তাঁদের নিয়ে হৈচৈ কোথায় ? 

খোঁজ নিলে হাতের কাছে দেখা যাবে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে চপের দোকান দিয়েছেন, হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়ার পর ইটভাটায় কাজ করছেন, পিএইচডি করে সবজি বিক্রি করছেন কিংবা মাছ বিক্রি করছেন। অনেক অনেক উচ্চশিক্ষিত মানুষ চাকরির অভাবে অনেক রকমের কাজ করছেন, যা সব সময় প্রচারে আসে না। উচ্চ শিক্ষিত হবার পর উপযুক্ত কাজের অভাবে আত্মহত্যা করার ঘটনাও কম ঘটেনি। সমস্ত দিক বিচার না করে হইচইটা এককেন্দ্রিক কেন ? বরং এই সমস্ত হইচই বন্ধ হয়ে উপযুক্ত পরিকল্পনা তৈরি হোক, যাতে সঠিকভাবে কর্মসংস্থানের সুযোগ থাকে। 

প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো, পড়াশুনা করার লক্ষ্য যদি হয় চাকরি পাওয়া, তাহলে খুব মুশকিল। পড়াশোনা করার মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত উপযুক্ত নাগরিক তৈরি হওয়া। তারপর যেকোনও কাজ, যেকোনও পেশা বেছে নেওয়া। সেই সামাজিক অবস্থান আমাদেরই নির্মাণ করতে হবে। দুজন সমান যোগ্যতা সম্পন্ন মানুষের মধ্যে যিনি চাকরি করেন, তার সামাজিক স্বীকৃতি আছে। আর যিনি চাকরি পান না, তাঁর কোনও সামাজিক স্বীকৃতি সেই অর্থে থাকে না। চাকরি করলে তিনি সমাদৃত হবেন। আর একই যোগ্যতা নিয়েও চাকরি না পেলে তিনি অচ্ছুৎ হয়ে থাকবেন, এই দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন দরকার। তা না হলে এহেন সমস্যা চলতেই থাকবে।



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন